ব্যাংকে পর্যাপ্ত পরিমাণ অলস টাকা পড়ে আছে ঋণ নেওয়ার কোন আগ্রহ নেই

0

7d88fa6ec1bc8fcc9ca2ebebdb720606-579c1f637a3e0

দিনবদল নিউজ: দিনে দিনে দেশের অর্থনীতির পরিধি বাড়ছে। সেই তুলনায় নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। ব্যাংকে প্রচুর টাকা পড়ে থাকলেও শিল্প-উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণ নেওয়ার কোনও আগ্রহ নেই। সুদের হার কমানোর পরও আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না তাদের মধ্যে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের ব্যাংক খাতে এখন অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি।

জানা গেছে, ব্যাংকের বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় আমানতের অনুপাতে ঋণ কমে নেমেছে ৬৯ ভাগে। এই হিসাবে ব্যাংক ১০০ টাকা আমানত নিয়ে বিনিয়োগ করতে পেরেছে মাত্র ৬৯ টাকা। যদিও ঋণে এখন সিঙ্গেল ডিজিটে সুদ হার নেমে এসেছে। আগে ১০০ টাকা ঋণ নিলে সুদ গুনতে হতো ১৪ থেকে ১৬ টাকা। এখন ১০০ টাকা ঋণ নিলে সুদ গুনতে হয় ১০ টাকারও কম।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, পাঁচ বছর আগেও দেশে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি ছিল ২৫ শতাংশের ওপরে। অথচ চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশে নেমে এসেছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, যেকোনও দেশের অর্থনীতির গতি বাড়লে বা পরিধি বাড়লে ব্যাংকের টাকা বিনিয়োগে যাওয়ার কথা। বাংলাদেশে অর্থনীতির পরিধি বাড়ছে কিন্তু শিল্প-উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিনিয়োগের আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে না।

জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে ঋণের চাহিদা না থাকায় ব্যাংকগুলো আর আমানত নিতে চাইছে না। ইতোমধ্যে বেসরকারি সাউথইস্ট ব্যাংকসহ বেশ কিছু ব্যাংক আমানত নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সাউথইস্ট ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসের আমানত সংগ্রহে নিয়োজিত এক কর্মকর্তা বলেন, ‘জনগণের কাছ থেকে আমানত নিয়ে ঋণ বিতরণ করা ব্যাংকের কাজ। কিন্তু ঋণের চাহিদা এখন কমে গেছে। এ কারণে ব্যাংকে অতিরিক্ত তারল্য জমে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘টাকা খাটানোর জায়গা না থাকায় নতুন করে আর আমানত নেওয়া হচ্ছে না।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ‘ব্যাংক খাতে থাকা প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার বিপরীতে এক পয়সাও আয় করতে পারেনি ব্যাংকগুলো। এছাড়া উদ্যোক্তা না পেয়ে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা নামমাত্র সুদে বিভিন্ন বন্ডে বিনিয়োগ করে রাখা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দেশে এক ধরনের স্থবিরতা এখনও রয়েছে। যে কারণে ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ অলস অর্থ জমা হয়ে আছে।’ তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের অনাগ্রহের কারণ মূলত অবকাঠামো ও গ্যাসের সমস্যা। এছাড়া বর্তমানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত মনে হলেও ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা কাটেনি। এ কারণে বিনিয়োগ বাড়ছে না।’

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশে এখনও অবকাঠামোগত উন্নতি হয়নি। যা বিনিয়োগের জন্য খুবই জরুরি ছিল। এছাড়া গ্যাস সংযোগের অভাবেও অনেক প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে যেতে পারছে না। এছাড়া বিদ্যুৎ সংকটও দূর হয়নি। এসব কারণে বেসরকারি খাতে কাঙ্ক্ষিত হারে ঋণ বিতরণ বাড়ছে না।’

এদিকে ব্যাংকগুলোর হাতে থাকা অতিরিক্ত তারল্য অনুৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ হয়ে যেন মূল্যস্ফীতির হার না বাড়ে, সে জন্য বাজার থেকে অতিরিক্ত টাকা তুলে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রেখে দিতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা ব্যাংকমুখী না হওয়ায় কম সুদে ১ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা সরকারের বিভিন্ন বন্ডে বিনিয়োগ করে রেখেছে ব্যাংকগুলো।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্যাংক যদি বন্ডে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা বিনিয়োগ না করে এই পরিমাণ অর্থ বেসরকারি উদ্যোক্তাদের শিল্প-কারখানায় বিনিয়োগ করতো, তাহলে ব্যাংকের দ্বিগুণ আয় হতো। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উদ্যোক্তাদের শিল্প-কারখানায় যদি ২ লাখ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়, তাহলে অর্থনীতির চেহারাটাই বদলে যেত।’ তিনি বলেন, ‘গ্যাস ও বিদ্যুতের সমস্যা বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করছে। এছাড়া বিনিয়োগের জন্য পর্যাপ্ত জমি পাওয়া যায় না।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে ব্যাংক খাতে অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার ৩২৪ কোটি টাকারও বেশি। এই টাকাগ মূলত অলস অর্থ। কারণ, শিল্পোদ্যোক্তাদের মধ্যে এই টাকা বিতরণ করার কথা থাকলেও তা করা যায়নি।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *