প্রতিবন্ধীদের জন্য বইমেলায় বিশেষ দিন ঘোষণার দাবি
দিনবদল ডেক্স: ‘ভাষার মাসে আসুন, আশার আলো জ্বালি এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও শিশুদের পাশে দাঁড়াই’- এ স্লোগানকে সামনে রেখে একজন প্রতিবন্ধী শিশুর কাহিনী নিয়ে প্রকাশিত শিশুতোষ লেখক ও ছড়াকার নাজিয়া জাবীন রচিত ‘হাঁসের পায়ে ঘুড়ি’ নামক শিশুতোষ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। সাভারে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র সিআরপি’র রেডওয়ে হলে আজ শনিবার সকালে এক বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
ইগনাইট পাবলিকেশন্স আয়োজিত এ অনুষ্ঠানটির অতিথি হিসেবে ছিল স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনা।
সকাল ১১ টায় সিআরপি’র উইলিয়াম ও মেরী টেইলর স্কুলের প্রতিবন্ধী শিশুদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিআরপি’র প্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়কারী ড. ভ্যালেরি এ. টেইলর। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিশু মনোবিজ্ঞানী ও বিউটিফুল মাইন্ড স্কুলের চেয়ারম্যান ডা. শামিম মতিন চৌধুরী, প্লাস ওয়ান’র প্রতিষ্ঠাতা ও মহাপরিচালক রুবাবা দৌলা এবং সিআরপি’র নির্বাহী পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ অধ্যাপক ড. সৈয়দ ফরহাদ আনোয়ার, মুক্তিযোদ্ধা কণ্ঠযোদ্ধা ডালিয়া নওশীন এবং তাদের পরিবার পরিজন ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
শিশুতোষ লেখক ও ছড়াকার নাজিয়া জাবীন তাঁর বক্তব্যে বলেন, “জীবনযুদ্ধে যা যা করণীয় সবই প্রতিবন্ধীরা করতে পারেন। শারীরিক সমস্যা রয়েছে- এমন ব্যক্তিও এভারেস্ট জয় করেছেন। বিশ্ব অলিম্পিকে তাঁরা সোনার ম্যাডেল জিততে পারেন। স্টিফেন হকিংস শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে বিশ্বের প্রথম কাতারের একজন বৈজ্ঞানিক হিসেবে পৃথিবীর বুকে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। তেমনি আপনার-আমার খুব কাছের এমন অনেক মানুষই রয়েছেন যারা প্রতিবন্ধিতাকে জয় করেছেন মনের সমস্ত শক্তি দিয়ে।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ২১’র বই মেলায় বিশেষ প্রহর বা দিন ঘোষণার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “বইমেলায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করতে হবে। হুইল চেয়ার চলার সুন্দর রাস্তা গড়ে দিতে হবে। আর সবার মতো তারাও যেন জ্ঞানের আলো, ভাল লাগার আলো লুফে নিতে পারেন। ” তিনি বলেন, “এ বছর আশ্বাস পেয়েছি একুশের বইমেলায় অন্তত একটি দিন প্রতিবন্ধী দিন ঘোষণা করা হবে। মেলার মূল মঞ্চে গত বছর স্পর্শ’র সহায়তায় প্রতিবন্ধী ভাই-বোনেরা ৩০ মিনিটের একটি অনুষ্ঠান করতে পেরেছিল। এ বছর আরো সময় বাড়ানো হবে। যদি ভেলরি টেইলর অনুমতি দেন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা মেলায় না যেতে পারলে বই মেলার একটি অংশ আসবে সিআরপিতে। ”
নাজিয়া জাবীন আরো বলেন, “২০০৯ থেকে স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনা বই মেলায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের যুক্ত করেছে। বাংলাদেশে যখন সাহিত্য চর্চার জন্য একটিও ব্রেইল বই ছিল না, ব্রেইল সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা ছিল না, তখন ২০১৭ এ ‘স্পর্শ’ বই মেলাকে প্রাণের মেলায় পরিণত করতে পেরেছে। ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত ৪০টিরও অধিক ব্রেইল বই প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছে স্পর্শ। বহু দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ভাই-বোনেরা এখন বইমেলায় এসে খুঁজে নিতে পারেন তাদের প্রিয় লেখকের বই। ” তিনি বলেন, “আসুন সমাজে যে যেখানে থাকিনা কেন, না পাওয়া মানুষের জন্য কিছুটা সময় ব্যয় করি। জীবনস্রোতে এগিয়ে যাই। তবে যারা একটু পিছিয়ে আছে তাদের ফেলে নয়, তাদের সঙ্গে করে। ”
সিআরপির নির্বাহী পরিচালক মো. শফিকুল ইসলামের স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের মূল পর্ব শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে বিশেষ অতিথি ও লেখকের বক্তব্যের পর সব অতিথিবৃন্দ একসঙ্গে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন। প্রধান অতিথির শুভেচ্ছা ও প্রশংসা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের মূল পর্ব শেষ হয়। পরে নাজিয়া জাবীন সিআরপি’র প্রতিবন্ধী শিশুদের মাঝে স্বরচিত ‘হাঁসের পায়ে ঘুড়ি’ বইটি বিতরণ করেন এবং প্রতিবন্ধী রোগী ও শিশুদের মাঝে খাবার বিতরণ করেন। অনুষ্ঠানের শেষে অতিথিরা সিআরপি’র কার্যক্রম ও এলাকা পরিদর্শন করেন।