বিচারপতি নিয়োগে আমার কোন হাত নেই বললেন প্রধানমন্ত্রী

0

OM20170415193941

দিনবদল ডেক্স: প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি তাকে (প্রধান বিচারপতি) অনুরোধ করব- রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী এবং বিচারপতি নিয়োগ দেয়া। এখানে কিন্তু আমার কোনো ক্ষমতা নেই।’

শনিবার সকালে রাজধানীর কাকরাইলে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের জন্য আবাসিক ভবনের উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।

১ দশমিক ৫ একর জমিতে নির্মিত ২০ তলা ভবনটিতে ৭৬টি ফ্ল্যাট আছে। ২০১১ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী এ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। এতে ব্যয় হয়েছে ১৭৪ কোটি টাকা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘সংবিধানেই আছে, রাষ্ট্রপতি যখন বিচারপতি নিয়োগ দেন, তখন প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করবেন। কাজেই এখানে কোনো রকম কিছু হলে সেটা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সমাধান করাটাই ভালো। আর এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করণীয় থাকলে নিশ্চয়ই আমরা সেটা দেখব।’

শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি চাই না এ রকম কোনো কথা উঠুক যে আমাদের দ্বন্দ্ব বা কোনো কিছু আছে। এ ধরনের কথা উঠলে এটি পুরো জাতি বা জনগণের জন্য ভালো হবে না। বিচার বিভাগের ইমেজ যেমন প্রশ্নবিদ্ধ হবে, তেমনি আইন ও নির্বাহী বিভাগ সমন্ধেও জনগণ একটা ভুল ধারণা নিয়ে যাবে। যেকোনো বিষয় আমি মনে করি, আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা উচিত এবং সেগুলো বিবেচনা করে দেখা উচিত বলে আমি মনে করি।’

রাষ্ট্রের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে সমন্বয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একে অপরের সম্পূরক হিসেবেই কাজ করতে হবে। একে অপরকে অতিক্রম করে না, এখানে ক্ষমতার শক্তি দেখিয়ে নয়, কারণ ক্ষমতা কিন্তু কারও কম নয়। এখন কে কাকে সম্মান করবে, কে কাকে করবে না, কে কার সিদ্ধান্ত নাকচ করবে, কে কাকে মানবে বা মানবে না-এ দ্বন্দ্বে যদি আমরা যাই, তাহলে কিন্তু একটি রাষ্ট্র সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ উদযাপন নিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে নানা ধরনের হুমকি ছিল। তারপরও আল্লাহর রহমতে সারাদেশে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে বর্ষবরণের উৎসব উদযাপন করেছে দেশের মানুষ।’

বৈশাখের অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এসকে সিনহা)। বিচার বিভাগ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতিকে পাশ কাটিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।

সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, ‘সম্পূর্ণ ভুল তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে সরকারপ্রধানের কাছে সত্য গোপন করে, সিদ্ধান্তগুলো হাসিল করা হয়েছে। এ রকম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনা করা হলে ভুল বোঝাবুঝি হতো না।’

‘একটি মহল সবসময় সরকার ও বিচার বিভাগের মধ্যে দূরত্ব তৈরির অপচেষ্টায় লিপ্ত। এ রকম ভুল বোঝাবুঝির কারণে সাধারণ জনগণের কাছে ভুল বার্তা চলে যায়,’ যোগ করেন প্রধান বিচারপতি।

তিনি আরো বলেন, ‘প্রত্যেক বিভাগকে দেশের প্রচলিত আইন ও সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে থেকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। কখনও কখনও দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে শীতল সম্পর্কের সৃষ্টি হতে পারে। তবে এ সম্পর্ককে ইতিবাচক দৃষ্টিতে গ্রহণ করলে প্রত্যেক বিভাগের সৃজনশীলতার প্রকাশ ঘটবে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।’

এ সময় বিচার ব্যবস্থার সুশৃঙ্খল ও আস্থার বিষয়টি তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘মামলাজট বিচার বিভাগের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিচারকের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি অবকাঠামোর সুবিধার নিশ্চিতের সুপারিশ করছি।’

ভারতের বিচার বিভাগের কথা উল্লেখ করে সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, ‘ভারতে ১০ লাখ মানুষের জন্য বিচারক ১৮ জন। কিন্তু আমাদের এ সংখ্যা মাত্র ১০। আপিল বিভাগে বর্তমানে সাতজন ও হাইকোর্ট বিভাগে ৮৫ জন বিচারক রয়েছেন। ’

‘হাইকোর্টের বিচারকদের মধ্যে তিনজন ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনালের দায়িত্ব পালন করছেন। চারজন বিচারক গুরুতর অসুস্থ। ফলে বিভিন্ন সময় বেঞ্চ গঠনে হিমশিম খেতে হয়। ২০১৭ সালে সাতজন বিচারক অবসরে যাবেন। এতে বেঞ্চ গঠনের জটিলতা আরও প্রকট হবে।’

প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্প হাতে নিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে প্রকল্পটি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আশা করব, আপনার (প্রধানমন্ত্রী) হস্তক্ষেপে এ বাধা দূর হবে।’

এ সময় উচ্চ আদালতের বিচারকদের প্রশিক্ষণের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ও আধুনিক ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমি স্থাপনে কমপক্ষে ২৫ একর জমি বরাদ্দের অনুরোধ জানান সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।

নিজের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালে বাংলাদেশের বিচারকদের প্রশিক্ষণ বিষয়ে একটি সমঝোতা সই হয়েছে।

এর আগে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রীকে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম স্বাগত জানান।

গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও বক্তব্য দেন।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *