নির্যাতনের ওই ছবি আমার না’ আমাকে পুলিশ ধরেছিল একথা ঠিক

0

2d60c081f114d3de854733e806eeb5f3-586f4989ed286

দিনবদল নিউজ: যশোরে ‘দুই লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের’ জন্য এক যুবককে ধরে নিয়ে থানায় উল্টো করে ঝুলিয়ে নির্যাতনের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করা হয়। এই ছবি নিয়ে এলাকাবাসী ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। তবে যার ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে দাবি করা হয় সেই আবু সাঈদ বলছেন, এটি তার ছবি নয়। সাঈদ বলেন, ‘ছবিতে যাকে দেখা যাচ্ছে তিনি শারীরিকভাবে আমার চেয়ে মোটা। আর সেদিন রাতে পুলিশ আমাকে লুঙ্গি পরা অবস্থায় আটক করে। ওই ধরনের জিন্স বা টি-শার্ট আমার নেই।’

শুক্রবার বেলা ১টার দিকে যশোর প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

পরে ভাইরাল হয়ে যাওয়া ছবিটি যে তার (সাঈদ) নয়, এ বিষয়ে প্রমাণ হিসেবে তিনি তার হাত এবং শরীরের পেছনের অংশ সাংবাদিকদের দেখান।

আবু সাঈদ বলেন, ‘বুধবার রাতে এলাকার একটি চায়ের দোকান থেকে পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে যায়। পরে থানায় নিয়ে আমি দুই নম্বরি ব্যবসা করি কিনা জানতে চায়। আমি ওইসব দুই নম্বরি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নই। সে কারণে পরদিন রাত ৮টার দিকে পুলিশ আমাকে ছেড়ে দেয়। আমাকে কোনও নির্যাতন করা হয়নি।’

এরপরই বেলা দেড়টার দিকে প্রেসক্লাবে আসেন কোতোয়ালি থানার ওসি ইলিয়াস হোসেন। তিনি বলেন, ছবিটি ভাইরাল হওয়ার পর পুলিশের পক্ষ থেকে তালবাড়িয়ার আবু সাঈদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান ঘটনাটি সম্পর্কে জেনেছেন। তিনি এই ঘটনা তদন্তে দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটির সদস্যরা হলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহীদ মো. আবু সরোয়ার এবং এএসপি ‘ক’ সার্কেল নাইমুর রহমান। তদন্তে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একইসঙ্গে তিনি (এসপি মহোদয়) প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি ও সম্পাদককে অনুরোধ করেছেন, যে বা যারা এই ছবি দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছেন- তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যে।

c1751bd10ad64439351364a62a1aea6f-586f498a6a305

গত বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় এক যুবককে যশোর কোতোয়ালি থানার ভেতরে দুটি টেবিলের মাঝখানে মোটা একটি লাঠির মাধ্যমে উল্টো করে ঝুলিয়ে নির্যাতনের একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু ছবিটি কার এবং কী কারণে তাকে থানায় এভাবে রাখা হয়েছে- সে বিষয়ে কোনও কিছু জানা সম্ভব হয়নি। পরে জানা যায়, ওই যুবকের নাম আবু সাঈদ। বাড়ি যশোর সদরের তালবাড়িয়া কলেজপাড়ায়। ‘দুই লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের’জন্য তাকে এভাবে নির্যাতন করা হয় বলে গুঞ্জন ওঠে। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে ৫০ হাজার টাকা পেয়ে একদিন পরেই ওই যুবককে ছেড়ে দেওয়ার। তবে পুলিশ এবং ‘সেই যুবক’ আবু সাঈদ (৩২) সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। আবু সাঈদ দাবি করেছে, পুলিশ তাকে কোনও নির্যাতন করেনি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় থানায় ধরে নেওয়ার একদিন পরেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, ৪ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৯টার দিকে তালবাড়িয়া কলেজপাড়া থেকে সাঈদকে আটক করে সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যরা। কোতোয়ালি থানার কথিত সিভিল টিমের সদস্য এসআই নাজমুল ও এএসআই হাদিকুর রহমান তাকে ধরে নিয়ে যান। তারা সাঈদকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দুই টেবিলের মাঝখানে উল্টো করে ঝুলিয়ে মারধর করেন। সাঈদকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য তার পরিবারের কাছে ২ লাখ টাকা দাবি করা হয়। পরে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে তাকে পরদিন ছেড়ে দেওয়া হয়।

অভিযুক্ত এসআই নাজমুল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বৃহস্পতিবার রাতে তিনি সাংবাদিকদের জানান, তিনি গত দুদিন ধরে ঢাকায় অবস্থান করছেন। সাঈদ নামে কাউকে আটক বা চাঁদা আদায়ের সঙ্গে তিনি জড়িত নন।

এএসআই হাদিকুর রহমান জানান, এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। সাংবাদিকদের ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।

তবে এ বিষয়ে সাঈদের বড়ভাই আতিয়ার রহমান বলেন, ‘বুধবার রাতে আমার ভাইকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ না থাকায় পুলিশ তাকে ছেড়ে দিয়েছে। পুলিশ কোনও টাকা নেয়নি কিংবা তাকে মারধরও করেনি।’

সাঈদের স্ত্রী বিলকিস খাতুন ও ছোটভাই আশিকুর রহমানও এর আগে দাবি করেন ফেসবুকে যে উল্টো ছবি দেখা যাচ্ছে- সেটা তার ভাইয়ের না।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন জানান, শুক্রবার সকালে সাংবাদিকরা আসার আগেই এলাকায় পুলিশ এসেছিল। তারা সাঈদদের বাড়িতেও গিয়েছিল। ভয়ে এখন ওই বাড়ির লোকজন সত্য কথা বলছে না।

স্থানীয় বাসিন্দা হাফিজুর রহমান ও কামরুল ইসলাম জানান, সাঈদ নেশা করে। তবে মাদকের ব্যবসা করে কিনা তা তাদের জানা নেই।

এই ওয়ার্ডের (৯ নম্বর ওয়ার্ড, নওয়াপাড়া ইউনিয়ন) ইউপি সদস্য আসমত আলী চাকলাদার জানান, বুধবার রাতে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল বলে তিনি শুনেছেন। ৪৯ অথবা ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে সাঈদ ছাড়া পেয়েছে।

তিনি আরও জানান, সাঈদের বিরুদ্ধে এলাকায় ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। আগে সে ফেনসিডিল ব্যবসা করতো বলে তার কাছে অভিযোগ রয়েছে। ফেসবুকে উল্টো করে যে যুবকের ছবি দেওয়া হয়েছে- সেটি সাঈদের বলে তিনিসহ বাজারের কয়েকজন শনাক্ত করেন।

এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ওসি ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘ছবিটি এখন নয়, বেশ আগে তোলা। আর এসআই নাজমুল একটি মামলার সাক্ষ্য দিতে সিসি নিয়ে ঢাকায় রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়।’

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *