বর্তমান সরকারের তিন বছর পূর্তি আজ

0

image-15990

দিনবদল ডেক্স: আজ বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের তিন বছর পূর্তি হলো। টানা আট বছর ধরে ক্ষমতায় দলটি। দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে দেশের জনগণ আগামী মেয়াদেও তাদের নির্বাচিত করবে বলে মনে করছেন দলটির নেতারা। আর এর মধ্য দিয়ে টানা ১৫ বছর দেশ শাসনের রেকর্ড গড়ার স্বপ্ন দেখছেন তারা।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের আন্দোলনের মধ্যে ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে বর্তমান সরকার। ৫ জানুয়ারির ওই নির্বাচনে প্রায় অর্ধেকের বেশি সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। দেশ-বিদেশে সমালোচিত ওই নির্বাচনে জয়ী আওয়ামী লীগ ১২ জানুয়ারি শপথ নেয়ার মাধ্যমে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে।

দ্বিতীয় মেয়াদের ইতিমধ্যে তিন বছর হয়ে গেল। আগের মেয়াদ মিলিয়ে টানা আট বছর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতরা বলছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো গণতান্ত্রিক সরকার ধারাবাহিকভাবে এত বছর সরকারের থাকতে পারেনি। সরকারের ধারাবাহিকতা থাকায় নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও দেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো চলমান রয়েছে।

ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, দেশের আর্থ-সমাজিক উন্নয়নে কয়েকটি মেগা প্রকল্প চলছে। এগুলো শেষ হলে দেশের অর্থনৈতিক চেহারা বদলে যাবে। এতে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা আরও উন্নত হবে।

চলমান বড় বড় প্রকল্পগুলোর অবস্থান নিরিখে এমনকি আর উন্নয়নের দরকার নেই বলেও মনে করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সম্প্রতি এক কর্মীসভায় তিনি বলেন, ‘আর উন্নয়নের দরকার নাই। যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা সফলভাবে শেষ হলেই বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে যাবে। এই উন্নয়নের পথে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আরেকটি ভোট বিপ্লব ঘটাব আগামী নির্বাচনে।’

আগামী নির্বাচনের জন্য দলকে সুসংগঠিত করতে সাংগঠনিক সফর করবেন দলের নেতারা। তাদের সাংগঠনিক সফরে সরকারের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও অর্জনের সঙ্গে জনগণের মেলবন্ধন ঘটিয়ে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজও করবে দলটি।

তবে ক্ষমতাসীন দলের সামনে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন নেতারা। এ জন্য তারা সরকারের বাকি মেয়াদে উগ্র সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ নিয়ে সতর্ক থাকতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিচ্ছেন। এই সময়ের মধ্যে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে।

আওয়ামী লগের নেতারা বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপি-জামায়াত নানা সহিংসতা করেছে। ২০১৫ সালে নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে তারা টানা তিন মাস দেশব্যাপী জ্বালাও-পোড়াও করেছে। এর প্রভাব কিছুটা হলেও দেশের অর্থনীতিতে পড়েছে। কিন্তু তারপরও দেশের উন্নয়ন হয়েছে। ওই সময় সহিংসতা না হলে দেশের অবস্থা আরও উন্নত হতো বলে মনে করেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।

২০১৪ সালের নির্বাচন বিএনপিকে ছাড়া হলেও আগামী নির্বাচনে দলটির অংশগ্রহণের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, দল টিকিয়ে রাখতে হলে নির্বাচনে আসতেই হবে বিএনপিকে। সে ক্ষেত্রে ২০১৯ সালের নির্বাচনের মাঠ একতরফা থাকবে না। তাই ওই নির্বাচনে জেতার জন্য দলের সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার ওপর জোর দিচ্ছেন তারা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিগত বছরগুলোতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের অনেক অর্জন থাকলেও শুধু দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল-দ্বন্দ্ব্ব আর প্রাণঘাতী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ায় অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে দলটিকে। অভ্যন্তরীণ কোন্দল সামলাতে ব্যর্থ হওয়ায় সরকারের অনেক অর্জনই ম্লান হয়ে গেছে। আর দলের বাঘা বাঘা নেতা-মন্ত্রী-উপদেষ্টার অতিকথন, বিতর্কিত মন্তব্যেও সরকারকে বেকায়দায় পড়তে হয়েছে। তাই সরকারের সামনে চ্যালেঞ্জ হলো— দলের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং নেতা-মন্ত্রীর অতিকথন বন্ধ করা।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা ২০০৮ সালে ‘দিন বদল’ এবং ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর স্লোগান নিয়ে মানুষের কাছে ভোট চেয়েছি। মানুষ আমাদের সেই স্লোগানের ওপর আস্থা রেখে আমাদের ভোট দিয়েছিল। এরপর আমরা তাদের সেই আস্থার প্রতিদান দিয়েছি। দেশের মানুষের দিন বদল হয়েছে, তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে এবং তাদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।’

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের আগামী দিনের লক্ষ্য হলো ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে একটি পরিপূর্ণ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করা। যেহেতু আমরা অতীতে আমাদের ওয়াদা রেখেছি, ভবিষ্যতেও আমাদের লক্ষ্য পূরণ করব।’

বিএনপিকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লগের প্রচার সম্পাদক বলেন, ‘আরেক দিকে যারা আছেন, তারা দেশের মানুষের ওপর পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করেছে, আগুন-সন্ত্রাস চালিয়ে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বাধা সৃষ্টি করেছে। তাই আমি আশা করি, দেশের উন্নয়নের জন্য জনগণ শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে।’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের ধারাবাহিকতা থাকায় বিগত সরকারের পাঁচ বছরের (২০০৯-১৩) সম্পাদিত কর্মকাণ্ড এবং গৃহীত পদক্ষেপ বর্তমান সরকার বাস্তবায়নের ফলে দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। মানুষের আর্থ-সমাজিক উন্নয়ন হয়েছে। ভবিষ্যতে সরকারের ধারাবাহিকতা থাকলে দেশের উন্নয়ন আরও দ্রুত হবে।’

আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে দেশের মানুষ কেন ভোট দেবে, এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘দেশের মানুষের কাছে প্রমাণ হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকার ক্ষমতায় থাকলে তাদের ভাগ্যোন্নয়ন সম্ভব। তাই তাদের অর্থনৈতিক উন্নতির ধারা চলমান রাখতেই জনগণ শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রাখবেন।’

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *