সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে বিএনপি ক্ষুব্ধ
দিনবদল ডেক্স: নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতি যে সার্চ কমিটি গঠন করেছেন তাতে বিএনপি শুধু হতাশই নয় ক্ষুব্ধও হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, গঠিত সার্চ কমিটি আওয়ামী লীগের পছন্দের কমিটি। একটি সুষ্ঠু সার্চ কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক সংকট থেকে জাতিকে বের করে আনার যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিলো রাষ্ট্রপতি সেই উদ্যোগ গ্রহণ করলেন না। দুর্ভাগ্য, তারা (আওয়ামী লীগ) অজ্ঞাতে নয়, জেনেশুনে এই কাজ করেছেন। কারণ, তারা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আবারো একটি নির্বাচন করতে চায়।
তিনি আরো বলেন, নির্বাচন কমিশন প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়াপারসন খালেদা জিয়া যে প্রস্তাব রেখেছিলেন রাষ্ট্রপতি সেই ডাকে সাড়া দিয়ে সংলাপের আহ্বান করেছিলেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছিলেন। তখন মানুষ একটা আশার আলো দেখতে পেয়েছিলো। হয়তো একটি শক্তিশালী নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করার মধ্য দিয়ে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনে জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে এবং সেই ভোটের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন করতে পারবে। জনগণের যে সার্বাভৌমত্ব সেটা ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। এটা সাংবিধানিকভাবে তার মৌলিক অধিকার।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি প্রজাতান্ত্রিক দেশ। সর্বশক্তির উৎস হচ্ছে জনগণ। সেই জনগণের কাছ থেকে যখন জোর করে ক্ষমতা হরণ করা হয়। ক্ষমতা থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া হয়। তখন সেটাকে ফ্যাসিবাদ বা একনায়কতন্ত্র বলা হয়। আজকে সেই অবস্থায় আমরা আছি। সেই আশা-হতাশায় পরিণত হয়েছে। শুধু তাই নয় জনগণের মধ্যে বিরাজ করছে চরম অস্থিতিশীলতা ও অশ্চিয়তা। কারণ, কিছুক্ষণ আগেই নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য যে সার্চ কমিটি গঠন করবার কথা আমরা জানতে পেরেছি। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য যে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি করেছেন গণমাধ্যমের বদৌলতে তাদের নামগুলো আমাদের কাছে চলে এসেছে।
ফখরুল বলেন, আমরা জানতে পেরেছি, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান, কন্ট্রোলার জেনারেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি শিরীণ আখতার আর দু’জন বিচারপতি সার্চ কমিটিতে থাকবেন। এই পুরো সার্চ কমিটি হচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকারের পছন্দের। কারণ, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান, কন্ট্রোলার জেনারেল, প্রোভিসি নিয়োগ দিয়েছে এই সরকার।
তিনি বলেন, এই প্রোভিসি বেসরকারি টেলিভিশনে মন্তব্য করেছিলেন, ‘আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব পবিত্র দায়িত্ব মনে করি। কারণ, এখন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দেশ পরিচালিত হচ্ছে। তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা যে দায়িত্ব দেবেন সেটা পবিত্র দায়িত্ব মনে করে পালন করতে সচেষ্ট হবো।’ তাহলে বুঝেন, কী নিরপেক্ষ সার্চ কমিটি গঠিত হয়েছে।
ফখরুল বলেন, নিরপেক্ষতার চরম নিদর্শন মহামান্য রাষ্ট্রপতি আমাদেরকে দিয়েছেন। আমরা শুধু হতাশই হয়নি ক্ষুব্ধও হয়েছি। আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে মনে করি, তিনি একটি প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় অভিভাবক। তার কাছে সবসময় আশা করি প্রত্যাশা করি যে একটি নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত পাবো। দুর্ভাগ্য আমাদের ও এই জাতির। রাজনৈতিক সংকট থেকে জাতিকে বের করে আনার যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিলো রাষ্ট্রপতি সেই উদ্যোগ গ্রহণ করলেন না। দুর্ভাগ্য, তারা অজ্ঞাতে নয় জেনেশুনে এই কাজ করেছেন। এই জন্য যে তারা আবার ১৪ সালে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাতো নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু সমস্যা সমাধান হবে না। রাজনৈতিক সংকট নিরসন করা না গেলে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষাহীন সার্চ কমিটি গঠন করে কোনোদিনই কাজ করা সম্ভব হবে না।
তিনি বলেন, এই সার্চ কমিটি কী ধরনের নির্বাচন কমিশন গঠন করবে তা আমারা এখনই বুঝতে পারছি। সুতরাং জাতিকে আবার আরেকটি অনিশ্চয়তা অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দেয়া হলো। আমাদের দুর্ভাগ্য আজ পর্যন্ত এই সরকার আসার পর একবারের জন্যও এই সংকট থেকে উত্তরণে সরকারের দিকে থেকে কোনো উদ্যোগ দেখলাম না। অর্থাৎ এটা বলতে দ্বিধা নেই সরকার চায় এই ধরনের পরিস্থিতি বিরাজ করুক, অস্থিতিশীলতাই থাকুক। পানি ঘোলাটে হতে থাকুক। আর ঘোলা পানিতে তারা চমৎকার করে মাছ শিকার করবেন। অর্থাৎ ক্ষমতায় যাবেন আর দখল করে থাকবেন।
তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপিকে নির্বাচনে আনার দায়িত্ব তার নয়। আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে তিনি বলতেই পারেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি সরকারের প্রধান, রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে অধিষ্ঠিত, তাই তার কাছে জনগণ এই ধরনের কথা আশা করে না। কারণ, তারা মনে করে সরকার প্রধানের দায়িত্ব হচ্ছে দেশকে সুষ্ঠু ও শান্তিময় পরিস্থিতির মধ্যে নিয়ে যাওয়া।