এপারে-ওপারে চলছে শুমারি: টানাপড়েনে রোহিঙ্গারা

0

df84046656194f40c2cea03ee0b20bdf-576ca836c1fec

দিনবদল ডেক্স: বাংলাদেশ ও মিয়ানমার—একইসময়ে দুই দেশেই চলছে রোহিঙ্গা শুমারি ও খানা তালিকা তৈরির কাজ। এ কারণে কক্সবাজারে অবস্থান করা রোহিঙ্গারা টানাপড়েনের মধ্যে পড়েছেন।

রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, দু’টি শুমারিই তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি বছর রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত মুসলমানদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ছবি তুলে খানা তালিকা তৈরি করা হয়। এ বছরও এই তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু করেছে মিয়ানমার সরকার। তবে শর্ত হলো, মুসলিম পরিবারের কোনও সদস্য খানা তালিকা থেকে বাদ পড়লে তাকে রাখাইন রাজ্যে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হবে না। মিয়ানমার সরকারের এমন সিদ্ধান্তে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরে যাওয়ার প্রবল ইচ্ছা থাকলেও তা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে সম্প্রতি বাংলাদেশে পালিয়ে আসা প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গার স্বদেশে ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করতে সরকারিভাবে চলছে শুমারির কাজ। এই তালিকায় নাম ওঠাতে না পারলে আইনি জটিলতায় পড়ার আশঙ্কা রয়েছে তাদের। এরফলে কোনও কোনও রোহিঙ্গা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ফিরে গেলেও সেখানে ছবি তুলে আবারও ফিরে আসছেন বাংলাদেশে। তবে যারা মিয়ানমারে গিয়েও খানা তালিকায় নাম ওঠাতে পারেননি, তারা পড়েছেন বিপাকে।

কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালীর নতুন রোহিঙ্গা বস্তির আয়ুব আলী মাঝি, হামিদা বেগম, আবুল হোসেন জানান, ইতোমধ্যে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা হিসেবে শুমারিতে নাম উঠিয়েছেন। কিন্তু, ওঠাতে পারেননি নিজ দেশ মিয়ানমারের খানা তালিকায় নাম। এ জন্য খুব হতাশায় দিন কাটছে তাদের। খানা তালিকায় নাম ওঠাতে না পারলে মাতৃভূমিতে ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

মোবাইল ফোনে বাংলাট্রি বিউনের সঙ্গে কথা হয় মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যের মংডু উপজেলার পোয়াংখালী এলাকার ছাব্বির আহমদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে দু’মাস থাকার পর মিয়ানমারে ফিরে আসি। কিন্তু নিয়ে আসতে পারিনি পরিবারের সদস্যদের। তাই মিয়ানমার সরকারের খানা তালিকায় ছবি তুলে আবারও বাংলাদেশে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

একই এলাকার শফিউল আলম বলেন, ‘১৫দিন আগে একসঙ্গে দু’শতাধিক রোহিঙ্গা মিয়ানমারে এসেছি। যারা আমার সঙ্গে মিয়ানমারে এসেছেন, তাদের অধিকাংশই সচ্ছল। তাদের বাংলাদেশে ফেরার আর সম্ভাবনা নেই।’

মিয়ানমারের মংডু উপজেলার কৈয়ারিপাড়া এলাকার মোহাম্মদ হাসান জানান, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে যারা অবস্থান করছেন, তাদের অনেকেই গরিব ও অসচ্ছল পরিবারের সদস্য। যারা সচ্ছল ও টাকা-পয়সা আছে, তারা আরাকান রাজ্যেই এখন অবস্থান করছেন।’

কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আরকান রাজ্যে এখন নতুন করে খানা তালিকা তৈরির কাজ চলছে। মিয়ানমার সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, এই তালিকার বাইরে যারা থাকবেন, তারা আরকানে বসবাস করতে পারবেন না। এ কারণে, বাংলাদেশে নতুন করে পালিয়ে আসা ৭৫হাজার রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।’

পরিসংখ্যান ব্যুরো কক্সবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. ওয়াহিদুর রহমান জানান, চলতি বছরের ১৫ মার্চ নতুন করে রোহিঙ্গা শুমারি শেষ হয়েছে। তবে কতজন রোহিঙ্গা শুমারির আওতায় এসেছেন, তা নিশ্চিত করতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘আমরা মাঠ পর্যায়ে শুমারির কাজ শেষ করে ঢাকা অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছি। তাই সঠিক পরিসংখ্যান ঢাকা অফিসই জানাতে পারবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘গত বছর কক্সবাজার জেলাসহ ৬টি জেলায় রোহিঙ্গা শুমারি হয়েছে। এ বছর শুধু কক্সবাজার সদর, রামু, উখিয়া, টেকনাফ ও চকরিয়ায় উপজেলাতে শুমারি হয়েছে। এসব উপজেলায় মিয়ানমার থেকে নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের পরিমাণ বেশি। এসব এলাকায় যদি কোনও রোহিঙ্গা নতুন করে আসেন, তাদের শুমারিতে অন্তর্ভুক্ত করতে রোহিঙ্গা নেতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ এলাকায় সন্ত্রাসীদের হামলায় ৯ পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর তার দায় চাপানো হয় রোহিঙ্গাদের ওপর। আর তখন থেকেই শুরু হয় সেনাবাহিনীর দমন প্রক্রিয়া। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের দাবি, এরপর থেকেই রাখাইন রাজ্যে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। রোহিঙ্গা মুসলমানদের ইসলামি চরমপন্থা দমনে কাজ করছেন বলে দাবি করছিলেন তারা। এ ঘটনায় জাতিসংঘ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে জাতিগতভাবে নির্মূল করার অভিযোগ এনেছে। তাদের বিরেুদ্ধে মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডেরও অভিযোগ তোলা হয় দুই দফায়। সংঘর্ষে রাখাইন রাজ্যে মৃতের সংখ্যা ৮৬ জন বলে জানিয়েছে তারা। জাতিসংঘের হিসাব মতে, এখন পর্যন্ত ঘরহারা হয়েছেন ৩০ হাজার মানুষ। পালাতে গিয়েও গুলি খেয়ে মৃত্যু হয়েছে অনেকের। মৃত্যুর ভয়ে বাংলাদেশে নতুন করে আশ্রয় নিয়েছে ৭০ হাজার রোহিঙ্গা।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *