উত্তরায় স্কুল পালানো ছাত্র আটক

0

1487389244

দিনবদল ডেক্স: রাজধানীর উত্তরায় স্কুল পালানো ছাত্রদের আটকের ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছে ফাঁকিবাজরা। গত ১৫ দিনে উত্তরা থানা পুলিশ স্কুল ইউনিফর্ম পরিহিত দুই শতাধিক ছাত্রছাত্রীকে আড্ডারত অবস্থায় বিভিন্ন স্থান থেকে আটক করে অভিভাবকের হাতে তুলে দিয়েছেন। আগে যেসব স্পটে স্কুল পালানো শিক্ষার্থীদের জমজমাট আড্ডা বসতো, সেসব স্থান এখন রীতিমত ফাঁকা পড়ে থাকে। পুলিশের এই ‘ফাঁকিবাজ শিক্ষার্থী পাকড়াও’ কর্মকাণ্ডকে স্বাগত জানিয়েছে এলাকাবাসী। উল্লেখ্য, উত্তরা এলাকায় সরকারি বেসরকারি মিলে স্কুল কলেজের সংখ্যা অন্তত দুই শতাধিক।

প্রসঙ্গত, গত ৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর রোডে ট্রাস্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আদনান কবিরকে খেলার মাঠে পিটিয়ে এবং কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে অপর একটি কিশোর গ্রুপ। তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উত্তরার একটি হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিত্সক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পর পুলিশ জানতে পারে উত্তরায় ‘পশ্চিমা গ্যাং সংস্কৃতি’ ও আধিপত্য বিস্তারকে ঘিরেই এই হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনার পর থেকে পুলিশ এলাকাবাসীর সঙ্গে বৈঠক করে স্কুল পালানো ছাত্রদের বিরুদ্ধে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে অভিযান শুরু করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উত্তরা এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, আমি পেশায় ব্যবসায়ী। পেশার খাতিরে সকালেই বাসা থেকে বেরিয়ে যাই। ফিরতে ফিরতে রাত ১১টা বেজে যায়। আমার একমাত্র ছেলে কলেজ ছাত্র । তাকে খুশী করতে মোটর সাইকেল কিনে দিয়েছি। নিশ্চিত ছিলাম সে নিয়মিত কলেজে যায়। কিন্তু পুলিশ তাকে আটক করে আমাদের হাতে তুলে দেওয়ার পর জানতে পারি সে কলেজে না গিয়ে নিয়মিত দিয়া বাড়ি এলাকায় গিয়ে আড্ডা দিত।

একই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আরো একজন অভিভাবক। তার এক ছেলে এক মেয়ে। তিনি সমস্যায় পড়েছেন মেয়েকে নিয়ে। মেয়ে স্কুল ফাঁকি দিয়ে ছেলে বন্ধুর সাথে প্রায়ই আড্ডা দিত। পুলিশ তাকে ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় আটক করে। পরে মুচলেকা দিয়ে মেয়েকে ছাড়িয়ে নেন তার অভিভাবক।

উত্তরা নাগরিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি আলী আকবর বলেন, স্কুল ছাত্র আদনান নিহত হবার পরই সবার টনক নড়ে, বুঝতে পারে প্রকৃত সমস্যা। তিনি পুলিশের আটক অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, পুলিশের পাশাপাশি নাগরিক সমিতির পক্ষ থেকে বিষয়টি তদারকির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা মহল্লায় মহল্লায় গিয়ে অভিভাবকদের নিয়ে বৈঠকের ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া প্রতিটি স্কুল কলেজে প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষের সাথে কথা বলেছি। তাদের বলা হয়েছে, যেসব ছাত্র অনুপস্থিত থাকে তাদের তালিকা করার জন্য।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিধান ত্রিপুরা বলেন, পুলিশকে এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সব সময় ব্যস্ত থাকতে হয়। স্কুল কলেজ পালানো শিক্ষার্থীদের দেখভাল করা পুলিশের দায়িত্ব নয়। অথচ আমাদের এখন তাই করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, স্কুল ছাত্র আদনান কবির হত্যাকাণ্ড তদন্ত করতে গিয়ে আমরা বিভিন্ন ধরনের তথ্য পেয়েছি যা সত্যিই বেদনাদায়ক। এক শ্রেণির শিক্ষার্থী তাদের হিরোইজম দেখানোর জন্য ‘গ্যাং গ্রুপ’ তৈরি করে আসছিল। এরমধ্যে সবশ্রেণির পরিবারের সন্তানরা রয়েছে। তারা উত্তরার ডিসকো বয়েস, নাইন স্টার গ্রুপ, সেভেন স্টার গ্রুপ, নাইন এমএম বয়েজ, বিগবস ইত্যাদি গ্রুপ তৈরি করে।

উপ-কমিশনার বলেন, এ প্রেক্ষাপটে গত ৩০ জানুয়ারি উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের খেলার মাঠে এলাকার সবাইকে নিয়ে সমাবেশ করি। ওই বৈঠকে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। এর একটি হচ্ছে- স্কুল ইউনিফর্ম পরে যত্রতত্র ঘোরাফেরা নয়। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্তের পরই গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে পুলিশ অভিযান শুরু করে। গত ১৫ দিনে পুলিশ স্কুল ফাঁকি দেওয়া প্রায় দু’শত শিক্ষার্থীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরে তাদের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে বাবা-মা এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

বিধান ত্রিপুরা আরো বলেন, অভিভাবকদের উদাসীনতার কারণেই সন্তানরা বখে যাওয়ার সুযোগ পায়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে অভিভাবকদেরই নিবিড়ভাবে খোঁজ খবর রাখতে হবে- তাদের কিশোর সন্তান কার সাথে মেশে, কার সঙ্গে চলাফেরা করে।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *