দ্রুত পাওনা পরিশোধ চান ভারতীয় রফতানিকারকরা

0

untitled-3_282399

দিনবদল ডেক্স:বাংলাদেশে পণ্য রফতানি করে অনেক ক্ষেত্রে পাওনা পেতে দেরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ভারতীয় রফতানিকারকরা। দেশটির রফতানিকারকরা চান, বন্দরে পেঁৗছানোর পর ব্যাংকগুলো পণ্য খালাসের অনাপত্তি দেওয়ার সময়েই পাওনা পরিশোধ করুক। সম্প্রতি ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি লিখে এ দাবি জানিয়েছে। চিঠিতে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোকে ভারতীয় রফতানিকারকদের পাওনা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশনা দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ভারতীয় দূতাবাসের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ এ বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করার উদ্যোগ নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। চলতি মাসেই স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি পণ্যের মূল্য পরিশোধে ব্যাংকগুলোকে বিশেষ নির্দেশনা দিয়ে সার্কুলারটি জারি করা হবে। পাশাপাশি যেসব ব্যাংকে ভারতীয় রফতানিকারকদের পাওনা অতিরিক্ত সময় ধরে আটকে আছে সে ব্যাংকগুলোকে দ্রুত পাওনা পরিশোধের ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মো. রাজী হাসান সমকালকে বলেন, ভারতীয় দূতাবাস তাদের দেশের রফতানিকারকদের কিছু সমস্যার কথা জানিয়ে একটি চিঠি দিয়েছে। বিষয়টি বাংলাদেশ পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে।

চিঠিতে ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব (বাণিজ্যিক) শিশির কোঠারি চিঠিতে কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের নাম উল্লেখ করে বলেছেন, এ ব্যাংকগুলো সময়মতো পাওনা পরিশোধ করছে না। পাশাপাশি ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুরে অবস্থিত কয়েকটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকেও চিঠি দিয়েছেন তিনি। চিঠিতে দ্রুত পাওনা পরিশোধ না করলে আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, পণ্যের মান খারাপ, পণ্যের পরিমাণ কম ও সময়মতো শিপমেন্ট না হওয়া; এলসি ডকুমেন্টের মধ্যে অমিল থাকাসহ বিভিন্ন কারণে অনেক ক্ষেত্রে রফতানি মূল্য পাঠাতে পারে না ব্যাংক। সব সময় এবং সব ব্যাংকের ক্ষেত্রে এ সমস্যা হচ্ছে; তা নয়। এমনও দেখা যায়, অনেক সময় ভারতীয় রফতানিকারকদের পাঠানো পণ্য মানহীন হয়, আবার পরিমাণেও কম থাকে। অনেক ক্ষেত্রে পণ্য আগে পাঠিয়ে পরে এলসি করে। এসব জটিলতার কারণে সময়মতো রফতানি মূল্য পরিশোধ আটকে থাকে। বাংলাদেশি রফতানিকারকদের পাওনা পরিশোধেও ভারতের ব্যাংকগুলোতে এমন সমস্যা হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বেসরকারি একটি ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, গ্রাহক টানার জন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণে আমদানি মূল্য সময়মতো পরিশোধ হয় না। কোনো আমদানিকারকের পক্ষে এলসি (ঋণপত্র) খোলার আগে দেখে নিতে হবে, ওই গ্রাহক আমদানি মূল্য পরিশোধের সক্ষমতা রাখেন কি-না। আবার পণ্য আমদানির পর বন্দর থেকে খালাস করতে গেলে ব্যাংকের অনাপত্তিপত্র লাগে। তখনই আমদানিকারকের অর্থ আদায় করে নেওয়া উচিত। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো তা করে না। আবার আমদানিকারক ও ব্যাংকের যোগসাজশে আমদানি মূল্য দেরি করে পরিশোধ করা হয়ে থাকে। অনেক আমদানিকারক পণ্য বিক্রি করে অর্থ পরিশোধ করে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক এলসির ডকুমেন্টের অমিল দেখিয়ে পাওনা পরিশোধে দেরি করে।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার ভারত। গত অর্থবছরে বাণিজ্যের পরিমাণ ৬১৪ কোটি ডলারের বেশি। বাংলাদেশ থেকে রফতানি হয়েছে ৬৮ কোটি ৯৬ লাখ ডলারের পণ্য। এর বিপরীতে প্রায় আট গুণ ৫৪৫ কোটি ডলার আমদানি হয়েছে। এ বিশাল বাণিজ্যের বড় অংশই স্থলবন্দরগুলোর মাধ্যমে হয়ে থাকে।

বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, হোম টেক্সটাইল, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য, পাদুকা, কাঁচা পাট, পাটজাত পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্য রফতানি হয়। ভারত থেকে তুলা ও কাপড়, গাড়ি, যন্ত্রপাতি, মসলা, ফল, পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য
আমদানি হয়।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *