“বাংলাদেশ কোনো জঙ্গি রাষ্ট্র নয়, জঙ্গি দমনে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি: প্রধানমন্ত্রী
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে কোস্টাগার্ডের দুটি আধুনিক সমুদ্রগামী জাহাজের কমিশনিং অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ কোনো জঙ্গি রাষ্ট্র নয়। জঙ্গি দমনে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। জঙ্গিবাদের আশয়, প্রশ্রয় ও মদদদাতাদের বতর্মান সরকার কোনো ছাড় দেবে না।
“অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি কোস্টগার্ডও তাদের এখতিয়ারাধীন এলাকায় জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ভূমিকা রাখবে বলে আমি দৃঢ় আশাবাদী।”
নগরীর পতেঙ্গায় কোস্টগার্ড বার্থে নতুন আনা জাহাজ ‘সিজিএস সৈয়দ নজরুল’ ও ‘সিজিএস তাজউদ্দীন’ এর দুই অধিনায়কের হাতে ফরমান তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
এসময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, স্বরাষ্ট্রসচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী, কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন মাজেদুল হক উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “জনবলের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও কোস্টগার্ড কম সময়ের মধ্যে সুবিশাল সমুদ্র এবং উপকূলীয় এলাকার জনগণের নিরাপত্তায় অসামান্য অবদান রাখছে। এ বাহিনীর সদস্যদের সততা, দায়িত্ববোধ, ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও কর্মদক্ষতায় উপকূলীয় এলাকায় কোস্টগার্ড আস্থা ও নিরাপত্তার প্রতীকে পরিণত হয়েছে।”
কোস্টগার্ড সদস্যরা সমুদ্র বন্দর ও বহির্নোঙ্গরের নিরাপত্তা বিধান, সুন্দরবন এলাকায় জলদস্যুতা দমন, নদী ও সাগরে চোরাচালানবিরোধী অভিযান, জাটকা নিধন প্রতিরোধে সুপরিকল্পিত ও কার্যকরী টহলের মাধ্যমে জাতীয় ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক সফলতা এনে দিয়েছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
“মাদক চোরাচালান ও মানবসম্পদ পাচার রোধে কার্যকরী অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে কোস্টগার্ড সদস্যরা উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে যাচ্ছে। ”
বঙ্গোপসাগরে বিস্তীর্ণ জলসীমায় নিরাপত্তা দিতে কোস্টগার্ডকে সমৃদ্ধ করা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
গত আট বছরে ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের উপকূলীয় ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোস্টগার্ডের স্টেশনসমূহে অবকাঠামোসহ ৩০টি কোস্টাল সাইক্লোন ম্যানেজমেন্ট সেন্টার তৈরি করাসহ ৪৮টি পেট্রোল বোট নির্মাণ করা হয় বলে জানান তিনি।
এছাড়া কোস্টগার্ডের জন্য চলমান তিনটি প্রকল্পের আওতায় অফিসার্স মেস, নাবিক নিবাস, প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড ও খুলনা শিপইয়ার্ডে সাতটি টহল জাহাজ, একটি ফ্লোটিং ক্রেন এবং দুটি পেট্রোল বোট তৈরি হচ্ছে যা অচিরেই বহরে যুক্ত হবে।”
কোস্টগার্ডকে যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে উন্নয়ন ও রাজস্ব বাজেট থেকে পাঁচ বছর মেয়াদে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা বাহিনীটির উন্নয়নে বরাদ্দ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
কোস্টগার্ডের কার্যপরিধি ও দায়িত্বপূর্ণ এলাকা বৃদ্ধির সঙ্গে জনবল এবং সমুদ্রগামী বড় জলযান বৃদ্ধির বিষয়টি সরকারের বিশেষ বিবেচনায় রয়েছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রীপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনী প্রধান, কূটনীতিক এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কমিশনিংয়ের পর প্রধানমন্ত্রী জাহাজ দুটি ঘুরে দেখেন।
ইতালি থেকে কেনা নতুন চারটি অফশোর পেট্রোল ভ্যসেলের মধ্যে দুটি জাহাজের মধ্যে ‘সিজিএস সৈয়দ নজরুল’ ও ‘সিজিএস তাজউদ্দীন’ গত বছরের ২ নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছায়।
৮৭মিটার লম্বা ও ১০ দশমিক পাঁচ মিটার প্রস্থ এবং ১৩০০ টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ দুটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৩ নটিক্যাল মাইল গতিতে ছুটতে সক্ষম। জাহাজ দুটি কোস্টগার্ডের স্বাভাবিক কাজের পাশাপাশি গভীর সমুদ্রে টহল পরিচালনা, পরিবেশ দূষণ অনুসন্ধান, মানব পাচার প্রতিরোধসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে নিয়োজিত থাকবে।
ইতালি থেকে দ্রুতই আরও দুটি জাহাজ ‘সিজিএস মনসুর আলী’ ও ‘সিজিএস কামারুজ্জামান’ কোস্টগার্ডের বহরে যুক্ত হবে।