কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে ভোগ গ্রহণ চলছে
দিনবদল ডেক্স: শুরু হলো কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। আজ সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা এই ভোটগ্রহণ চলবে। কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নতুন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে এটিই প্রথম বড় ধরনের নির্বাচন।
কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে চার জন প্রার্থী লড়াই করছেন। নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের আঞ্জুম সুলতানা সীমা, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির মনিরুল হক সাক্কু, তারা প্রতীক নিয়ে জেএসডির শিরিন আক্তার এবং স্বতন্ত্র হিসেবে লড়ছেন মামুনুর রশীদ। সংরক্ষিত আসনে ৪০ নারী ও সাধারণ ওয়ার্ডে ১১৪ জনসহ মোট ১৫৮ জন ৩৭টি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
কুমিল্লা ৮ নং ওয়ার্ডের মডার্ন স্কুল ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আটটা বাজার সঙ্গে সঙ্গে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। ’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ‘সব কাউন্সিলরেরই এজেন্ট এখানে এসেছেন। তবে, মেয়রপদের চারজন প্রার্থীর মধ্যে নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্ট এসেছেন।’
কুসিকে ভোটগ্রহণ শুরুভোটার: ২৭টি সাধারণ ও ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে মোট ভোটার ২ লাখ ৭ হাজার ৫৬৬ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ২ হাজার ৪৪৭ জন পুরুষ এবং ১ লাখ ৫ হাজার ১১৯ জন মহিলা। নির্বাচনে মোট ভোট কেন্দ্র ১০৩টি এবং ভোট কক্ষ ৬২৮টি। প্রিজাইডিং অফিসার ১০৩, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ৬২৮ এবং পোলিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করছেন ১ হাজার ২৫৬ জন।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা: কুসিক নির্বাচনকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মোতায়েন করা হয়েছে র্যাব-পুলিশ। ভোটের দু’দিন আগে অর্থাৎ মঙ্গলবার থেকে বহিরাগতদের নির্বাচনি এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
জানা গেছে, কুসিক নির্বাচনে সব মিলিয়ে প্রায় ৪ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মাঠে থাকছেন। এর মধ্যে পুলিশ সদস্য ১ হাজার ৩০, আনসার ১ হাজার ৯৭২, র্যাব ৩৩৮ (২৭টি টিম) ও বিজিবি ৬০০ জন (২৪ প্লাটুন)।
নির্বাচনে ১০৩টি ভোট কেন্দ্রের সবগুলোকেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে আদর্শ সদর উপজেলা এলাকায় ৭২টি এবং সদর দক্ষিণ উপজেলা এলাকায় ৩১টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এ কেন্দ্রগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ চিহ্নিত করে প্রতিটি কেন্দ্রে ২৪ জন পুলিশ ও আনসার সদস্য এবং র্যাবের ৮ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ দু’টি করে কেন্দ্রে র্যাব ও পুলিশের পৃথক মোবাইল টিম নিয়োজিত রয়েছে। নির্বাচনি ২৭টি ওয়ার্ডে পুলিশের ২৭টি পেট্রোল টিম দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই ডিউটি করছে।
নতুন সংযোজন এএসএফ: অন্যান্য নির্বাচনে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ, র্যাব, বিজিবির স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকলেও কুসিক নির্বাচনে আনসার বাহিনীরও স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। কুইক রেসপন্স টিম হিসেবে আনসার স্ট্রাইকিং ফোর্স (এএসএফ)-এর ৩টি টিম এই নির্বাচনে কাজ করছে বলে বাহিনীটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন। তিনি জানান, নির্বাচনে এটি তাদের নতুন সংযোজন। তাদের বাহিনীর চৌকস সদস্যদের সমন্বয়ে এই টিম কাজ করছে।
যান চলাচলে কড়াকড়ি: নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচনি এলাকায় গত মঙ্গলবার থেকে চার দিনের জন্য মোটর সাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া বুধবার মধ্যরাত থেকে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত পর্যন্ত অটোরিকশা, ইজিবাইক, টেম্পো, ট্যাক্সিক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস ও ট্রাক চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তবে জরুরি সেবায় নিয়োজিত যানবাহনের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য নয়।
বিশেষ মোবাইল: এবারই প্রথম ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের বিশেষ একটি মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে। ওই নম্বরে ভোটগ্রহণ পরিস্থিতি নিয়ে এসএমএস করতে পারবেন তারা। সিইসি ও ইসি সচিব এসএমএস দেখে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেবেন।
২৪২ জন পর্যবেক্ষক: কুসিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছে ইসিতে নিবন্ধিত ১০টি বেসরকারি ও একটি বিদেশি সংস্থা। এসব সংস্থার ২৪২ জন পর্যবেক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
মোবাইলের এসএমএস-এ ভোটার নম্বর: নির্বাচনি এলাকার ভোটাররা মোবাইলে এসএমএস-এর মাধ্যমে তাদের ভোটার নম্বর ও কেন্দ্রের তথ্য জানতে পারবেন। নির্বাচন কমিশন পরিচালক (জনসংযোগ) এস এম আসাদুজ্জামান জানান, মোবাইলের এসএমএস অপশনে গিয়ে PC লিখে স্পেস দিয়ে ১৭ ডিজিটের জাতীয় পরিচয় পত্রের (১৩ ডিজিট হলে আগে জন্ম সাল দিতে হবে) নম্বর লিখে ১০৫ নম্বরে পাঠালে ফিরতি এসএমএস-এ ভোটার নম্বর ও কেন্দ্রের নাম জানা যাবে।