দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আল আমিনকে তার ইচ্ছাশক্তিই এগিয়ে নিচ্ছে

0

al_amin120170112122609

দিনবদল নিউজ: ‘আমরা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করলে তো আর আমাদের সক্ষমতা প্রমাণ করতে পারবো না। তাই অন্যসব সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে সবাইকে দেখাতে চাই যে, আমরাও কিছু করতে পারি বা করছি। আমরা যে দেশের বোঝা না, সেটার প্রমাণ রাখতে চাই।’ কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রাম হাজেরা-তজু বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের দ্বাদশ শ্রেনীর শিক্ষার্থী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আল আমিন।

গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার থানার রসুলপুর গ্রামে। বাবা ফুল মিয়া একজন খুচরা দোকানি, মা গৃহিণী। ছয় ভাই আর তিন বোনের সংসারে আল আমিন চতুর্থ কিন্তু ছেলের দিক থেকে ফুল মিয়া দম্পতির বড় ছেলে সে। ছোট বেলায় তার ইচ্ছা ছিল অন্যসবার মতো সেও একদিন স্কুলে যাবে, পড়ালেখা করে বাবার কষ্ট লাঘব করবে। সকালের সূর্যের মতো সব কিছুকে রঙিন করে দেখতে ভালবাসতো শিশু আল আমিন। দুনিয়ার সব কিছুকেই হয়তো একদিন আপন আলোয় আলোকিত করতে চাইতো সে।

কিন্তু তা আর হয়ে উঠেনি আল আমিনের। মাত্র সাড়ে তিন বছর বয়সেই হারায় দৃষ্টিশক্তি। আল আমিন বলেন, ‘মাত্র সাড়ে তিন বছর বয়সে আমার টাইফয়েড হলে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার কারণে আমার চোখের মনিগুলো চিরতরে নষ্ট হয়ে গেছে, যা চিকিৎসা করেও আর ভালো করা যাবে না।’

দিন মাস বছর পেরিয়ে ছয় বছর বয়স থেকেই আল আমিনের ইচ্ছানুযায়ী তার বাবা মা চেয়েছিল সে পড়ালেখা করে নিজের পায়ে দাঁড়াবে। কিন্তু আশেপাশে দৃ্ষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য কোনো বিদ্যালয় না থাকায় ভাঙতে বসেছিল তার স্বপ্নগুলো। কিন্তু তার বাবা ফুল মিয়া হাল ছেড়ে দেননি। সব সময় খোঁজ নিতেন আল আমিনদের মতো বাচ্চাদের পড়ালেখার করার উপযুক্ত বিদ্যালয়ের।

কুমিল্লায় একটা বেসরকারি বিদ্যালয়ের সন্ধান পেলেও সেখানে ভর্তি হতে পারেনি আসন সংখ্যা সীমিত হওয়ার কারণে। আল আমিনের পরিবারের আগ্রহ দেখে বেলাল নামক এক ডাক্তার তার বাবাকে চট্টগ্রামের এক প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের সন্ধান দেন। ফুল মিয়া আল আমিনকে নিয়ে ছুটে যান চট্টগ্রাম সরকারি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে। এ ব্যাপারে আল আমিন বলেন ‘২০০৬ এর দিকে আমি এই বিদ্যালয়ে আসি। শিক্ষক এবং সহপাঠীদের ভালোবাসা পেয়ে সবকিছু স্বাভাবিকভাবে ভাবতে শুরু করি।’

এ বিদ্যালয়ে শিক্ষা জীবনের হাতেখড়ি শুরু হয় আল আমিনের। চট্টগ্রামে এসেই প্রথম ব্রেইল পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত হয় সে। এখান থেকে পিএসসি, জেএসসি পাস করে। পরবর্তীতে চট্টগ্রামের রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সালে মানবিক বিভাগ থেকে ৩.৮৯ পেয়ে তার মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাজীবন শেষ করে। উচ্চ মাধ্যমিকে সে ভর্তি হয় হাজেরা-তজু বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের মানবিক শাখায়।

পড়ালেখার পাশাপাশি বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী আল আমিন গত বছর জুনিয়র দাবায় আন্তর্জাতিক রেটিং পয়েন্ট লাভ করে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে হয়েছেন কলেজ আন্তঃবিভাগ দাবা প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন। যার ফলে কলেজে সবার কাছে সে হয়ে ওঠেছে শ্রদ্ধার পাত্র। দাবার পাশাপাশি ক্রিকেট খেলায়ও তার প্রতিভার জুড়ি মেলে। বর্তমানে আল আমিন বাংলাদেশ জাতীয় ব্লাইন্ড ক্রিকেট দলের একজন সদস্য। অনুশীলন করছেন জাতীয় দলের ক্যাম্পিংয়ে।

ভবিষ্যতের লক্ষ্য নিয়ে আল আমিনের মন্তব্য হল, সে সমাজসেবক হতে চায়। আর প্রতিবন্ধীদের জন্য একটা ক্রিকেট ক্লাব করা তার এখন প্রাণের চাওয়া। পাশাপাশি একজন প্রথম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা হয়ে প্রমাণ করতে চায় তারাও একেকজন স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের যোগ্য সহযোদ্ধা।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *