চট্টগ্রামে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চলাকালে ‘আত্মঘাতী’ বিস্ফোরণ: নিহত ৪
![](https://dinbodalnews24.com/wp-content/uploads/2017/03/57564_ctg.jpg)
![](https://dinbodalnews24.com/wp-content/uploads/2017/03/57564_ctg.jpg)
দিনবদল ডেক্স: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড পৌরসভার প্রেমতলা চৌধুরীপাড়া এলাকার ‘ছায়ানীড়’ নামের দোতলা বাড়িতে জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অভিযানকালে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ও গুলিতে অন্তত ৪ জঙ্গি নিহত হয়েছে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা এই তথ্য জানান। বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাড়িটিতে জঙ্গিবিরোধী অভিযান শুরু করে। অভিযান শুরুর পর ব্যাপক গোলাগুলি ও প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যান।
সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে ঘটনাস্থলে অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসে। কয়েক মিনিটের মাথায় সোয়াটের আহত এক সদস্যকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যেতে দেখা যায়। হাসপাতাল সূত্র জানায়, অভিযানে সোয়াটের দুজন সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের প্রথমে সীতাকুণ্ড স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। পরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের (ঢাকা) অতিরিক্ত উপকমিশনার আবদুল মান্নান জানান, অভিযানকালে ৪ জঙ্গি নিহত হয়েছে। নিহত জঙ্গিদের সংখ্যা বেশিও হতে পারে। বিভিন্ন অসমর্থিত সূত্র বলছে, আত্মঘাতী বিস্ফোরণে দুই জঙ্গি নিহত হয়েছে।
আবদুল মান্নান আরও বলেন, বাড়িটিতে আটকে পড়া সাধারণ বাসিন্দাদের বের করে আনা হয়েছে। সকাল দশটা নাগাদ তাদের বের করে আনা হয়।
গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে তিনটা থেকে বাড়িটি ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রাত ১১টা পর্যন্ত বাড়ির ভেতর থেকে তিন দফায় পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ও বোমা ছুঁড়ে মারে জঙ্গিরা। এতে পুলিশের এক কর্মকর্তা আহত হন। পরে জঙ্গি আস্তানা লক্ষ্য করে পুলিশও কয়েক দফা গুলি ছোড়ে। এর আগে বিকেল পাঁচটা ও সন্ধ্যা ছয়টায় দুই দফা ওই বাড়িতে থাকা জঙ্গিদের বের হওয়ার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়। তবে ভেতর থেকে জঙ্গিরা সাড়া দেয়নি।
চার ফ্ল্যাটের বাড়িটির নিচতলার একটি ফ্ল্যাটে জঙ্গিরা অবস্থান করছে বলে ধারণা পুলিশের। তবে সেখানে কতজন জঙ্গি অবস্থান করছে, সে সম্পর্কে স্পষ্ট করে কিছু জানাতে পারেনি পুলিশ। বাড়ির বাকি তিনটি ফ্ল্যাটে তিনটি পরিবারের ১৪ থেকে ১৫ জন সদস্য আটকা পড়েন। এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় রাতে বাড়িটির ভেতরে অভিযান শুরু করেনি পুলিশ। গত রাত সাড়ে নয়টায় ঘটনাস্থলে থাকা চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম সাংবাদিকদের বলেন, তার ধারণা, জঙ্গিরা নব্য জেএমবির সদস্য। গত রাত পৌনে একটায় দুটি মাইক্রোবাস ও একটি পিকআপ ভ্যানে করে ঢাকা থেকে সোয়াট দলের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এর আগে ঢাকা থেকে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একটি দল আসে। আর আগেই চট্টগ্রাম থেকে র্যাব, সোয়াট (স্পেশাল উইপনস অ্যান্ড ট্যাকটিকস) ও পুলিশের বোমা নিস্ক্রিয়করণ দলের সদস্যরা সেখানে যান।
সীতাকু- পৌরসভা এলাকার একজন বাড়ির মালিকের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় পুলিশ। গতকাল বেলা তিনটায় ওই বাড়ির মালিকই প্রথমে পৌরসভার আমিরাবাদ এলাকায় তার দোতলা বাড়িতে পুলিশকে ডেকে আনেন। বাড়ির ভাড়াটে জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত—এমন সন্দেহের কথা পুলিশকে জানান তিনি। পরে পুলিশ বাড়ির নিচতলার একটি ফ্ল্যাট থেকে তিনটি গ্রেনেড, একটি সুইসাইড ভেস্ট (আত্মঘাতী হামলার জন্য বোমার তৈরি বেল্ট), পিস্তল, বুলেট, বোমা তৈরির বিপুল সরঞ্জামসহ গ্রেপ্তার করা হয় এক দম্পতিকে। তাদের সঙ্গে দুই মাসের একটি শিশুও রয়েছে।
গ্রেপ্তার দুজনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই প্রেমতলা চৌধুরীপাড়া এলাকার ছায়ানীড় বাড়িতে অভিযানে যায় পুলিশ। সেখানে পৌঁছার পরপরই বাড়ির ভেতর থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে প্রথমে গ্রেনেড ছুড়ে মারা হয়। এতে স্পিøন্টারের আঘাতে আহত হন সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোজাম্মেল হক। এর পরপরই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বাড়িটি ঘিরে রাখেন।