ফুলেল শ্রদ্ধায় শহীদজায়া অধ্যাপক পান্না কায়সারকে শেষ বিদায়

0

২২ শ্রাবন ১৪৩০বঙ্গাব্দ,
০৬ আগস্ট ২০২৩ইং
ফারহানা আফরোজ রুনাঃ

বরেণ্য লেখক-গবেষক, বুদ্ধিজীবী, শিশু-কিশোর আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও সাবেক সংসদ সদস্য শহীদজায়া অধ্যাপক পান্না কায়সারকে ফুলেল শ্রদ্ধায় শেষ বিদায় জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ।

আজ রবিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনকালে বিশিষ্টজনরা বলেছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমৃত্যু সংগ্রাম করেছেন পান্না কায়সার। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তিনি প্রেরণার বাতিঘর হয়ে বেঁচে থাকবেন।

সকাল ১১টায় শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য অধ্যাপক পান্না কায়সারের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হয়।

সেখানে ঢল নামে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষের। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে প্রথমে শ্রদ্ধা জানায় পান্না কায়সারের প্রিয় শিশু-কিশোর সংগঠন খেলাঘর আসর। কেন্দ্রীয় খেলাঘরের পক্ষে স্যালুট দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর মরদেহে খেলাঘরের পতাকা দিয়ে আবৃত করা হয়। এরপর খেলাঘরের বিভিন্ন শাখার পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আজীবন সংগ্রামী লেখক গবেষক পান্না কায়সার ১৯৭৫ সালের পর হারিয়ে যাওয়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে শাণিত করেছেন, তার প্রয়াণ বাঙালির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি’

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সদ্য প্রয়াত মুক্তিযুদ্ধ গবেষক শহীদজায়া পান্না কায়সারের মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তর সালের পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হারিয়ে গিয়েছিলো, অবদমিত করা হয়েছিলো, সেই প্রতিকূল সময়েও তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে শাণিত করেছিলেন।
সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘পান্না কায়সার সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন। সংসার পাতার দুই বছরের মাথায় স্বামীকে হারিয়েছেন, তারপর তিনি আর নতুন করে সংসার পাতেন নাই। সন্তানদের মানুষ করেছেন, কষ্ট করেছেন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে থেকেছেন। আমি ধারণা করি নাই যে, এতো তাড়াতাড়ি তিনি আমাদের মাঝ থেকে হঠাৎ করে চলে যাবেন। আমরা তার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই, তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি, স্রষ্টা যেন তাকে চিরশান্তিতে রাখেন।’

এরপর শ্রদ্ধা নিবেদন করে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক কমিটি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), গণতন্ত্রী পার্টি, ধানসিঁড়ি কমিউনিকেশন, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, ঢাকা থিয়েটার, সম্প্রীতি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতি, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সংস্কৃতি মঞ্চ, রবীন্দ্র সংগীত সম্মেলন পরিষদ, বাংলাদেশ গণ আজাদী লীগ, বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদ, ছায়ানট, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, প্রজন্ম একাত্তরসহ আরো বহু সংগঠন ও ব্যক্তিরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ গড়ে তোলা আমাদের একটি বড় দায়িত্ব। পান্না কায়সার সেই দায়িত্ব সারাজীবন সুন্দরভাবে পালন করে গেছেন।’
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘শহীদজায়া পান্না কায়সারের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
তার মতো একজন অমায়িক ও আদর্শবান মানুষ আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। তিনি আমাদের দেশকে, দেশের মানুষকে গড়তে সব সময় কাজ করে গেছেন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘তিনি সবার ভালোবাসা লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন ব্যক্তিগত মূল্যবোধ ও গুণাবলির কারণে। তার অবদান রয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তি তাদের আইনের আওতায় এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর ক্ষেত্রে পটভূমি তৈরি করতে পান্না কায়সার মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন।’
আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার, অসাম্প্রদায়িক চেতনার জন্য কাজ করে গেছেন পান্না কায়সার।
আমরা চাই তার আশার সেই বাংলাদেশ, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। তার চলে যাওয়া দেশের রাজনীতির ও শুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চার জন্য একটি বড় ক্ষতি।’
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘১৯৭২ সালে প্রথম যখন রাজাকারদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন করেছি, সেই আন্দোলনে তিনি সামনের সারিতে ছিলেন। তার পুরো জীবনটাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দেশ তৈরি করতে কাজ করে গেছেন। খেলাঘরের বন্ধুদের বলব, তোমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হবে।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *