গার্মেন্টস এক্সেসরিজে চার লাখের বেশি মানুষ কাজ করছে

0

1484987143

দিনবদল নিউজ: বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১৫০০’র অধিক গার্মেন্টস এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসকল শিল্প প্রতিষ্ঠানে ৩০-এর অধিক রকমের এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং পণ্য উৎপাদন হয়ে থাকে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে রপ্তানি হচ্ছে চীন, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশে। বর্তমানে এই খাতে চার লাখেরও বেশি মানুষ কাজ করছে বলে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক শিল্পের দেশ হিসাবে বেশ আগেই পরিচিতি পেয়েছে। প্রতিবছর তৈরি পোশাক রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে নিট ও ওভেন মিলিয়ে এক হাজার ৩৭১ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে দুটি উপাদান কাজ করে থাকে। এর একটি হচ্ছে বস্ত্র এবং অপরটি হচ্ছে এক্সেসরিজ। বর্তমানে গার্মেন্টস সেক্টরের এক্সেসরিজের ৯৫ ভাগেরও বেশি দেশেই উত্পাদন হচ্ছে। আর এসব সরাসরি রপ্তানি হচ্ছে বিভিন্ন দেশেও। রপ্তানির জন্য তৈরি পোশাক শিল্পের প্যাকেজিং হচ্ছে দেশেই।

২০১৮ সালের মধ্যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ খাতের রপ্তানি দ্বিগুণ করে এক হাজার ২০ কোটি ডলার করা সম্ভব বলছেন উদ্যোক্তারা। তাই এক্সেসরিজ শিল্পকে খুবই সম্ভাবনাময়ী খাত হিসাবে দেখা হচ্ছে। তবে এ শিল্পের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কিছু নীতিগত সহায়তা এবং ব্যাংক ঋণের সুদের হার কম হলে সম্ভাবনাকে সহজেই বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব। আশির দশকে দেশে তৈরি পোশাক শিল্পের যাত্রা শুরু হলেও সে সময় এক্সেসরিজ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হতো। এতে নানা জটিলতায় পড়তে হয় রপ্তানিকারকদের। সমস্যা সমাধানে নব্বই’র দশকে দেশীয়ভাবে এক্সেসরিজ উত্পাদন শুরু করেন উদ্যোক্তারা। শুরুতে গুটি কয়েক পণ্য তৈরি করা হলেও এখন প্রায় সব ধরনের পণ্যই দেশে উৎপাদিত হচ্ছে।

বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১৫০০’র অধিক গার্মেন্টস এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসকল শিল্প প্রতিষ্ঠানে ৩০-এর অধিক গার্মেন্টস এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং পণ্য উৎপাদন করে থাকে। উত্পাদিত পণ্যসমূহ হলো: পলিব্যাগ, হ্যাঙ্গার, ইলাস্টিক, বাটন, বাটন ট্যাগ, কলার স্ট্যান্ড, বাটার ফ্লাই, লেবেল, করোগেটেড কার্টন, জিপার, হ্যাংটেগ, ব্যাক বোর্ড, নেক বোর্ড, সুইং থ্রেড, প্রাইস ট্যাগ, ফটোবোর্ড, গামটেপ, টিস্যু, ট্যুইল টেপ, এমব্রয়ডারী, প্যাডিং, কুইলটিং প্রভৃতি। এ খাতে প্রবৃদ্ধির হার ১০ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে রপ্তানি হচ্ছে চীন, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশে। বর্তমানে এই খাতে চার লাখেরও বেশি মানুষ কাজ করছে বলে জানান উদ্যোক্তারা।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তৈরি পোশাক খাতের উত্থান পতনের সঙ্গে এ খাত ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ হলো সময়মত পণ্য জাহাজীকরণ করা। আগে যখন এ খাতের এক্সেসরিজ বিদেশ থেকে আমদানি করা হতো তখন ঝক্কি-ঝামেলার পাশাপাশি সময়মত পণ্য হাতে পাওয়াটা ছিল দুরূহ ব্যাপার। তবে এখন দেশেই মানসম্পন্ন সেসব পণ্য উত্পাদিত হওয়ায় দিনে দিনেই পণ্য পাওয়া সম্ভব হচ্ছে। ফলে তৈরি পোশাক শিল্পের চ্যালেঞ্জ অনেকটা কমেছে।অন্যদিকে এসব এক্সেসরিজ সরাসরি বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। প্রচ্ছন্ন এবং সরাসরি এ দুই মিলিয়ে গত অর্থবছরে ছয় দশমিক দুই বিলিয়ন ডলারের এক্সেসরিজ রপ্তানি হয়েছে। এ খাতটি ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ হিসেবে রপ্তানি বাণিজ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এদিকে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীতকরণের রোডম্যাপ ঘোষণা করছে। এরই আলোকে বিজিএমইএ ২০২১ সালে তৈরি পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং পণ্যের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রাও ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে হবে। এজন্য সরকারের নীতিগত সহায়তা দরকার বলে মনে করছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, অন্যান্য রপ্তানি খাতের মত এ খাতেও নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান, ব্যাংকের সুদের হার কমানো, অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা প্রদান, ইউপি এবং আমদানি প্রাপ্যতা ইস্যুর ক্ষমতা এ খাতের অ্যাসোসিয়েশন- বাংলাদেশ গার্মেন্টস এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএপিএমইএ) হাতে দেওয়া। অন্যদিকে এখন পর্যন্ত এ খাত রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তা পায় না। তবে শিগগিরই পাবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *