বৃক্ষমানব রোগে আক্রান্ত বিশ্বের প্রথম মেয়ে

0

f50d382d2010d7f5d091627b74e842d5-5899b64aaed0d

দিনবদল ডেক্স: ‘স্যাররা বলেন, আমি ভালো ছাত্রী। তারা আমাকে স্কুল কামাই করতে নিষেধ করেন। প্রত্যেক দিন স্কুলে যাওয়ার জন্য বলেন। কিন্তু আমার সহপাঠীরা খুব খারাপ ব্যবহার করে। তারা আমার সঙ্গে বসতে চায় না। আমাকে সামনের বেঞ্চে বসতেও দেয় না। কোনও দিন আমি সামনে বসলে আমাকে সরিয়ে দেয়।’ কথাগুলো বলছিল ১০ বছর বয়সী শাহানা, যাকে বলা হচ্ছে ‘ট্রিম্যান সিনড্রোম’ বা বৃক্ষমানব রোগে আক্রান্ত বিশ্বের প্রথম মেয়ে।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শাহানাকে দেখতে অনেকেই ভীড় জমাচ্ছে তার বেডের পাশে। লাল জামা পরা শাহানা সবার সঙ্গেই হাসিমুখে কথা বলছে। তার দুই কানে, নাকের ওপরে, থুতনিতে আর ডান চোয়ালের ওপরে গজিয়েছে গাছের শিকড়ের মতো অতিরিক্ত মাংসপিণ্ড। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এই রোগের নাম ‘ইপিডার্মোডিসপ্লাসিয়া ভ্যারুসিফরমিস’।

একই রোগে আক্রান্ত আবুল বাজানদার এবং শিশু রিপন দাস ঢামেক হাসপাতালেই চিকিৎসা করে এখন সুস্থ হওয়ার পথে। গত বছরের ৩০ জানুয়ারি ভর্তি হওয়া বাজানদারের হাতে এবং পায়ে ১৮বার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। আর রিপন দাসের হাতে একবার অস্ত্রোপচারের পর ব্যান্ডেজ খুলে দেওয়া হয়েছে। তার পায়ের ব্যান্ডেজ অবশ্য খোলা হয়নি অস্ত্রোপচারের পর।

ঢামেক হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের ষষ্ঠ তলায় শিশুদের ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া শাহানার সঙ্গে আছে বাবা মো. শাহজাহান। গত ২৯ জানুয়ারি একমাত্র মেয়েকে নিয়ে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার বালুরচর গ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছেন তিনি।

a4d13ce95c17f39f4b380407bc0dc89b-5899b668e9e8e

দিনমজুরের কাজ করা শাহজাহান বলেন, ‘এক বছর বয়সে শাহানার মুখে ঘামাচির মতো হয়।প্রায় ৪ বছর আগে তার কান এবং মুখে থাকা শিকড়ের মতো অংশ বড় হয়ে যায়। দুই বছর আগে একজন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের ওষুধ দেড়-দুই মাসের মতো খেয়েছিল। তখন কে যেন বলেছিল, এসব ওষুধে এই রোগ ভালো হবে না, বরং বাড়বে। তখন সে ওষুধ খাওয়ানো বন্ধ করে দেই। অনেক আশা নিয়ে এখানে এসেছি। চিকিৎসকরা বলছেন, আমার মেয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবে।’

শাহানা বলছিল,“আমাকে নিয়ে স্কুলের সবাই হাসাহাসি করে, বাজে কথা বলে। সহপাঠীরা বলে, ‘তোর এই রোগ ছোঁয়াচে, তুই আমাদের সঙ্গে বসবি না, তুই স্কুলে আসবি না।’ তাদের কথা শুনে আমি মন খারাপ করে বাড়ি চলে আসি। কিন্তু পরদিন আবার স্কুলে যাই, আবার ওদের কথা শুনতে হয়। এভাবেই আমি স্কুলে যাতায়াত করি।”

বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন আশার কথাই শোনালেন শাহানাকে নিয়ে। তিনি বলেন,‘শাহানার জন্য ৫ ফেব্রুয়ারি ছয় সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তার বেশ কিছু পরীক্ষাও করা হয়েছে।’

শাহানার বাজানদারের মতো এতো অস্ত্রোপচারের দরকার হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘শাহানার বয়স কম, বাজানদারের তুলনায় তার আক্রান্ত অংশও কম। তার হয়তো দুই-তিনটির মতো অপারেশন হতে পারে।’

শাহানার রক্ত, টিস্যুসহ কিছু স্যাম্পল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় পাঠানো হবে জানিয়ে ডা.সামন্ত লাল সেন বলেন,‘আমরা এরই মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে কথা বলেছি, যোগাযোগ হচ্ছে ইমেইলের মাধ্যমেও। অপারেশনের পর শাহানার শরীরের ফেলে দেওয়া অতিরিক্ত অংশ ফেরত আসবে কিনা, সেটাও তারা আমাদের জানাবে।’

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *