নারীসহ চার জঙ্গি নিহত, আর কেউ জীবিত নেই
দিনবদল ডেক্স: সিলেটের শিববাড়ির আতিয়া মহলে একজন নারীসহ চার জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান। তিনি বলেন, ‘জঙ্গি আস্তানায় আর কোনও জীবিত জঙ্গি নেই।’ সোমবার সন্ধ্যায় প্রেস ব্রিফিংকালে তিনি এই তথ্য জানান।
ফখরুল আহসান বলেন, ‘ভেতর থেকে তারা এক্সপ্লোসিভ ফাটিয়েছে, গ্রেনেড চার্জ করেছে, গুলি করেছে।’ তিনি বলেন, ‘জঙ্গিরা সুইসাইডাল ভেস্ট পরা ছিল। পুরো বাড়ি কমান্ডোরা তল্লাশি করে দেখেছেন। প্রয়োজনে আরও তল্লাশি করা হবে।’
আস্তানা আতিয়ায় এখনও অভিযান শেষ হয়েনি বলে জানিয়ে ফখরুল আহসান বলেন, ‘এখনই অভিযান শেষ করছি না। ভেতর থেকে লাশ বের করা হয়েছে। চার জনের মধ্যে তিনজন পুরুষ, একজন নারী। তবে তারা কখন মারা গেছে, এর ঠিক সময় বলা কঠিন।’
এক প্রশ্নের জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান বলেন, ‘নিহতরা কারা, এটা পুলিশ-র্যাব পরে বুঝতে পারবে। পুরো ভবন তল্লাশি করা হচ্ছে। প্রয়োজনে আরও করা হবে।’
পুরো ভবনটা যে অবস্থায় আছে সেটা বেশ ঝুকিপূর্ণ উল্লেখ করে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান বলেন, ‘সেজন্য সতর্কতার সঙ্গে এগোতে হচ্ছে। যে চারজন এখানে ছিল, তারা বেশ ভালো প্রশিক্ষিত। তাদের খুঁজে বের করে মারা হয়েছে। এটা কিন্তু বিশেষ করে সেনাবাহিনীর জন্য একটা বড় সফলতা বলে মনে করি। আমাদের অভিযান এখনও চলমান আছে। আরও হয়তো কিছু সময় লাগতে পারে। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশ অনুযায়ী আমরা এগিয়ে যাব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এখান থেকে যখন সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে, তখন আমরা স্থানটা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করব। নিহতদের মধ্যে শীর্ষ কোনও জঙ্গি আছে কিনা, জানতে চাইলে বলেন, এটা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। সেটা র্যাব বা পুলিশ নিশ্চিত করতে পারবে। আমরা ভেতর থেকে ডেড বডি নিয়ে এসেছি। আস্তানা থেকে তারা কেউ বের হতে পারেনি। অপারেশন প্রক্রিয়ার মধ্যেই তারা নিহত হয়েছে। তবে, তারা কে কখন নিহতে হয়েছে, সুনির্দিষ্টভাবে তার সময় বলা যাচ্ছে না।’
বিস্ফোরণের পর আগুন লেগেছিল বলে মনে হয়েছে। ধোঁয়া দেখা গেছে। এটা আসলে কী ধরনের বিস্ফোরণ ছিল?— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সম্ভবত সুইসাইডাল ভেস্টের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল জঙ্গিরা। তারই একটি বড় শব্দ হয়েছে।’ আগুনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে গ্রেনেড চার্জ করা হয়েছে, ফায়ার করা হয়েছে। টিয়ার গ্যাস ফায়ার করেছি। এর ভেতরে বাসিন্দাদের ব্যবহৃত কাঁথা-বালিশসহ কাপড়চোপড় ছিল। সেজন্য ধোঁয়া দেখা যেতে পারে। আগুন লাগলে সেটা আরও বিপজ্জনক হতো। সেজন্য সঙ্গে-সঙ্গে আমরা নিভিয়ে ফেলেছি। পুরো ভবন আমরা মোটামুটি তল্লাশি করেছি। প্রয়োজন হলে আরও করব।’
জঙ্গিদের শক্তিমত্তার ধারণা সম্পর্কে জানতে চাইলে ফখরুল আহসান বলেন, ‘প্রথম দিনের ঘটনা। বাড়িটির কলাপসিবল গেটের সামনে একটি বড় বালতির মধ্যে বিস্ফোরক ছিল। ওটা যখন ডেটোনেট করেছে তখন পুরো কলাপসিবল গেটটা উড়ে এসে পাশের বিল্ডিংয়ে পড়েছে। ওখানে আমাদের তিন চারজন সদস্য ছিলেন, তারা ছিটকে গেছেন। পুরো বিল্ডিং কেঁপে উঠেছে। এ রকম এক্সপ্লোসিভ তো ভেতরে আরও থাকতে পারে।’ অভিযানের কোনও ছবি আজ দিতে পারবেন না বলে জানান তিনি। জঙ্গিদের সর্বশেষ প্রতিরোধ কেমন ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা এক্সপ্লোসিভ ফাটিয়েছে, গ্রেনেড চার্জ করেছে, স্মল আর্মস ব্যবহার করেছে। তাদের যা ছিল সব ব্যবহার করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কোনও সদস্য আহত হননি, কোনও ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি।’
এর আগে রবিবার সেনাবাহিনীর ব্রিফিংকালে দু’জন পুরুষ নিহতের খবর দেওয়া হয়। এরপর সোমবার ব্রিফিংকালে একজন নারীসহ দু’জন নিহতের তথ্য জানানো হয়। এই চারজনের মধ্যে কে কখন নিহত হয়েছে, ব্রিফিংকালে তাদের মৃত্যুর দিনক্ষণ জানানো হয়নি।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দিবাগত মধ্যরাতে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানাধীন শিববাড়ি এলাকায় ‘আতিয়া মহল’-এর নিচতলায় জঙ্গিরা অবস্থান করছে বলে জানতে পারে ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। শুক্রবার (২৪ মার্চ) সকাল ৮টার দিকে ওই বাড়ির ভেতর থেকে গ্রেনেড ছোড়া হয়। পরে ঢাকা থেকে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াতকে পাঠানো হয় ঘটনাস্থলে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সন্ধ্যা থেকে পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণে নেয় সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডো দল। পরদিন তারা ওই ভবনের অন্যান্য বাসিন্দাকে নিরাপদে সরিয়ে আনে।
২৫ মার্চ সন্ধ্যায় আতিয়া মহলের পাশে দুই দফা কাউন্টার অ্যাটাকে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছয় জন নিহত হন। আহত হয়েছেন র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধানসহ অন্তত ৫০ জন। রবিবার (২৭ মার্চ) সন্ধ্যায় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, অভিযানে তাদের হাতে অন্তত দুই জঙ্গি নিহত হয়েছেন। এরপর সোমবার আরও দুজন নিহত হওয়ার তথ্য জানায় সেনাবাহিনী।