বিএসইসির ‘আজগুবি’ ইপিএস আবিষ্কার

0

bsec20170312183017

দিনবদল ডেক্স: ‘আজগুবি’ শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) আবিষ্কার করেছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বাংলাদেশ কিংবা আন্তর্জাতিক কোন হিসাব মানে পাঁচ বছরের ওয়েটেড এভারেজ ইপিএস না থাকলেও এই নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি সম্প্রতি কিছু কোম্পানির ক্ষেত্রে এমন ইপিএস প্রকাশ করেছে।

প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) ও রাইট শেয়ার অনুমোদনের ক্ষেত্রে বিএসইসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পাঁচ বছরের ওয়েটেড এভারেজ ইপিএস বলে তথ্য প্রকাশ করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ কিংবা আন্তর্জাতিক কোন হিসাব মানে এ জাতীয় ইপিএস নেই। এছাড়া কোন পাঁচ বছরের ইপিএস তাও উল্লেখ করা হয় না। আবার একেক কোম্পানির ক্ষেত্রে একেক ধরনের ইপিএস প্রকাশ করে। একই সঙ্গে অসম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশও করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান ‘জাগো নিউজ’কে বলেন, বিএসইসি হিসাব মান মেনেই তথ্য প্রকাশ করে। পাঁচ বছরের যে ইপিএস প্রকাশ করা হয় তা ওয়েটেড এভারেজ করেই করা হয়। তবে বাংলাদেশ অথবা আন্তর্জাতিক হিসাবে মানে পাঁচ বছরের ওয়েটেড এভারেজ ইপিএস আছে কিনা তা আমার সঠিক জানা নেই। আপনি যেহেতু বলছেন বিষয়টি আমরা দেখবো। তবে ভুল তথ্য প্রকাশের বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।

৯ ফেব্রুয়ারি বিএসইসির ৫৯৭তম কমিশন সভায় নূরানি ডাইং অ্যান্ড সোয়েটার’র আইপিও অনুমোদন দেয়া হয়। এই কোম্পানিটির বিগত ৫টি আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী ওয়েটেড এভারেজ ইপিএস ১ টাকা ৭৯ পয়সা হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিত প্রকাশ করে বিএসইসি। প্রতিষ্ঠানটির ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে উল্লেখ করা হয়, ইমপেরিয়াল ক্যাপিটাল ও সিএপিএম অ্যাডভাইজারি লিমিটেডের নাম।

প্রকৃতপক্ষে নূরানি ডাইংয়ের ১৫ মাসের ব্যবসায় (এপ্রিল ২০১৫-জুন ২০১৬) ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৮৬ পয়সা। আর প্রতিষ্ঠানটির ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে রয়েছে ইমপেরিয়াল ক্যাপিটাল, ইবিএল ইনভেস্টমেন্ট ও সিএপিএম অ্যাডভাইজারি লিমিটেড।

এরও আগে, ১৭ জানুয়ারি রাইট শেয়ার ছাড়ার অনুমোদন দেয়া হয় সাইফ পাওয়ারটেকের। এক্ষেত্রে বিএসইসির বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ২০১৬ সালের নিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ী সাইফ পাওয়ারটেকের ইপিএস হয়েছে ৪ টাকা ৩৮ পয়সা। অথচ নূরানি ডাইংয়ের ক্ষেত্রে উল্লেখ করা হয় পাঁচ বছরের ওয়েটেড এভারেজ ইপিএস।

বিএসইসির ৫৯৪তম কমিশন সভায় ‘আমরা নেটওয়ার্কস’র বিডিং অনুমোদন দেয়া হয়। এক্ষেত্রে পাঁচ বছরের ওয়েটেড এভারেজ ইপিএস হিসাবে ২ টাকা ৫২ পয়সা দেখানো হয়। এক্ষেত্রে ‘আর্নিংস বেজড ভ্যালু পার শেয়ার’ নির্ণয়ের ইপিএস দেখানো হয়েছে। কোম্পানিটি ২০১৫ সালে ইপিএস করেছে ৩ টাকা ১৬ পয়সা।

এদিকে, তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বিএসইসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইপিও ও রাইট অনুমোদনের সময় নেট অ্যাসেট ভ্যালুর নামে পার শেয়ার নেট অ্যাসেট ভ্যালুর তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। ২০১৬ সালের ৩০ জুন নূরানি ডাইং অ্যান্ড সোয়েটার নেট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) ১৪ টাকা ৩৭ পয়সা দাঁড়িয়েছে বলে বিএসইসি তথ্য প্রকাশ করে। কিন্তু এ সময় প্রতিষ্ঠানটির এনএভি ছিল ৫৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। তবে নেট অ্যাসেট ভ্যালু পার শেয়ার (এনএভিপিএস) ছিল ১৪ টাকা ৩৭ পয়সা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইস্যু ম্যানেজার বলেন, বিএসইসির এ জাতীয় ইপিএস ও ভুল তথ্য প্রকাশে আমরা হতাশ। আমাদের ২৫০ থেকে ৩০০ পৃষ্ঠার প্রসপেক্টাসে কোন ভুল হলে, কৈফিয়ত দিতে দিতে শেষ হয়ে যাই। কিন্তু সেই প্রসপেক্টাস থেকে নিয়ে বিএসইসি একটি তথ্য সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারে না। এরপরেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা হওয়ায় চুপচাপ থাকি। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী ‘জাগো নিউজ’কে বলেন, এক এক কোম্পানির ক্ষেত্রে এক এক ধরনের তথ্য প্রকাশ করা ঠিক না। বিএসইসি থেকে সব কোম্পানির ক্ষেত্রে একই ধরনের তথ্য প্রকাশ করা উচিত। আর তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে বিএসইসির সতর্ক হওয়া উচিত। বিএসইসি ভূল তথ্য প্রকাশ করা হলে বিনিয়োগকারীরা বিভ্রান্ত হবেন।

দ্য ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) সাবেক সভাপতি এএসএম শায়খুল ইসলাম বলেন, বিএসইসি যখন হিসাব মানের বাইরে গিয়ে নিজে একটা ইপিএস আবিষ্কার করে, তখন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কথা মাথায় রাখতে হবে। এছাড়া এ জাতীয় ইপিএসে বিনিয়োগকারীদের কোন উপকার নেই। সবাই জানতে চায় সর্বশেষ ইপিএস সম্পর্কে, একই সঙ্গে তুলনা করার জন্য আগের বছরের ইপিএস।

বিএসইসির ভুল তথ্য প্রকাশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোম্পানির ইপিএস ও এনএভিপিএস নিয়ে বিএসইসির যে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, তা বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ সিদ্ধান্তে সহযোগিতা করে। বিএসইসি যদি এক্ষেত্রে ভুল তথ্য প্রকাশ করে, তাহলে তা অনাকাঙ্ক্ষিত। এ বিষয়ে বিএসইসিকে আরো সচেতন হতে হবে।

অ্যাকাউন্টিং-এ এফসিএমএ, সিপিএ, এফসিএ, এসিএস, সিআইপিএফএ সনদপ্রাপ্ত মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিক হিসাব মান (আইএএস) ও বাংলাদেশ হিসাব মানে (বিএএস) পাঁচ বছরের ওয়েটেড এভারেজ বলে কোন ইপিএস নেই। তবে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বিএসইসি চাইলে নিজ থেকে এ জাতীয় ইপিএস প্রকাশ করতে পারে। তবে দেখতে হবে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পাঁচ বছরের ওয়েটেড এভারেজ ইপিএস জিনিসটা বোঝে কিনা।

বিনিয়োগকারী মনির হোসেন বলেন, বিএসইসি পাঁচ বছরের ওয়েটেড এভারেজ নামে যে ইপিএস প্রকাশ করে, তা আমাদের মতো বিনিয়োগকারীদের কাছে বোধগম্য নয়। এটা দিয়ে আসলে তারা কি বোঝায় তা আমি জানি না।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *