কে ‘বড় ভাই’, ডাকবে সেই দ্বন্দ্বে কিশোর খুন!

0

ec1288ed0e46f48aca2be64f14bc15ad-587fa8e7922b7 (1)

দিনবদল ডেক্স: রাজধানীর তেজকুনি পাড়ায় একদল কিশোরের মধ্যে কে কার বড়, কে কাকে ‘বড় ভাই’ ডাকবে ও সম্মান করবে, সেই দ্বন্দ্বেরজেরেই খুন হয়েছে কিশোর আব্দুল আজিজ (১৭)।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, খেলাঘর-এর মাঠকে কেন্দ্র করে এলাকার ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী একদল কিশোরের মধ্যে কে কার বড়, এ নিয়ে মাঝে মাঝে ছোটখাট ঝগড়া হতো । তবে এদের মধ্যে যারা একটু সিনিয়র, তারা ঝগড়া মিটিয়ে দেয়।

জানা যায়, সম্প্রতি কিশোর আজিজ ও একই গ্রুপের সায়মনের মধ্যে কে কার বড়, এ নিয়ে ঝামেলা হয়। তারা কেউ কাউকে মানতে চায় না। মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) রাতেও এনিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়।এসময় সিনিয়রদের হস্তক্ষেপে তা মিটমাটও হয়ে যায়।

তবে আজিজকে মারার জন্য আগে থেকেই সুযোগ খুঁজতে ছিল সায়মন। বুধবার দুপুরে রেললাইন কলোনির বাসা থেকে বের হলে খেলার মাঠের পাশে সায়মনের সঙ্গে দেখা হয় আজিজের। শুরু হয় বাকবিতণ্ডা। কিছুক্ষণের মধ্যেই তা হাতাহাতিতে রূপ নেয়। এসময় একজন ব্যাট দিয়ে আঘাত করে আজিজকে। সে পালানোর জন্য দৌড় দেওয়ার চেষ্টা করে। তখনই সাময়ন চাকু দিয়ে আজিজের মাথায় আঘাত করে। এতে সে গুরুতর আহত হয়।এরপর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নেওয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত কিশোর আজিজ চার ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয়। স্থানীয় একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতো সে। তার বাবা আব্দুল বাছির পেশায় একজন হকার। আর মা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। ঘটনার সময় বাবা-মা কেউই বাসায় ছিলেন না, বলে জানিয়েছেন আজিজের নানী আয়েশা খাতুন।

তিনি বলেন, ‘আজিজের বাবা গেছে গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরে। মা ছিল কাজে। আমি দুপুরে তারে (আজিজ) ভাত খাওয়াইছি। খাওয়ার পর সে বাইরে যায়। এর দুমিনিট পরই হুনি (শুনি) আমার নাতিরে মাইরালাইছে।’

সাদী নামে নবম শ্রেণির এক স্কুল শিক্ষার্থী জানান, ‘দুপুরে বি কে আলতাফ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভেতরে কাউকে মারা হবে, এ ধরনের পরিকল্পনা হচ্ছিল। তারাই হয়তো আজিজকে মেরেছে।’ তবে পরিকল্পনার ব্যাপারে কোনও প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম ‘ছোট ভাই-বড় ভাই’ গ্রুপিংয়ের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘এই সমস্যাটা তাদের মধ্যে ছিল।’

ঘটনায় ঢামেক হাসপাতাল ও বিভিন্ন স্থান থেকে মোট ছয় জনকে আটক করা হলেও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিন জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। বাকিদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে তেজগাঁও থানা সূত্রে জানা গেছে। খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করায় আটককৃতদের মধ্যে সায়মন, মনির ও জুয়েলকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন নিহতের মা শরীফা বেগম।

পুলিশ জানিয়েছে, আটক তিন জন আজিজের খুনের সঙ্গে নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করায় তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করা হবে।

তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত তিন জনকে আটক করেছি। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আলামত হিসেবে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকুটি উদ্ধার করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘কে কার বড় এবং কে কাকে ‘বড়ভাই’ বলে ডাকবে, এই সমস্যা তাদের মধ্যে ছিল। কয়েকদিন ধরে এ নিয়ে আজিজ ও সায়মনের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি ।’

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *