দক্ষিণ এশিয়া ও পাশ্ববর্তী ১৪ দেশের পুলিশ প্রধানদের নিয়ে তিন দিনের সম্মেলনের শুরু
![](https://dinbodalnews24.com/wp-content/uploads/2017/03/police_276775.jpg)
![](https://dinbodalnews24.com/wp-content/uploads/2017/03/police_276775.jpg)
সমকাল প্রতিবেদক : জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় শুধু নিজের দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই যথেষ্ট নয়। জঙ্গিদের ভার্চুয়াল উপস্থিতি থাকতে পারে, যার কোনো সীমান্ত নেই। তাই জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় বিভিন্ন দেশের মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদানে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া জঙ্গিদের মোকাবেলা সরকারের একার দায়িত্ব নয়। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, ধর্মীয় চিন্তাবিদ, শিক্ষাবিদ সকলের ভূমিকা রয়েছে। কারাগারে পাঠানোর আগে তাদের রিহ্যাবিলেট করতে হবে। ধর্ম সর্ম্পকে সঠিক জ্ঞান ও শিক্ষা দিতে হবে। তা না হলে এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটতে থাকবে। জঙ্গিদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহে বিভিন্ন সংস্থার অভিন্ন ডাটাবেজ তৈরি করা জরুরি।
রোববার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে দক্ষিণ এশিয়া ও পাশ্ববর্তী ১৪ দেশের পুলিশ প্রধানদের নিয়ে তিন দিনের সম্মেলনের প্রথম দিন বক্তারা এসব কথা বলেন। এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে ইন্টারপোল ও বাংলাদেশ পুলিশ।
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, সরকার জঙ্গিদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশের ভূমিকা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছে। হলি আর্টিসানসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় চালানো জঙ্গিবিরোধী অভিযানে পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের কোনো সীমান্ত নেই। বিশ্বের নানা প্রান্তে তারা নৃশংস ও বর্বর হামলা করছে। তাদের মোকাবেলায় বিভিন্ন দেশের মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদান জরুরি। এই সম্মেলন সেই প্লাটফর্ম তৈরি করবে। সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম মোকাবেলায় আঞ্চলিক পর্যায়েও একটি সমন্বিত নীতি গ্রহণ করা দরকার। এ ছাড়া জঙ্গিবাদ দমনে জাতিসংঘ গৃহীত বিভিন্ন কৌশলগত সিদ্ধান্তের প্রতি বাংলাদেশ সমর্থন জানিয়েছে।
পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক বলেন, জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান কমিউনিকেশন চায়। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় জঙ্গিবাদ- সন্ত্রাসবাদ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এ ছাড়া সাইবার ক্রাইম, মানি লন্ডারিং, মানব পাচার, মাদক ও চোরাচালান যে কোনো দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এসব মোকাবেলায় দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পারস্পরিক সহযোগিতার বিকল্প নেই। রিয়েল টাইম তথ্য আদান-প্রদানে ভারত, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইন্টারপোল ও এফবিআইর কাছ থেকে বাংলাদেশ স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা পেয়ে আসছে।
ইন্টারপোলের মহাসচিব জারগেন স্টোক বলেন, এক দেশের অস্ত্র ও জঙ্গি অন্য দেশের মানুষ হত্যায় ব্যবহৃত হতে পারে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে তথ্য আদান-প্রদান করতে হবে। মানুষের জীবনকে নিরাপদ করে তোলা জরুরি। ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিসানে হামলার পর ইন্টারপোল তথ্য দিয়ে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করেছে। কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) সক্ষমতা বাড়াতে ইন্টারপোল কাজ করেছে।
জারগেনের কাছে জানতে চাওয়া হয়, বিরোধী দলকে দমন-পীড়নের জন্য বিভিন্ন দেশের সরকার ইন্টারপোলের কাছে তথ্য সহযোগিতা চেয়ে থাকে। সরকারের অনুরোধে অনেকের নামে রেড নোটিশ জারি করা হয়। জবাবে জারগেন বলেন, প্রতিটি তথ্য প্রদানের সময় তারা পুরো প্রত্রিক্রয়া মহৃল্যায়ন করে থাকেন। অভিযোগটি সত্য নয়।
সিঙ্গাপুরের নানিয়াং টেকনোলজিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর পলিটিক্যাল ভায়োলেন্স অ্যান্ড টেররিজম রিসার্চের অধ্যাপক ড. রোহান গুনারত্ন ও সিটিটিসির প্রধান মনিরুল ইসলাম দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
সম্মেলনের সঞ্চালক ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ও সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি এন বি কে ত্রিপুরা। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মোখলেসুর রহমান, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।
ড. রোহান গুনারত্ন বলেন, সমগ্র পৃথিবীতে তিন ধরনের হুমকি রয়েছে। প্রথমত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হুমকি, দ্বিতীয়ত সন্ত্রাসবাদীদের হুমকি, তৃতীয়ত ভাবাদর্শগত উগ্রপন্থিদের হুমকি। বর্তমানে সন্ত্রাসবাদের হুমকি বহুজাতিকভাবে দেখা হচ্ছে। ইসলামিক স্টেট (আইএস) ও তার সহযোগী দলগুলো ইসলামী উগ্রপন্থি সন্ত্রাসবাদী গ্রুপের আদলে কাজ করছে। এতে এশিয়া-প্যাসিফিক এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জঙ্গিবাদের সঙ্গে সবাই ইসলামের নাম জড়ায়। অথচ বিশ্বে হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, তামিল, খ্রিস্টান নানা ধর্মাবলম্বী জঙ্গি ও সন্ত্রাসী রয়েছে।
সিটিটিসির প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, কওমি মাদ্রাসা জঙ্গিবাদ ও চরমপন্থা তৈরির একটি বড় ক্ষেত্র। এ ছাড়া জঙ্গিবাদ রুখতে পারিবারিক বল্পব্দনও দৃঢ় করতে হবে। উগ্রপন্থিদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করা বন্ধ করতে হবে। তবে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদী কার্যক্রম দীর্ঘস্থায়ী হবে না। কারণ এ দেশের মানুষ কখনও জঙ্গিদের কার্যক্রমে সমর্থন করেনি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও লালন ফকিরকে অনুসরণ করলে কেউ জঙ্গি হতে পারে না। শুধু পুলিশি কার্যক্রম দিয়ে জঙ্গিবাদ মোকাবেলা সম্ভব নয়। সেটা করতে গিয়ে ফ্রান্স সফল হয়নি।
মনিরুল ইসলামের প্রবন্ধের একটি প্রসঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক বলেন, শুধু কওমি মাদ্রাসা নয়, অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরও জঙ্গি সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।
তিন দিনব্যাপী দক্ষিণ এশিয়া ও পাম্ববর্তী দেশের পুলিশ প্রধানদের এই সম্মেলনে আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ভুটান, ব্রুনাই, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, নেপাল, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলংকা ও ভিয়েতনামের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন।