পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প থেকে অর্থ প্রত্যাহারের নেপথ্যে ইউনূস : প্রধানমন্ত্রী
![](https://dinbodalnews24.com/wp-content/uploads/2017/02/7418c37f2dd08623049a65280b1aa384-58a7e37746228.jpg)
![](https://dinbodalnews24.com/wp-content/uploads/2017/02/7418c37f2dd08623049a65280b1aa384-58a7e37746228.jpg)
দিনবদল ডেক্স: দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প থেকে অর্থ প্রত্যাহারের নেপথ্যে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সাবেক ফার্স্টলেডি হিলারি ক্লিনটনের জড়িত থাকার ইঙ্গিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে তিনবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর থেকে ডেকে পাঠানো হয় বলেও জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি। ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে অপসারণ করা হলে বিশ্ব ব্যাংকের পক্ষ থেকে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন প্রত্যাহার করা হবে-এই কথা প্রধানমন্ত্রীকে বোঝাতে বলা হয় জয়কে।
শুক্রবার জার্মানির মিউনিখ শহরে ম্যারিয়ট হোটেলে ইউরোপীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীসহ প্রবাসী আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মারকেলের আমন্ত্রণে ৫৩ তম নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিতে শুক্রবার সকালে তিনি মিউনিখ পৌঁছান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোনও প্রকার দুর্নীতি হয়ে থাকলে প্রমাণ করার জন্য বিশ্ব ব্যাংককে চ্যালেঞ্জ জানানোর পরও সেতুর নির্মাণ কাজ শুরুর আগেই তারা অর্থ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এক প্রভাবশালী এবং নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস আমার পরিবারের সদস্যদেরকে পর্যন্ত এই মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগের সঙ্গে জড়ানোর চেষ্টা করেন।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত, সহকারী সচিব ব্লেইক (তৎকালীন), এমনকি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন পর্যন্ত আমাকে হুমকি দেন যে, ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে অপসারণ করা হলে বিশ্ব ব্যাংকের পক্ষ থেকে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন প্রত্যাহার করা হবে। এমনকি ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টর পক্ষ থেকে আমার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে তিনবার ডেকে পাঠিয়ে ড. ইউনূসকে যেন সরানো না হয় সেজন্য আমাকে বোঝাতে বলা হয়। কেন একজন নোবেল বিজেতার ব্যাংকের একটি এমডি পদ আঁকড়ে থাকার মোহ থাকবে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমরা তাকে (ড. ইউনূস) প্রস্তাব করেছিলাম ব্যাংকটির এমিরেটাস উপদেষ্টা হিসেবে যুক্ত থাকার জন্য। কিন্তু তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের নিজ পদে অধিষ্ঠিত থাকার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে লবিং করেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ব ব্যাংক একটি বড় সংস্থা। কাজেই কেউ কেউ বিশ্বাসও করতে শুরু করেন যে হয়তো তাদের অভিযোগের সত্যতা থাকলেও থাকতে পারে। কিন্তু বিশ্ব ব্যাংক তাদের এই অভিযোগ প্রমাণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। আমরা যদি দুর্নীতিই করতাম তাহলে বিশ্ব ব্যাংকের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করতে পারতাম না।’
তিনি আরও বলেন, ‘মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে শুকরিয়া, কেননা পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে ভিত্তিহীন দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থ প্রত্যাহারের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা বিচার পেল।…তারা আমার ছেলে ও মেয়ে, বোন, আমার মন্ত্রিসভার সদস্য, উপদেষ্টা, সচিবদের এই অভিযোগের সঙ্গে জড়াতে চেয়েছে।… যাই হোক আমি বলব, সত্য এবং ন্যায়ের পথে এবং সৎসাহস থাকলেই কেবল কোনও একজন মানুষ এ ধরনের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারে। কানাডার আদালতের রায় আমাদের অনুকূলে এসেছে, কারণ আমরা সবসময় সত্য ও ন্যায়ের পথে ছিলাম।’
পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন প্রত্যহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত এবং কানাডার আদালতে মামলার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা এ বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির ভ্রান্ত অভিযোগে যাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিল বিশ্ব ব্যাংক সে সব ক্ষতিগ্রস্তরা এজন্য আইনের আশ্রয় নিতে পারে।’
জনগণের অর্থ আত্মসাতের জন্য তার সরকার ক্ষমতায় আসেনি বরং জনগণের কল্যাণের জন্য রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কানাডার আদালতের রায়ের মধ্য দিয়ে এই সত্যটিই যেন আবারও প্রতিভাত হলো।’
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, ইউওরোপিয় আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল দাসগুপ্ত ও সাধারণ সম্পাদক এম এ গনী, জার্মানি আওয়ামী লীগ সভাপতি বশিরুল আলম সাবু, প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা ইদ্রিস ফরাজী, হাসান ইকবাল, নুরুল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে জার্মানি ছাড়াও ইতালি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড, স্পেন, পর্তুগাল, সুইডেন ও নরওয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা অংশ নেন। সূত্র: বাসস।