রাজধানীতে অবৈধ লেগুনার উৎপাত

0

6d8c8aa1366e42eebbf2b935634bbb67-58856545b5f5a

দিনবদল ডেক্স: যানজটের নগরী ঢাকার গণপরিবহনে সবচেয়ে বিপদজনক লেগুনা বাহনটির ‘রুট পারমিট’ না থাকলেও ‘বৈধ’ কাগজ নিয়ে সব রুটেই চলছে দুর্দান্ত প্রতাপে। এমনকি এদের কাগজ আছে কি নেই সে নিয়েও কারো কোনও মাথা ব্যাথা নেই। চকচকে প্রাইভেট কার থামিয়ে গাড়ির কাগজ পরীক্ষা করলেও এসব লেগুনাকে দাঁড় করিয়ে কখনও কাগজ চেক করতে দেখা যায় না। গায়ে কেবল নিজেদের ইচ্ছেমতো রুটটা লিখে নিলেই হয়। এসব কারণ হিসেবে ট্রাফিক সার্জেন্ট ও অন্যান্য গাড়ির চালকরা বলছেন, ট্রাফিক পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে তাদের লেনদেনের চুক্তি আছে। এমনকি এসব গাড়ির মালিকানায়ও আছে পুলিশ!

সকাল সাড়ে দশটা। চন্দ্রিমা উদ্যান থেকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের দিকে যেতে হাতের বায়ে থেমে গেল একটি লেগুনা। গায়ে লেখা ফার্মগেট-পল্লবী। গাড়ি থেকে নেমে ছেলেকে নিয়ে রাস্তায় দাঁড়ালেন সায়মা খাতুন। তিনি বলেন, ‘যেখান-সেখানে এসব লেগুনা বন্ধ হয়ে গেলে পথেই নেমে যেতে হয়। এদের সঙ্গে কথা বলে কোনও লাভ নেই।’

কেন এসব গাড়িতে ঝুঁকি নিয়ে চলেন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বাসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লাগে। এরা একটু আগে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে। মূলত সে কারণেই চড়া। তবে এসব গাড়ির হাল ভীষণ খারাপ।’ গত এক বছরে কখনও এদের গাড়ির কাগজ চেক করতে দেখেছেন কিনা প্রশ্নে তিনি না সূচক বক্তব্য দেন।

সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা। শ্যাওড়াপাড়ার জ্যামে আটকা গাড়ি। হঠাৎই বাম পাশের মহল্লার রাস্তায় ঢুকে পড়ে একের পর এক লেগুনা। একজন কাজীপাড়া নামবো বলে চিৎকার দিতে সামনের রিক্সাকে ধাক্কা দিয়ে লেগুনা ব্রেক করে এবং ওই যাত্রীকে নামিয়ে দেয় মহল্লার ভিতরে। এভাবে মহল্লায় কেন গাড়ি ঢুকলো প্রশ্নে চালক মনির বলেন, ‘এই জ্যামে না বসে ভিতর দিয়ে আগে যেতে পারবো।’ কিন্তু যাত্রীরা তো আপনি রোকেয়া স্মরণি দিয়ে যাবেন বলে উঠেছে, প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘কথা বলে নিয়েছি, কাজীপাড়ার একজন ছিল তাকে নামিয়ে দিয়েছি।’

কোনও রুট নির্ধারিত না থাকা বিষয়ে ট্রাফিক সার্জেন্টরা বলছেন, ‘এটির পিছনে বড় ধরণের সিন্ডিকেট আছে। এদের কেউই কিছু করতে পারে না।’

লেগুনা চালনার ক্ষেত্রে একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে এটির প্রমাণ মেলে খোদ সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কথাতেই। তিনি বলেন, ‘মাইক্রোবাস কেটে যে লেগুনা বানানো হচ্ছে তার কোনওটিরই বৈধ কাগজপত্র নেই। এখানে একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হেলপার বলেন, ‘আমাদের কাছ থেকে ট্রিপ প্রতি ১০ টাকা নেওয়া হয়। পুলিশের গাড়ি বলে কাগজ ছাড়া চালাইতে পারি। না হলে তো বসেই থাকা লাগতো।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট জানান, এসব গাড়ির মালিক-চালকদের সঙ্গে ট্রাফিক পুলিশ ও বিআরটিএ কর্মকর্তাদের লেনদেনের চুক্তি রয়েছে। আমরা জানি কিন্তু কিছু বলি না। কারণ এদের সব জায়গায় সেটিং আছে। খামখা আমাকে আমার জায়গা থেকে সরায়ে দেওয়া হবে, কী দরকার।

তিনি আরও বলেন, ‘এসব গাড়ি চালায় ১৮বছরের কম বয়সী কিশোররা, হেলপার হিসেবে থাকে ১২বছরের নীচের শিশুরা। আমাদের সামনে দিয়েই এসব চলছে। কিন্তু বলার কিছু নাই।’

রাজধানীর রাস্তায় বিপুল সংখ্যক অবৈধ যানবাহন চলাচলের কারণে ভয়াবহ যানজটের কথা স্বীকার করে ট্রাফিক পুলিশের উপ কমিশনার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমরা ত্রুটিপূর্ণ কাগজপত্র ও ফিটনেস না থাকা যানবাহন আটকের জন্য অভিযান চালাই। এসব ক্ষেত্রে কখনও কখনও এদের মালিকরা এসে রাজধানীতে চলাচল করবে না এমন মুচলেকা দিয়ে এবং কাগজপত্র সংশোধন করে নেবে সেই শর্তে ছাড়িয়ে নিয়ে যায় ঠিকই, কিন্তু কথা রাখে না।’

এসব লেগুনার সঙ্গে পুলিশের মালিকানার সম্পর্ক থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার এ বিষয়ে জানা নেই।’

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির চেয়ারম্যান মো. মশিয়ার রহমান বলেন, ‘আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। লেগুনার রোড পারমিট আছে কিনা বা রুটগুলো সম্পর্কে আমি খোঁজ নিয়ে দেখব। যদি অবৈধ হয় তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেব।’

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *