সব আন্দোলনে সুরঞ্জিতকে সঙ্গী হিসেবে পেয়েছি: প্রধানমন্ত্রী
দিনবদল ডেক্স: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে সবসময় সাথী হিসেবে পেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আমরা এক সাথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পার্লামেন্টে কথা বলার একটা বড় গুণ ছিল। সংসদে তিনি যে কোনো বিষয়ে কথা বলতে পারতেন। অনেক কঠিন কথাকে হাস্যরস দিয়ে মানুষের সামনে তিনি তুলে ধরতেন। বক্তৃতার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সহজে আকর্ষণ করার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল তার।’
রবিবার জাতীয় সংসদে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে আনীত শোকপ্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘মানুষ মরে যায় কিন্তু তার কীর্তি থেকে যায়। ২০১৪ সালে এক বৈরি পরিবেশে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে আমরা একসাথে সংসদে ছিলাম। এই সংসদে বসে আমরা জনগণের কল্যাণে অনেক আইন পাস করেছি। একে একে সংসদের সদস্যদের হারানো সত্যি দুঃখজনক।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণপরিষদে সংবিধান রচনার বিরোধী দলের হয়েও ওই সময় সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ভূমিকা রেখেছেন। বিরোধী দলে থেকেও তিনি একাই ছিলেন একশো’। তিনি যখন কথা বলতেন বঙ্গবন্ধু তখন তাকে উত্সাহিত করতেন। সুযোগ দিয়ে দিয়ে এভাবেই বঙ্গবন্ধু তাকে গড়ে তুলেছেন। গত বৃহস্পতিবারও তিনি সংসদে বক্তব্য রেখেছেন। সংসদে বলা তার কথাগুলো সারাজীবন মানুয়ের মাঝে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
তিনি বলেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রাজনৈতিকভাবে অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল রাজনীতি করতেন এবং গণতন্ত্রিক ধারায় বিশ্বাস করতেন। তার মৃত্যুতে একজন অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ানকে আমরা হারিয়েছি। অনেক সংগ্রামের পথ বেয়ে বাংলাদেশ আজ অন্তত একটা জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। যেখানে জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করা গেছে এবং এ আন্দোলন সংগ্রামে আমাদেরকে অনেক জেল-জুলুম-অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সামরিক শাসনের সময় সেনা সদস্যরা তাকে গ্রেফতার করতে গেলে আতঙ্কে তার একমাত্র সন্তান মানসিক ভারসাম্য হারায়। অনেক চিকিত্সার পর তাকে সুস্থ করা হয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা রাজনীতি করি, রাজনৈতিক জীবনে এ ধরনের অনেক ঘটনার মুখোমুখি আমাদের হতে হয়। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময় সুরঞ্জিত সেনগুপ্তসহ আমাদের অনেক নেতা-কর্মী বোমার স্প্লিন্টারে আহত হন। ওই সময় অনেক সংসদ সদস্যও বোমার স্প্লিন্টারে আহত হন। সংসদে ওই সময় বিএনপি সরকার এ বিষয়ে কথা বলতে দেয়নি। উপরন্তু আমাদের গ্রেনেড হামলার কথা শুনে তারা হাততালি দিয়ে উপহাস করেছে। তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তখন বলেছেন, আমি নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে করে বোমা নিয়ে গিয়েছিলাম। শরীরে স্প্লিন্টার নিয়ে সারাজীবন তাকে যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ৭২-এর যে সংবিধান রচিত হয়েছিল সেই সংবিধান বার বার সামরিক শাসনের দ্বারা ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে। সেই সংবিধানকে পুনরুদ্ধার করে মানুষের মাঝে ফিরিয়ে এনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রত করতে অনেক সংগ্রামের পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। এই সংগ্রামের পথে একজন সাথী ছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।
৭০’র সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ীদের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজন বেঁচে রয়েছেন। একে একে সবাই চলে যাচ্ছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে দেশকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘সময় আসলে সবাইকে চলে যেতে হবে। তবে দেশটাকে নিয়ে যেন আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে, এদেশ যেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে গড়ে ওঠে এবং দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটে সত্যিকার সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে উঠে এ ব্যাপারে সবাইকে কাজ করে যেতে হবে।’ খবর বাসসের।