দেশে প্রতি বছর ১২ হাজার শিশু ক্যানসারে আক্রান্ত হয়

0

image-64703-1487183194

দিনবদল ডেক্স: বাংলাদেশে প্রতি বছর ১২ হাজারেরও বেশি শিশু ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। এসব শিশুর চিকিৎসায় দেশের হাসপাতালগুলোতে মাত্র ৯০টি শয্যা আর ২৫ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। যা মরণব্যাধি শিশু ক্যানসার চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

তারা বলেছেন, দেশে ক্যানসার আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। ক্যানসারের মূল কারণ হচ্ছে জিনগত পরিবর্তন। এ ছাড়া ভেজাল খাদ্য, খাদ্যে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার, বায়ুদূষণ ও বিকিরণের মাত্রা বাড়ার কারণে প্রতিনিয়ত শিশুদের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ছে। শিশুরা ব্লাড ও ব্রেইন ক্যানসারে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এ ছাড়া কোলন, লিভার ও কিডনি ক্যানসারেও আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোল্লা ওবায়েদুলাহ বাকী আমাদের সময়কে বলেন, দেশে প্রায় ১২ লাখ ক্যানসার রোগী রয়েছেন। প্রতিবছর আরও নতুন করে আড়াই লাখ ক্যানসার রোগী শনাক্ত হচ্ছে। আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় পাঁচ শতাংশ শিশু। এ সংখ্যা ১২ হাজারেরও বেশি। আমাদের দেশে ক্যানসার রোগীর তুলনায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স ও টেকনোলজিস্টের সংখ্যাও কম। এতে করে ক্যানসার আক্রান্তরা ভালো চিকিৎসা পাচ্ছে না।

বিশেষজ্ঞরা জানান, ক্যানসার চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ক্যানসারের চিকিৎসা করাতে গিয়ে অনেক পিতা-মাতাই নিঃস্ব হওয়ার পাশাপাশি হারান আদরের সন্তানকেও। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যানসার ধরা পড়লে শিশু ক্যানসারের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ নিরাময় করা সম্ভব। ক্যানসারের লণগুলো হলো, শিশু খুব দ্রুত ফ্যাকাসে হয়ে যায়, পেটে অস্বাভাবিক চাকা অনুভূত হয়, শরীরে লাল বা কালো চাকা দেখা দেয়, দ্রুত ওজন কমে যায়, অস্বাভাবিক ব্যথা হয়, ঘন ঘন জ্বর হয়, পেট, গলা কুঁচকি বা বগলে গোটা বের হয়, চোখের মণি সাদা হয়ে যায়, হাড় বা হাড়ের কোনো প্রান্ত বা অস্থিসন্ধি ফুলে যায়, বিনা আঘাতে রক্তপাত হয়। এসব লণ দেখা দিলে অবশ্যই ক্যানসার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া দরকার।

তারা আরও জানান, এক সময় ক্যানসার হলে নাই রা একথা বলা হতো। কিন্তু বর্তমানে সময় বদলেছে। এখন যদি সঠিকভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয় তাহলে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ক্যানসার রোগ নিরাময় করা সম্ভব। ক্যানসার চিকিৎসার প্রসারতা বাড়াতে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। শিশু ক্যানসার রোগীর চিকিৎসা প্রদানে দেশে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও বেডের সংখ্যা বাড়ানো খুবই জরুরি।

বিশেষজ্ঞদের দাবি, বাংলাদেশে শিশু স্বাস্থ্যের অন্যান্য সমস্যাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হলেও শিশু ক্যানসারের বিষয়টি তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি এবং শিশুদের ক্যানসার চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকও তৈরি হয়নি। চিকিৎসক স্বল্পতায় তাদের চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে।

জানা গেছে, বিশ্বে প্রতি বছর যে দুই লাখ শিশু ক্যানসারে আক্রান্ত হয় তার প্রায় ৮০ শতাংশ মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। যেখানে আক্রান্তদের বেঁচে থাকার হার মাত্র ৫ শতাংশ। তবে উন্নত দেশগুলোতে বেঁচে থাকার হার প্রায় ৮০ শতাংশ। বাংলাদেশে শিশু ক্যানসারে আক্রান্তদের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১২ হাজার শিশু ক্যানসার আক্রান্ত হয়।

বাংলাদেশে শিশুদের ক্ষেত্রে ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর অবস্থা ও চিকিৎসা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু হেমাটোলজি অ্যান্ড অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. চৌধুরী ইয়াকুব জামাল আমাদের সময়কে বলেন, গত পাঁচ বছর ধরে বিএসএমএমইউতে আগত শিশু ক্যানসার রোগী পরিসংখ্যান করা হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে শিশু ক্যানসারের জনসংখ্যা ভিত্তিক সঠিক কোনো হিসাব নাই। কিন্তু বিশ্বের উন্নত দেশে প্রতি মিলিয়নে ১৬০ জন শিশু ক্যানসারে আক্রান্ত। সেই হিসাব অনুযায়ী প্রতি বছর আনুমানিক ৬ থেকে ৮ হাজার শিশু নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসায় পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এখনো তৈরি হয়নি। বর্তমানে ২৪ থেকে ২৫ জন শিশু ক্যানসার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরির জন্য ডক্টর অব মেডিসিন (এমডি) কোর্স চালু করা হয়েছে। এখন থেকে শিশু ক্যানসার বিশেষজ্ঞ তৈরি হবেন। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে শিশু ক্যানসার রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কী কারণে শিশু ক্যানসার রোগী বাড়ছে তার কোনো কারণ নেই।

এদিকে শিশুদের ক্যানসার রোগ সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব পেডিয়াট্রিক অনকোলজির উদ্যোগে প্রতি বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি ‘ইন্টারন্যাশনাল চাইল্ডহুড ক্যানসার ডে’ পালন করা হয়। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও গতকাল বুধবার দিবসটি পালিত হয়েছে। এ উপলে সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় একটি র‌্যালি করে। বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খানের নেতৃত্বে র‌্যালিতে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. আলী আসগর মোড়ল, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল হান্নান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল ও শিশু হেমাটোলজি অ্যান্ড অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. চৌধুরী ইয়াকুব জামালসহ অন্যান্য চিকিৎসক অংশ নেন।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *