শুক্রবার দিয়াবাড়ি-পল্লবী রুটে চালানো হয় মেট্রোরেল।
২৭ আগস্ট ২০২১ইং, শুক্রবার,
১২ ভাদ্র ১৪২৮ বঙ্গাব্দ।
বিশেষ প্রতিনিধিঃ
বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম নজির মেট্রোরেলে আরও ১৯ ধরনের পরীক্ষা শেষে তারপর আগামী সেপ্টেম্বর মাসে পরীক্ষামূলক যাত্রা (ট্রায়াল রান) শুরু হবে। মেট্রোরেল প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম, এ, এন, ছিদ্দিক বলেন, এপ্রিলে প্রথম ট্রেন সেট দেশের আনার পর মে মাসে ধীরগতিতে ডিপোতে চালিয়ে দেখা হয়েছিল। বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার পর তা শুক্রবারে ভায়াডাক্টে চলেছে। এরপর আরও ১৯ ধরনের পরীক্ষা শেষে ট্রায়াল রান হবে ট্রেনগুলোর। এরই প্রস্তুতি হিসেবে শুক্রবার দিয়াবাড়ির ডিপো থেকে পল্লবী পর্যন্ত ভায়াডাক্টের (উড়াল রেলপথ) ওপর চালানো হয় মেট্রোরেলের ট্রেন। এরপর ‘পারফরমেন্স টেস্ট’ ও ‘ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট’ শেষে পরীক্ষামূলক যাত্রা আগামী মাসে শুরু হবে।
এম, এ, এন, ছিদ্দিক বলেন, ‘ট্রায়াল রানের আগে রোববার সকাল ১০টায় আনুষ্ঠানিকভাবে নবনির্মিত ভায়াডাক্টের ট্রেন চালানো হবে। ভায়াডাক্টের কোথাও কোনো অসুবিধা আছে কি না, এতে স্থাপন করা রেললাইনে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত বস্তুর বাধা রয়েছে কি না- তা যাচাই করে দেখতে শুক্রবার সকালে ট্রেন চালানো হয়েছে। এটি ট্রায়াল রান নয়। মেট্রোরেল ও ঠিকাদারের কর্মীরা ট্রেনের সঙ্গে আধা কিলোমিটার হেঁটে গেছেন। এরপর আবার আট-দশজন করে আধা কিলোমিটার ট্রেনে চড়েছেন। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল- এতদিন ধরে যে ভায়াডাক্ট তৈরি করা হয়েছে- তা ঠিকঠাক কাজ করে কি না তা দেখা।’
উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ দেশের প্রথম মেট্রোরেলের (এমআরটি-৬) নির্মাণ কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে লাইনটি মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এক দশমিক ১৬ কিলোমিটার বর্ধিত করা হবে। এমআরটি-১, এমআরটি-২, এমআরটি-৪ এবং এমআরটি-৫ (উত্তর ও দক্ষিণ লাইন) নামে আরও চারটি মেট্রোরেল তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে ২০৩০ সালের মধ্যে।
এমআরটি-৬ রেলপথে ১৬টি স্টেশন হবে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে এ পথের দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও অংশ চালুর পরিকল্পনা ছিল। করোনার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি জানিয়েছেন, আগামী বছরে এ পথে ট্রেন চলবে। পরের বছর মতিঝিল যাবে ট্রেন।
আটটি প্যাকেজে এমআরটি-৬ এর কাজ চলছে। ৩১ জুলাই পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৬৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ। প্রথম প্যাকেজে দিয়াবাড়িতে ডিপোর ভূমি উন্নয়ন কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় প্যাকেজে ডিপোর অবকাঠামো নির্মাণ কাজ হয়েছে ৯৫ শতাংশ।
তৃতীয় ও চতুর্থ প্যাকেজে দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও ৯টি স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। ভায়াডাক্টের ওপর বসানো ডাবল রেললাইনে বিদ্যুতে চলবে ট্রেন। এ অংশের কাজ হয়েছে ৮৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। পুরো ভায়াডাক্ট ও চারটি স্টেশন নির্মিত হয়েছে। পঞ্চম প্যাকেজে আগারগাঁও থেকে কাওরানবাজার, তিন দশমিক ২ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট এবং তিনটি স্টেশন নিমিত হচ্ছে। এ অংশের অগ্রগতি ৭১ দশমিক ১৪ শতাংশ। ষষ্ঠ প্যাকেজে কাওরানবাজার থেকে মতিঝিল, চার দশমিক ৯২ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট এবং চারটি স্টেশন তৈরি হচ্ছে। এ প্যাকেজের অগ্রগগিত ৭১ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
সপ্তম প্যাকেজে ট্রেন চালানো বিদ্যুৎ লাইন ও ডিপোতে মেকানিক্যাল রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। এ কাজে অগ্রগতি ৭৪ শতাংশ। শেষ প্যাকেজে পাঁচ সেট ট্রেন কেনা হয়েছে জাপান থেকে। গত ১৮ আগস্ট পর্যন্ত চার সেট দেশে এসেছে। বাকি ট্রেনটি আসবে আগামী মাসে। প্রতিটি সেটে ছয়টি করে বগি রয়েছে। শুরুর ও শেষ বগিতে থাকবে ইঞ্জিন। ছয় বগিতে এক সঙ্গে এক হাজার ৭৩৮ জন যাত্রী নিয়ে চলতে পারবে ট্রেনগুলো।