এন্ট্রি ডাম্পিং ডিউটি: ভারতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে বাংলাদেশ

0

ab1d6cb3c97a7eb4f544bcd55672b384-587f988385515

দিন বদল ডেক্স: বাংলাদেশের পক্ষে দুর্বল ও অদক্ষ ম্যানেজমেন্টের কারণেই মামলায় হারতে হয়েছে বলে মনে করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা।নিজের নাম প্রকাশে আপত্তি জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে আমাদের দুর্বলতা ছিল।’

জানা গেছে, ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের আরোপিত এন্ট্রি-ডাম্পিং শুল্ক ব্যবস্থা প্রত্যাহারের জন্য আলোচনা করতে ভারত যাচ্ছেন সরকারের দুই সিনিয়র মন্ত্রী। সরকারের শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এবং বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বিষয়টি নিয়ে সেদেশের সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে।

সরকারের এই দুই মন্ত্রী মনে করেন, আলোচনার মধ্যদিয়ে ভারত নিশ্চয়ই আরোপিত এন্ট্রি ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহার করবে। কারণ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রয়েছে চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।

সম্প্রতি ভারতের জুট মিলস্ অ্যাসোসিয়েশন এবং ভারতীয় উদ্যোক্তাদের স্থানীয় বাজার সুরক্ষার দাবির কারণে ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব এন্ট্রি ডাম্পিং অ্যান্ড এলাইড ডিউটিজ (ডিজিএডি) কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ থেকে পাট ও পাটজাত পণ্য ভারতে রফতানির ক্ষেত্রে এন্ট্রি ডাম্পিং শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জানা গেছে, ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের পাট শিল্প এবং এর সঙ্গে সম্পৃক্ত সাপ্লাই চেইন প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ এবং নেপাল হতে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে ভারত সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় টন প্রতি ৬ দশমিক ৫ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৩৫০ ডলার ডিউটি আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, তৃতীয় বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট-২০১৭ এ যোগ দিতে ১৯ জানুয়ারি কলকাতা যাচ্ছেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।

সফরকালে পাটজাত পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে ভারতের আরোপিত এন্ট্রি-ডাম্পিং ব্যবস্থার বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিসহ ভারত সরকারের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী। বুধবার দুপুরে ঢাকা চেম্বার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ তথ্য জানান।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অর্থ, আবগারি, শিল্প ও বাণিজ্য এবং রাষ্ট্রায়ত্ত উদ্যোগ ও শিল্প পুনর্গঠন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী ড.অমিত মিত্রের আমন্ত্রণে শিল্পমন্ত্রী এ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। ২০ ও ২১ জানুয়ারি কলকাতার মিলন মেলা হলে এ ব্যবসায়ী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

অপরদিকে সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে দিল্লি যাচ্ছেন আগামী ২৬ জানুয়ারি। এসময় তিনি এন্ট্রি ডাম্পিং ডিউটি ইস্যুতে ভারত সরকারের শীর্ষ নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা করবেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভারত সেদেশের বাজারে বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যের ওপর এন্ট্রি ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করলেও কাঁচাপাটের ওপর কোনও শুল্ক আরোপ করা হয়নি। কারণ, ভারতের পাটকলগুলো সচল রাখতে প্রয়োজনীয় কাঁচাপাটের অভাব রয়েছে। তারা বাংলাদেশ থেকে কাঁচাপাট নিতে আগ্রহী। তবে বাংলাদেশ থেকে কাঁচাপাট রফতানির ক্ষেত্রে সরকারের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ভারত সরকার এ সংক্রান্ত শিল্প রক্ষায় ভর্তুকি দিয়ে থাকে। তাই বাংলাদেশ থেকে পাটজাত পণ্য ভারতে রফতানির ক্ষেত্রে এন্ট্রি ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করার নির্দেশ দিয়েছে সেদেশের একটি আদালত।

আদালতের রায়ের কারণে ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় পাটজাত পণ্যের রফতানির ক্ষেত্রে স্বাভাবিক রফতানি শুল্ক সাড়ে ৬.৫ ডলার থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৩৫০ ডলার নির্ধারণ করেছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, ‘পাটজাত পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে আরোপিত এন্ট্রি-ডাম্পিং ব্যবস্থার ফলে ভারতে বাংলাদেশের রফতানি বাধাগ্রস্ত হবে। বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশি রাষ্ট্র হিসেবে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য জোরদার ও বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে এ বিষয়ে এখনই উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।’ তিনি এ বিষয়ে দ্রুত সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘বাংলাদেশের পাটজাত পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে এন্ট্রি ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করা সঠিক হয়নি। কারণ বাংলাদেশ ভারতের ভালো বন্ধু।’

তিনি বলেন, ‘ভারতের অনেক পণ্য আছে, যা বাংলাদেশের বাজারে নানাভাবে প্রবেশ করছে। এরমধ্যে অনেক পণ্য রয়েছে যেসব পণ্যের শিল্প রক্ষায় আমরা সরকারের পক্ষ থেকে নানাভাবে প্রণোদনা দিয়ে থাকি। ভর্তুকিও দেই। আমরাতো ওই পণ্যের প্রবেশ ঠেকাতে এন্ট্রি ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করি না। ভারত আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ বলেই আমরা সেই সম্মানটুকু রাখি।’

তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আলোচনার জন্য ভারত যাচ্ছি। নিশ্চয়ই ভারত বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যের ওপর আরোপিত এন্ট্রি ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহার করবে।’

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ থেকে ভারতে যেসকল পণ্য রফতানি হয়, সেগুলোর মধ্যে পাট ও পাটজাত পণ্য উল্লেখযোগ্য। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (১ জুলাই থেকে ৩১ ডিসেম্বর-২০১৬) বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানির মোট পরিমাণ ছিল ৩৪১ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *