সবার প্রিয় বৌদিই এখন আলোচনায়

0

joya-sengupta_samakal_273137

দিনবদল ডেক্স: জয়া সেন। রাজনীতির মানুষ নন। সব সময়ই নিজেকে রাজনীতির বাইরে রেখেছেন। সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়েও স্বামী বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পথ অনুসরণ করেননি। এনজিওতে কাজ করেছেন। আগলে রেখেছেন সংসার। স্বামী, সন্তান- এই ছিল তার কর্মের পরিধি। কিন্তু রাজধানীর ঝিগাতলার বাসায় ‘বউদি’ ছিলেন সবার প্রিয়। অন্দরমহলে থেকেও দিরাই-শাল্লার মানুষের কাছের মানুষ তিনি। যখনই এলাকার বিপদগ্রস্ত মানুষ ছুটে গেছেন দাদার বাসায়। বউদি এগিয়ে এসেছেন। আগলে নিয়েছেন পরম মমতায়। দাদার অনুপস্থিতিতে তিনিই দিয়েছেন সান্ত্বনা। করেছেন সহযোগিতা। ফলে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জীবদ্দশাতেই মানুষের মুখে মুখে ছিল ‘জয়া বৌদি’র নাম।

সিলেট আওয়ামী লীগের একটি অংশের দীর্ঘ দিন নেতৃত্ব দিয়েছেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। দাদাই ছিলেন ‘মাথার মুকুট’। সব কাজেই ছুটে যেতেন দাদার কাছে। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুর পর তারাও হয়ে পড়েছিলেন দিকহারা। কিন্তু রাজনীতিতে জয়ার প্রত্যাবর্তনে আবার ‘প্রাণ’ ফিরে পেলেন তারা। স্বামীর সাজানো বাগানে তিনি করছেন সরব পদচারণা। দিরাই-শাল্লার লোকজন জানিয়েছেন জয়া কখনো রাজনীতিতে ছিলেন না। কিংবা কখনো রাজনীতি নিয়ে মাথাও ঘামাননি। কিন্তু তিনি দিরাই-শাল্লার মানুষের আপনজন হিসেবেই ছিলেন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ হওয়ায় তিনি প্রায় সময়ই ব্যস্ত থাকতেন। প্রায় সময়ই ঢাকার বাসায় গিয়ে তাকে পাওয়া যেতো না। কিন্তু কেউ বিমুখ হতেন না। দিরাই-শাল্লা থেকে কেউ গেলেই বাড়ির অন্দরমহল থেকে বেরিয়ে আসতেন বউদি। বসাতেন, নাস্তা খাওয়াতেন। তাদের সুখ, দুঃখ শুনতেন। এরপর দাদাকে বুঝাতেন।

স্থানীয়রা জানান, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে সবাই শোকাহত। দাদার শোকে কাঁদছে সবাই। বউদিও কাঁদছেন। কিন্তু দিরাই-শাল্লার জনগণকে জয়া হতাশ করেননি। মরদেহ দাহ করার আগে মাইক হাতে নিলেন জয়া সেন। স্বামীর দেহ সামনে রেখে তার জন্য সবার কাছে আশীর্বাদ চাইলেন। ক্ষমাও চাইলেন। বললেন- ‘দাদা নেই। আমরা তো আছি। তার স্বপ্ন পূরণে আমরা সবাই এক সঙ্গে কাজ করে যাবো।’ মৃত্যুর পর দিরাই-শাল্লায় আরো বেশি শক্তিধর সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। মৃত্যুর পর সুরঞ্জিত বিরোধীদের ভেতরেও নেমে এসেছে শূন্যতা। তারা বিমুখ করছেন না জয়া সেনকে। সুরঞ্জিতের স্বপ্ন পূরণে তারাও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নেমেছেন জয়ার সঙ্গে। আর জয়া সেনও সবাইকে আপন করে নিচ্ছেন নিজের মতো করে। এখন তিনি দিরাই-শাল্লার নির্বাচনী মাঠে। ভোট চাইছেন সবার কাছে। চষে বেড়াচ্ছেন হাওর এলাকা। জয়াকে পেয়ে খুশি সবাই। হাওরের পর সিলেটের রাজনীতিতেও অভিষিক্ত হলেন জয়া সেন। দিরাই-শাল্লার অনেক মানুষের বসবাস সিলেটে। তাদেরও সিলেটে আগলে রাখতেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। বাড়ি এলেই সিলেটে সময় দিতেন। সুখে-দুঃখে ছুটে যেতেন তিনি। জয়া সেনের কাছেও তারা অপরিচিত নয়। সবার সঙ্গে আগেও দেখা হয়েছে জয়ার। কিন্তু নির্বাচনী মাঠে নামলেও ভুলে যাননি সিলেটের কর্মী সমর্থকদের। তাদের ডাকে সিলেটেও ছুটে এসেছেন তিনি। তাদের নিয়ে সমাবেশ করেছেন।

দিরাই-শাল্লার উন্নয়নে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন। বলেছেন- ‘দাদার শূন্যস্থান পূরণ করতে পারবো না। কিন্তু বউদি হয়ে দাদার শূন্যতা কিছুটা পূরণ করতে চাই।’ এদিকে, জয়া সেন রাজনীতিতে নামায় সিলেট অঞ্চলের সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের অনুসারীদের মধ্যে আবার প্রাণ ফিরে এসেছে। তারাও জয়াকে নিয়ে রাজনীতির মাঠ আগলে রাখায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ভোটের মাঠে জয়ার ছায়া সঙ্গী হয়ে তারা কাজ করছেন। জয়ার সঙ্গে তারা দিরাই-শাল্লায় নেমেছেন ভোট প্রার্থনায়। চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচারণাও।

মতবিনিময়ে যা বলে গেলেন জয়া: সিলেটে দিরাই-শাল্লার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অনেকেরই চোখে ছিল জল। জয়া সেনও কেঁদেছেন। এরপর তিনি সবার উদ্দেশে বললেন- ‘আপনারা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে নেতা হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। আজ তিনি নেই। কিন্তু তার স্মৃতি রয়ে গেছে। তার অনেক স্বপ্ন রয়ে গেছে। সেসব স্বপ্নকে আজ আমরা সবাই মিলে বাস্তবায়ন করতে চাই।’ বলেন- ‘জননেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের অসমাপ্ত কাজ সম্পাদনে নৌকা প্রতীকে ভোট দিন। নৌকা প্রতীকের বিজয় আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিতে চাই।

আমি দিরাই-শাল্লার উন্নয়ন, অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে চাই। সবার ভালোবাসা পেতে চাই।’ সিলেটের পাঠানটুলার সানরাইজ কমিউনিটি সেন্টারে সিলেটস্থ দিরাই-শাল্লার জনগণের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগ নেতা মুহিন চন্দ্র দাশের সভাপতিত্বে ও সিলেট জেলা ছাত্রলীগ নেতা রশিদ আহমদের পরিচালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মুহিবুর রহমান মানিক এমপি, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও প্রাক্তন এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিক, বিজিত চৌধুরী, জগদীশ চন্দ্র দাশ, দিরাই পৌরসভার চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান বুলবুল, দোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী বীরপ্রতীক, ছাতক উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ছানাউল হক ছানা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান, গোলাপগঞ্জ পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ চৌধুরী, অঞ্জলী প্রভা চৌধুরী, অধ্যক্ষ আব্দুল হান্নান চৌধুরী, ড. সৌমেন সেনগুপ্ত প্রমুখ।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *