পাবনায় স্কুলের পুরনো ভবনে রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহারের সন্ধান
দিনবদল ডেক্স: এবার পাবনায় একটি স্কুলের পুরনো ভবনে রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহারের সন্ধান পাওয়া গেছে। সুজানগর উপজেলার বিন্যাডাঙ্গি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনে এর সন্ধান মেলে। নির্মাণের প্রায় ২২ বছর পর সম্প্রতি ভূমিকম্পে স্কুল ভবনের পলেস্তারা খসে পড়লে বাঁশের অংশবিশেষ বেরিয়ে আসে। বাঁশের পাশাপাশি স্কুলের ভবনে বিভিন্ন স্থানে ফাটলের মধ্যে দেখা গেছে কাঠও। রডের পরিবর্তে এগুলো ব্যবহার করা হয়েছে।
সবমিলিয়ে আতঙ্ক নিয়ে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান। শিক্ষকরা বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার জানালেও, নেয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা। সময় যত পার হচ্ছে, বিদ্যালয়ের ভবনটি ততই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। ইতিমধ্যে ভবনের দেয়ালে অসংখ্য ফাটল দেখা দিয়েছে। দরজার ওপরের ঢালাই ভেঙে বাঁশের বাতা (বাঁশের তৈরি লম্বা লাঠি) বেরিয়ে এসেছে। তারপরও ভবনের বিভিন্ন কক্ষে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়া হচ্ছে। পাবনা জেলা শহর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে সুজানগর উপজেলার প্রত্যন্ত বিন্যাডাঙ্গি গ্রামে ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিন্যাডাঙ্গি রেজি: বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি ২০১৩ সালে সরকারিকরণ হয়। বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৫০ জন। প্রথমে টিনের ঘরে পাঠদান হলেও ১৯৯৪ সালে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এলজিইডির তত্ত্বাবধানে দুই দফায় স্কুলের ভবন নির্মিত হয়। ভবনটি নির্মাণে ঠিকাদার ছিলেন সুজানগরের সুলতান মাহমুদ ও আবদুর রউফ নামে দুই ব্যক্তি।
বুধবার সরজমিনে দেখা যায়, উপজেলার গাজনার বিল এলাকায় বিদ্যালয়টির অবস্থান। পাঁচ কক্ষের একটি মাত্র পুরনো ভবন। মেঝে স্যাঁতসেঁতে, মাটি সরে ফেটে গেছে। ভবনটির অধিকাংশ কক্ষের দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়েছে। দেয়ালগুলোতে তৈরি হয়েছে বড় বড় ফাটল। একটি কক্ষের দরজার ওপর ভাগের ঢালাই ভেঙে বেরিয়ে এসেছে বাঁশের লাঠি। বারান্দার ছাদে বেরিয়ে এসেছে কাঠ। এ থেকে শিক্ষক ও এলাকাবাসীর ধারণা ভবন নির্মাণের সময় রডের সঙ্গে বাঁশ ও কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মজিদ বলেন, আমরা সব সময় আতঙ্কে থাকি কখন যেন বিল্ডিং ভেঙ্গে পড়ে। ফলে স্কুলে এসে পড়া শোনায় আমাদের মন বসে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অভিভাবক বলেন, ভবন নির্মাণের সময় আমরা কয়েকজন এলাকাবাসী ভালো ভাবে কাজ করার জন্য ঠিকাদারের কাছে এসেছিলাম কিন্তু ঠিকাদারের হুমকিতে কাজ দেখতে পারেনি। সম্প্রতি ভবনের ভেতর বাঁশ ও কাঠের অস্তিত্ব পাওয়ায় এখন বুঝতে পারছি কেন তখন ঠিকারদার আমাদের কাজ দেখতে দেয়নি। ভবন ধসের আশঙ্কাই আমার সন্তানকে এখন স্কুল থেকে নিয়ে গিয়ে অন্য স্কুলে ভর্তি করেছি। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফজলুল হক বলেন, ভবনে ফাটল দেখা দেয়ায় অভিভাবকেরা সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। অনেকে এই স্কুল থেকে সন্তানদের নিয়ে গেছে।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম বলেন, সম্প্রতি ভূমিকম্পে স্কুলের প্লাস্টার খসে পড়লে বাঁশের অংশ বের হলে বিষয়টি আমাদের নজরে আসে। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার পর থেকে বিষয়টি জানিয়ে সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী বরাবর বেশ কয়েকবার চিঠি দেয়া হয়েছে। সবাই ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু এখনো ভবনটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শিশুদের ক্লাস করাতে হচ্ছে। সুজানগর উপজেলা প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম ভবন নির্মাণের বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি। সুজানগর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দা নার্গিস আক্তার জানান, তিনি কোনো লিখিত অভিযোগ পাননি। তবে তিনি বিষয়টি শুনেছেন, অচিরেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।