শেখ হাসিনার ভারত সফরে ২৯ হাজার কোটি টাকার ঋণ চুক্তি
দিনবদল ডেক্স: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে বড় আকারের ঋণ চুক্তি হতে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ, টেলিকম, সড়ক, রেল যোগাযোগ, অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ অবকাঠামো উন্নয়নে বাংলাদেশকে তৃতীয় দফায় এ ঋণ দিতে যাচ্ছে প্রতিবেশী দেশটি।
জানা গেছে, চুক্তির ঘোষণা আসবে প্রধানমন্ত্রীর ভারত পৌঁছার একদিন পর অর্থাৎ ৮ এপ্রিল। এ নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চিঠি চালাচালি করে ২১টি উন্নয়ন প্রকল্প নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব প্রকল্পের বিপরীতে প্রায় ৩৬২ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার আশা করছে বাংলাদেশ, যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা। তবে দুটি প্রকল্পের ব্যয় এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। ওই দুটি প্রকল্প হলে চুক্তির আকার আরও বাড়বে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাছাইকৃত ২১ প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগকে। এ খাতে এখন পর্যন্ত চারটি প্রকল্প বাছাই করা হয়েছে। এর বাইরে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, রেলওয়ে এবং রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে বিভাগের তিনটি করে প্রকল্প রয়েছে। অন্যদিকে সিভিল এভিয়েশনের ২টি, টেলিকম খাতের ২টি, পানি ব্যবস্থাপনায় ১টি, ১টি স্থল বন্দর ও ১টি ইকোনমিক জোন স্থাপন ও আইসিটি খাতের ১টি প্রকল্প রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭ এপ্রিল চারদিনের সরকারি সফরে ভারত যাচ্ছেন। পরদিন(৮ এপ্রিল) তার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক হবে। একই দিন দুইপক্ষের মধ্যে বেশকিছু চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্পের সংখ্যা ও অর্থায়নের পরিমাণ কমবেশি হতে পারে। তবে এসব প্রকল্পের বিষয়ে ভারতের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হয়েছে।প্রাথমিক সম্মতিও পাওয়া গেছে। এর আগে ভারত বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে ২০১০ সালে প্রথম ১০০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছিল, যার মধ্যে ২০ কোটি টাকা ছিল অনুদান। ২০১৫ সালের জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফরে এসে দ্বিতীয় দফায় ২০০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার ঘোষণা দেন। এবার তৃতীয় দফায় ৩৬২ কোটি ডলার ঋণ পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
এ বিষয়ে ইআরডির ভারপ্রাপ্ত সচিব কাজী শফিকুল আযম জাগো নিউজকে বলেন, কিছু প্রকল্প নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। তবে কোন প্রকল্পের বিষয় চূড়ান্ত হয়েছে, সেটা বলা যাবে না। এর জন্য ৮ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যয় ও সংখ্যা কম বেশি হতে পারে। এটার কনক্রিট কোন ফিগার উল্লেখ করা যাবে না।
যেসব প্রকল্পে ঋণ আসছে
যেসব প্রকল্পে ঋণ আসছে সেগুলো হলো বগুড়া থেকে ভারতের ঝাড়খণ্ড পর্যন্ত ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন (১৭.৭ কোটি ডলার), মোল্লার হাটে ১০০ মেগাওয়াটের সোলার পাওয়ার প্লান্ট (১৫.৭৬ কোটি ডলার), গাজীপুরে ৪৫০ মেগাওয়াটের কমবাইন্ড বিদ্যুৎকেন্দ্র (৪০.২৪ কোটি ডলার) এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উন্নয়ন প্রকল্প (৯৪ কোটি ডলার)।
জানা গেছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে ইতোমধ্যে রাশিয়া সরকারের সঙ্গে এক হাজার ২০০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি সই করেছে সরকার। দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সবচেয়ে ব্যয়বহুল এ প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে চলতি বছরের শুরুর দিকে নিজেদের আগ্রহের কথা জানিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি দেয় ভারত। ভারতের ওই প্রস্তাবে সাড়া দেয় সরকার।
২১টি প্রকল্পে ভারতের বিনিয়োগ বাড়াতে একটি স্পেশাল ইকোনমিক জোন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এজন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) একটি প্রকল্প রয়েছে। এটি হলো চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, যার প্রকল্প ব্যয় ধরা হচ্ছে ১০ কোটি ডলার। সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে নেয়া হয়েছে তিনটি প্রকল্প। চট্টগ্রামের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে পণ্য উৎপাদন করে তা যাতে সহজে সরবরাহ করা যায় সেজন্য রামগড় স্থলবন্দর সংযোগ সড়ক থেকে মিরসরাইয়ের বারইয়ারহাট পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার সড়ককে চার লেনে উন্নীত করা হবে। এই প্রকল্পে ভারতের কাছ থেকে পাওয়া যাবে ৫ কোটি ডলার।
এছাড়া ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর পর্যন্ত ১৩৫ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে ১০ কোটি ডলার পাওয়ার আশা করছে সরকার। কুমিল্লার ময়নামতি থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-সরাইল সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে ভারত ঋণ দেবে ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এর বাইরে রয়েছে বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার (১৯.৬১ কোটি ডলার), আশুগঞ্জ থেকে জকিগঞ্জ পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ (৩.৮ কোটি ডলার) এবং পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প (৩৫ কোটি ডলার)।
এছাড়া রেল বিভাগের তিনটি প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জ হয়ে বগুড়া থেকে শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন পযর্ন্ত ডুয়েল গেজ রেল লাইন স্থাপন (৫০ কোটি ডলার), ঈশ্বরদী রেল লাইনের উন্নয়ন (৩.৫ কোটি ডলার), ফেনী হতে বিলোনিয়া রেল লাইনের সংযোগ স্থাপন (১০ কোটি ডলার) ও দু-দেশের নদী পথের বাণিজ্য বাড়াতে নদী বন্দরগুলোর উন্নয়ন (অর্থের পরিমাণ আলোচনা করে নির্ধারণ করা হবে)।
এর বাইরে একটি ডিজিটাল ইডোট্রেইনমেন্ট সেন্টার স্থাপন (২০.৮ কোটি ডলার), টেলিটকের নেটওয়ার্ক উন্নয়ন (২০ কোটি ডলার), ইস্টালেশন অব ই ওয়াস্ট রিসাইক্লিন প্লান্ট (২৫ কোটি ডলার) প্রকল্প রয়েছে। এছাড়া সিভিল এভিয়েশনের সৈয়দপুর বিমানবন্দরের আপগ্রেডেশন (ব্যয় আলোচনাধীন) ও খুলনা এয়ারপোর্টের আপগ্রেডেশন (১০ কোটি ডলার) প্রকল্প রয়েছে।