মাংস ব্যবসায়ীদের ডাকা ধর্মঘটে মুরগির বাজারে আগুন

0

image-64938-1487269366

দিনবদল ডেক্স: রাজধানীতে গত রোববার থেকে চলছে মাংস ব্যবসায়ীদের ডাকা ধর্মঘট। ফলে সব মাংসের দোকানেই ঝুলছে তালা। অলস সময় পার করছেন বিক্রেতারা। কোথাও গরু-মহিষ কিংবা খাসি-ভেড়ার মাংস না থাকায় বিপাকে পড়েছেন নগরবাসী। অনেকে গরুর মাংস কিনতে এসে বাসায় ফিরছেন মুরগি নিয়ে। আর এ সুযোগে প্রতিদিনই বাড়ছে মুরগির দাম। আগের তুলনায় কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশি রাখা হচ্ছে।

বাজারে গরু ও খাসির মাংস না পেয়ে কেউ কেউ আবার যাচ্ছেন সুপারশপে। কিন্তু নিস্তার নেই সেখানেও। গলা কাটা দাম রাখছে অভিজাত এই দোকানগুলো, কেজিতেই বেশি দিতে হচ্ছে ১০০ টাকা। অনেক ক্ষেত্রে বেশি টাকা দিয়েও মিলছে না মাংস। এসব কারণে হোটেলেও বন্ধ হয়ে গেছে তেহারি ও বিরানি বিক্রি। গতকাল ইস্কাটনের মিনাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, তাদের কাছে অল্প পরিমাণ গরুর মাংস আছে। তবে খাসির মাংস আগেই শেষ। সেখানে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৪৫ টাকা কেজি। চামড়া ছাড়া ব্রয়লার মুরগির মাংস ২৫৮ ও চামড়াসহ ২৪৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কয়েকজন বিক্রয়কর্মী জানান, তারা নিজস্ব ফার্মের গরু বিক্রি করছেন। আর খাসির মাংস বিক্রি করেন বাইরে থেকে কিনে এনে। বর্তমানে বাইরে খাসি বিক্রি বন্ধ থাকায় এখানেও পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ধর্মঘটের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।

মগবাজারের স্বপ্ন সুপারশপের অবস্থাও একই। সেখানেও কোনো খাসির মাংস পাওয়া যায়নি। কিছু গরুর মাংস আছে তাদের কাছে। তবে স্বপ্নের মাংসের দাম মিনাবাজারের তুলনায় কিছুটা কম। এখানে গরু বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৪৯০ টাকায়। আর ব্রয়লার মাংসের দাম ২৪০ থেকে ২৭৫ টাকা। বিক্রেতারা জানান, তারাও নিজস্ব ফার্মের গরু বিক্রি করছেন।

এদিকে মাংস ব্যবসায়ীদের দাবি শুনতে আগামী রোববার সরকারের পক্ষ থেকে নিজ মন্ত্রণালয়ে বৈঠক ডেকেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। কিন্তু সেখানেও দাবি পূরণের আশ্বাস না পেলে ব্যবসায়ীরা লাগাতার ধর্মঘটে যাবেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মর্তুজা মন্টু আমাদের সময়কে বলেন, আগামী রোববার বাণিজ্যমন্ত্রী আলোচনার জন্য সচিবালয়ে ডেকেছেন। সেখানে আলোচনা হবে। আমাদের কোনো অন্যায় দাবি না, ন্যায়সঙ্গত দাবি নিয়েই ধর্মঘট পালন করছি। তা ছাড়া আমরা ভারত বা বার্মা (মিয়ানমার) থেকেও আসিনি। আমরা এ দেশেরই সন্তান। আর যাদের বিরুদ্ধে ধর্মঘট চলছে, তারাও এ দেশের সন্তান। তাই কাউকে বাদ দিয়ে কিছু সম্ভব নয়। তবে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি।

মাংস ব্যবসায়ীদের চার দফা দাবির মধ্যে রাস্তায় চাঁদাবাজি বন্ধ করা অন্যতম। এ বিষয়ে ব্যবসায়ীরা জানান, ৩০ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনে ঢাকায় আসতে ৫০ হাজার টাকা লেগে যায়। পুরো ২০ হাজার টাকাই পথে পথে চাঁদা দিতে হয়। এ কারণে বাজারে গরুর মাংসের দাম বেশি পড়ে। এখন যে দামে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে তা অন্যায্য বলেও দাবি করছেন তারা। ক্রেতাদের ঠকিয়ে এত দামে মাংস বিক্রি করতে তাদেরও মন চায় না। তাই বাধ্য হয়ে এ ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে।

তবে শান্তিনগর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, মাংসের দোকানগুলোয় তালা ঝুলছে। গত রোববার থেকেই তারা দোকান বন্ধ রেখেছেন। আগামী রোববার পর্যন্ত কেউ দোকান খুলবেন না। তাই বিক্রেতারা বসে অলস সময় পার করছেন। কেউ বসে গল্প করছেন, কেউ আবার মোবাইলে গেমস কিংবা তাস খেলছেন। জানতে চাইলে তারা বলেন, কোনো কাজ নেই বলে বসে আছি। তবে এখনো অনেক ক্রেতা আসেন, মাংস কিনতে চান। কিন্তু আমাদের কাছে না থাকায় বিক্রিও করতে পারছি না।

সেগুনবাগিচার হাজি আফজাল গোশত বিতানের বিক্রেতা মো. নূরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে প্রতিকেজি গরুর মাংস ৪৮০ টাকা এবং খাসি সাড়ে সাতশ টাকা দরে বিক্রি করলেও লোকসান হয়। অন্যদিকে এত দাম রেখে ক্রেতাদের সঙ্গেও অন্যায় করা হয়। দাম নিয়ে প্রতিদিনই ঝগড়া হয় ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে। ঢাকার বাইরে থেকে গরু আনতে চাঁদা দিতে দিতে মালিকের অবস্থা খারাপ। আর এই চাঁদার বাড়তি খরচ গিয়ে পড়ে মাংসের ওপর। এভাবে আর কতদিন চলে বলেন?

শান্তিনগরের ব্যবসায়ী মো. মোকলেস জানান, বেশি দামে গরু ও ছাগল কিনেও চামড়া বিক্রি করতে হচ্ছে কম দামে। অথচ আগে গরু-ছাগল বেশি দামে কিনলেও চামড়া বিক্রি করে কিছুটা পোষানো যেত। এখন খুবই খারাপ অবস্থা। আগে গরুর চামড়া আড়াই হাজার থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যেত। এখন সেই চামড়া অনেক কমে বিক্রি করতে হয়। আর ছাগলের চামড়া বর্তমানে ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করতে হয়। কখনো সেই চামড়া নিতেও চায় না।

এদিকে সেগুনবাগিচার নিউ বিসমিল্লাহ ব্রয়লার হাউসের বিক্রেতা আবুল কালাম জানান, বাজারে গরু ও খাসির মাংস না থাকায় আড়ত থেকেই বেশি দামে মুরগি কিনতে হচ্ছে। গতকাল এক থেকে দেড় কেজি ওজনের ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে। আর ছোট আকারের ব্রয়লার মুরগি ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা এবং লেয়ার ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *