সরকারি হাসপাতালের নানান ভোগান্তির কথা বলে দালালরা রোগী বিভিন্ন ক্লিনিক ও হাসপাতালে কমিশনে পাঠায়
দিনবদল নিউজ: হাসপাতালের গেটে রোগী এলে দৌড়ে গিয়ে ঘিরে ধরে। শোনানো হয়- সরকারি হাসপাতালের নানান ভোগান্তির কথা। বলে, ট্রিটমেন্টও ভালো হয় না এখানে। একপর্যায়ে রোগীকে ভাগিয়ে দেয়। পাঠিয়ে দেয় পার্শ্ববর্তী বেসরকারি ক্লিনিকে। আর এর বিনিময়ে ওই ক্লিনিক থেকে হাতিয়ে নেয় নির্দিষ্ট অঙ্কের কমিশন। রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে এ চিত্র নিত্যদিনের। হাসপাতালটি ঘিরে প্রতিদিনই সক্রিয় হয়ে ওঠে এ ধরনের দালাল। বিভিন্ন ক্লিনিকের প্রতিনিধির পাশাপাশি এই কাতারে রয়েছে খোদ হাসপাতালটির কর্মচারীরা।
গতকাল সকালে এমন ২৪ দালালকে শেরেবাংলা নগরের পঙ্গু হাসপাতাল (জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন) থেকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেছেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। যার মধ্যে ওই হাসপাতালের দু’জন কর্মচারীও রয়েছে। এরা হলো- হুমায়ুন কবির ও মাহফুজা আক্তার। র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম এ অভিযান চালান। আটকদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ক্লিনিক থেকে এরা রোগীপ্রতি ২ হাজার করে কমিশন পায়। এছাড়া নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাবদও তারা টাকা হাতিয়ে নেয়। অভিযানের সময় র্যাব-২ এর উপ-পরিচালক মেজর মোহাম্মদ আলী ও মাহবুব আলম এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুন্সী উপস্থিত ছিলেন।
র্যাব জানায়, দীর্ঘদিন থেকে একটি সংঘবদ্ধচক্র (সাবেক পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের চিকিৎসা নিতে বাধা দিয়ে আসছিল। তাদের বিভিন্ন প্রলোভন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে স্থানীয় বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে যায়। এর মাধ্যমে তারা অসহায় রোগীদের কাছ থেকে চিকিৎসার নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়। এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। গতকাল অভিযান পরিচালনাকালে ওই সব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। অভিযানকালে দেখা যায়, এ চক্রের সদস্যরা বহির্বিভাগে এবং জরুরি বিভাগে আসা রোগীদের হাসপাতালে প্রবেশ করতে বাধা দিয়ে বিভিন্ন নিম্নমানের বেসরকারি ক্লিনিকে জোরপূর্বক নিয়ে যাচ্ছে। এমনকি বেশ কিছু ক্লিনিক মার্কেটিং অফিসার পদবি দিয়ে দালাল নিয়োগ দেয়। এ অপরাধের কারণে সততা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ৬ (ছয়) জন দালালসহ মোট ২২ (বাইশ) জন দালাল এবং পঙ্গু হাসপাতালের ২ জন কর্মচারীকে আটক করা হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম জানান, আজকের (গতকাল) অভিযানে রোগীদের ভাগিয়ে নেয়ার বেশ কয়েকটি ঘটনা হাতেনাতে ধরা পড়ে। হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে এই চক্রের তৎপরতা বেশি থাকে। একজন রোগীকে বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করালে দুই হাজার টাকা পেতেন দালাল চক্রের লোকজন। এছাড়া এক্স-রেসহ বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে পারলে কমিশনের হার প্রায় ২০০ টাকা। তিনি জানান, সাজা পাওয়া ২৪ জনের মধ্যে ৬ জন স্থানীয় সততা ক্লিনিকের, দু’জন মক্কা ক্লিনিকের ও একজন মুন্নী ডায়াগনস্টিকের বেতনভুক্ত কর্মচারী।
হাসপাতালে কর্মচারী হুমায়ুনসহ ১০ জনকে তিন মাসের ও মাহফুজাসহ দু’জনকে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। অন্য দালালদের মধ্যে একজনকে চার মাসের, পাঁচজনের দুই মাসের ও ছয়জনের এক মাস করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।