নূর হোসেন ও তারেক সাঈদসহ ২৬ জনের মৃত্যুদণ্ড
দিনবদল নিউজ: নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাত খুন মামলায় নূর হোসেন, র্যাবের তিন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম এম রানা ও মেজর আরিফ হোসেনসহ ২৬ জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। বাকি ৯ জনকে সাত থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির মধ্যে তিনজন পলাতক। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ শহরের কাছ থেকে তৎকালীন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করে হত্যার অপরাধে আসামিদের সাজার এই রায় দেন আদালত।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেন সোমবার সকাল ১০টা ৪ মিনিটে রায় পড়া শুরু করেন। রায় পড়া শুরুর ৫ মিনিটের মাথায় বিচারক রায় ঘোষণা করেন। আসামিদের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় এ রায় দিয়েছেন আদালত।
গ্রেফতার ২৩ আসামির সবাই আদালতে উপস্থিত ছিলেন। গত বছরের ৩০ নভেম্বর রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ করেন আদালত।
এদিকে রবিবার রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এই মামলার রায় সম্পর্কে তার প্রত্যাশার ব্যক্ত করতে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশের সাধারণ মানুষ চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায়। যাদের কাজ জনগণের জানমাল রক্ষা করা, তারাই যদি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত হন, তা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।’
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় খান সাহেব ওসমান আলী জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সামনে থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২নং ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, নজরুলের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিম অপহৃত হন। পরদিন ২৮ এপ্রিল ফতুল্লা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন নজরুল ইসলামের স্ত্রী। ওই মামলায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নূর হোসেনকে প্রধান করে ৬জনকে আসামি করা হয়। এছাড়া আইনজীবী চন্দন সরকারের মেয়ের জামাই বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা মডেল থানায় আরও একটি মামলা করেন। ৩০ এপ্রিল বিকেলে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ৬ জন এবং ১ মে সকালে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে স্বজনরা লাশগুলো শনাক্ত করেন।
এদিকে, ৭ খুনের ঘটনার পর নিহত নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম অভিযোগ তোলেন, ‘৬ কোটি টাকার বিনিময়ে র্যাবকে দিয়ে ওই সাতজনকে হত্যা করিয়েছে নূর হোসেন। এ অভিযোগের পর ২০১৪ সালের ৬ মে র্যাব-১১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মাহমুদ, সাবেক অধিনায়ক মেজর আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার এম এম রানাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। ১৭ মে দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ঢাকার সেনানিবাস এলাকা থেকে মিলিটারি পুলিশ, ক্যান্টনমেন্ট থানা পুলিশ ও নৌ-বাহিনীর গোয়েন্দারা এমএম রানাকে আটক করে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের কাছে তুলে দেন। পরে এ তিনজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
তিন জন তদন্তকারী কর্মকর্তার ১১ মাসের দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল ভারতের কলকাতায় গ্রেফতার হওয়া নূর হোসেন, র্যাবের চাকরিচ্যুত তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। এজাহারভুক্ত ৫ আসামি অব্যাহতির আবেদন করা হয়। মামলায় ১২৭ জনকে সাক্ষী করা হয়। ১৬২ ধরনের আলামত উদ্ধার দেখানো হয়েছে। মামলায় অভিযুক্ত ৩৫জনের মধ্যে ২৩জন গ্রেফতার রয়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পিপি ওয়াজেদ আলী খোকন জানান, সাত খুনের দু’টি মামলায় গ্রেফতারকৃত ২৩ জনের উপস্থিতিতে ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালতে চার্জ গঠন করেন। শুনানির সময়ে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা ২৩ জনের অব্যাহতি আবেদন করলে আদালতে নাকচ করে দেন। পলাতক ১২ জনসহ সাত খুনের দুটি মামলায় অভিযুক্ত ৩৫ জনের সবার বিরুদ্ধেই চার্জগঠন করা হয়। ১২ জনের অনুপস্থিতিতেই মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। তাদের পক্ষে ৫জন আইনজীবী নিযুক্ত করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।