মিয়ানমারের নাগরিকদের অবস্থা জানতে জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল এ মাসে ঢাকায় আসবে
দিনবদল নিউজ: বাংলাদেশে অবৈধভাবে অবস্থানরত মিয়ানমারের নাগরিকদের অবস্থা সরেজমিনে দেখার জন্য জাতিসংঘ মানবাধিকার অফিসের একটি প্রতিনিধিদল এ মাসে ঢাকায় আসবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখার জন্য কেউ বাংলাদেশে আসতে চাইলে তাদের স্বাগত জানানো হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘গত বছরের অক্টোবরে মিয়ানমার সশস্ত্র বাহিনীর হামলার কারণে ৫০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে। রোহিঙ্গারা মুসলিম এবং মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী ধর্মীয় কারণেই হামলা চালিয়ে তাদের নিশ্চিহ্ন করতে চাইছে।’
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা মানবিক কারণে এখানে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। এ প্রেক্ষাপটে কেউ রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখার জন্য বাংলাদেশে আসতে চাইলে আমরা তাদের স্বাগত জানাব।’ জাতিসংঘ প্রতিনিধিদল আসার পরে তারা তাদের মতো করে রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার নেবে এবং প্রয়োজন হলে সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করবে বলে জানান তিনি।
এর আগে গত মাসে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাম্প পরিদর্শনের পর রোহিঙ্গাদের মানবেতন অবস্থার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তবে মূল সমস্যা নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি।’ জাকার্তাকে এ বিষয়ে আরও সংবেদনশীল হওয়ার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না। এ কারণে রোহিঙ্গারাও মিয়ানমারের সব ধরনের মানবিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। রাখাইন প্রদেশে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর নির্যাতন শুরু হলে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে অবস্থান নিয়েছেন রোহিঙ্গাদের বড় একটি অংশ।
রোহিঙ্গাদের এই মানবেতর অবস্থায় সরব আসিয়ানের আরেক সদস্য দেশ মালয়েশিয়া। দেশটি রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধসহ তাদের সাথে মানবিক আচরণের আহবান জানিয়েছে মিয়ানমার সরকারের প্রতি। এই ইস্যুতে আলোচনার জন্য মালয়েশিয়া ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) জরুরি বৈঠকও আহবান করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা ওই জরুরি বৈঠকের তথ্য জানিয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগামী ১৯ জানুয়ারী বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ এ বৈঠকে অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত।’ ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ওই বৈঠকে একটি রেজ্যুলেশন গ্রহণ করে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি করা হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মিয়ানমারে নির্যাতিত হয়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পালিয়ে আসার ঘটনা এই প্রথম নয়। দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যা চললেও এর আগে বাংলাদেশ শক্তভাবে কখনও মিয়ানমারকে এ সমস্যা সমাধানের কথা বলেনি। তবে এবারে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করেই ক্ষান্ত নেই বাংলাদেশ। মিয়ানমারকে চাপ দিতে আন্তর্জাতিক মহলের প্রতিও আহ্বান জানানো হচ্ছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা দ্বিপাক্ষিকভাবে মিয়ানমারকে শক্তভাবে আহবান জানাচ্ছি। এই সমস্যা সমাধানের জন্য মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে হবে।’
তবে ভূ-রাজনৈতিক কারণে মিয়ানমারের প্রতি পূর্ব-পশ্চিমের অনেক দেশেরই আগ্রহ রয়েছে। এমন বহুমুখী স্বার্থের কারণে অনেক দেশই মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষপাতী নয় জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিকভাবে তো বটেই, বহুপাক্ষিক ফেরামেও রোহিঙ্গা নির্যাতনের ইস্যুটি তুলে ধরছে। আমরা ধৈর্যের সঙ্গে বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলে উপস্থাপন করছি যেন এর একটি সমাধান পাওয়া যায়।’