নবনিযুক্ত ইসি নিয়ে সরগরম রাজনীতির মাঠ
দিনবদল ডেক্স: নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বাহাস চলছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, সার্চ কমিটির নামে জাতির সঙ্গে রসিকতা করা হয়েছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ইতোমধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ দাবি করেছেন। বিএনপির অন্য নেতারাও বলছেন, এই নির্বাচন কমিশনারের ওপর তাদের আস্থা নেই।
এদিকে আওয়ামী লীগের নেতারা ইসি গঠন নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যকে পাত্তাই দিচ্ছেন না। তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, বিএনপির মানা না মানায় কিচ্ছু যায় আসে না। যারা আজিজ মার্কা নির্বাচন কমিশন গঠন করে তাদের কাছ থেকে শিখতে হবে না কীভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হয়।
আওয়ামী লীগ আরো জানিয়ে দিয়েছে, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনেই আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। শুধু জাতীয় সংসদ নয়, আগামী ৫ বছরে সব নির্বাচন এই কমিশনের অধীনেই হবে।
সার্চ কমিটির সুপারিশের পর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গত ৬ ফেব্রুয়ারি কে এম নুরুল হুদাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করেন। অন্যান্য কমিশনাররা হলেন- সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার, সাবেক সচিব মো. রফিকুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী।
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করার পর থেকেই বিএনপি এই কমিশনের বিষয়ে আপত্তি তুলেছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ইতোমধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ দাবি করেছেন।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বিএনপির বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বিএনপির সমস্যা হচ্ছে কোনো কিছু শুরু হলেই তারা চাপ সৃষ্টির জন্য নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেয়। তাতে কোনো লাভ হবে না।
নতুন নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি একক ক্ষমতাবলে ইসি গঠন না করে সবার সঙ্গে আলোচনা করেছেন। বিএনপি নামের তালিকা দিয়েছে। তাদের তালিকা থেকেও কমিশনের সদস্য আছে। সুতরাং এখন বিএনপি নির্বাচন কমিশনকে মামলো কি মানলো না তাতে জাতির কিছু আসে-যায় না।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আন্দোলনে ব্যর্থতার কারণে হতাশ বিএনপি বর্তমানে বেপরোয়া হয়ে পড়েছে। আর বেপরোয়া চালক যেমন দুর্ঘটনার কারণ তেমনি বিএনপিও দুর্ঘটনা ঘটিয়ে বসতে পারে।
ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, বিএনপি নেতারা কখন যে কী বলে তারা নিজেরা ছাড়া কেউ জানে না। তিনি প্রশ্ন করেন, সিইসি কি আওয়ামী লীগের মুখপাত্র? এ ধরনের বক্তব্য কি তাদের দেয়া উচিৎ হয়েছে?
আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন প্রশ্নে বিএনপির নেতাদের বক্তব্যের জবাবে বলেন, বিএনপির সময় আমরা আজিজ সাহেব নামে একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার দেখেছি। তিনি মাগুরা ও মিরপুরের নির্বাচন জাতিকে উপহার দিয়েছিলেন। ওই সময় নির্বাচনের বাবার নাম ভুলিয়ে দিয়েছিলেন। এখন নির্বাচন কমিশন কীভাবে গঠন করতে হয় বিএনপির কাছ থেকে শিখতে হবে না।
আইনমন্ত্রী আরো বলেন, আওয়ামী লীগের তালিকা থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশন (সিইসি) বানানো হয়নি। সংবিধান ও আইনের মাধ্যমেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, নবনিযুক্ত নির্বাচন কমিশন এখনও কাজই শুরু করেননি। কাজ শুরু করার আগে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা যুক্তিসংগত নয়।
তিনি বলেন, বিএনপি ভুল রাজনীতির কারণে হতাশাগ্রস্থ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ না করাটা ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। এই ভুলের দায়ভারটা তারা নির্বাচন কমিশনের ওপর চাপিয়ে সান্ত্বনা খোঁজার চেষ্টা করছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান নতুন গঠিত নির্বাচন কমিশনের কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করার নামে জাতির সঙ্গে রসিকতা করা হয়েছে। কেননা সার্চ কমিটি যাদের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দিয়েছেন তারা কেউ প্রধান নির্বাচন কমিশন হননি। শুধু তাই নয়, সকলে মিলে যার নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল তিনিও হননি। তাহলে সার্চ কমিটির নামে কেন এই রসিকতা?
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনার মূল প্রতিষ্ঠান। আর এই প্রতিষ্ঠান যদি নিরপেক্ষভাবে কাজ না করে তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আর সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন হবে না।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের সমালোচনায় বলেন, এবার যিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হলেন সেই খান মোহাম্মদ নূরুল হুদা কমিটেড আওয়ামী লীগার। সে আওয়ামী লীগ দলীয় চেতনায় কাজী রকিবউদ্দিনের চেয়েও আরো কয়েক ধাপ অগ্রবর্তী। তার অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে দেশের মানুষের মধ্যে আস্থার সৃষ্টি হয়নি।
বিগত নির্বাচন কমিশন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে ও সরকারের হুকুমে রকিবউদ্দিন নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। রক্তরঞ্জিত করেছেন ভোট ব্যবস্থাকে। এদেশে নির্বাচনী উৎসবকে তিনি কারবালার মতো শোকের মাতমে পরিণত করেছেন। তিনি ৫ জানুয়ারী তামাশার নির্বাচনসহ সকল নির্বাচনে লাশ ও রক্তাক্ত নির্বাচন উপহার দিয়েছেন। যেটি ইতিহাসে বিবর্ণ কালো অধ্যায় হয়ে রয়েছে। জাতি কাজী রকিবউদ্দিনকে কোনদিন ক্ষমা করবে না।