আস্থা ফেরানোর চ্যালেঞ্জে নতুন নির্বাচন কমিশন

0

1486491439

দিনবদল ডেক্স: আগামী দিনগুলোতে ভোট ব্যবস্থার উপর জনগনের আস্থা ফিরিয়ে আনার কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার দায়িত্ব পড়েছে নতুন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উপর। সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহনে একাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজন ও নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় আস্থা ফিরিয়ে আনার প্রত্যাশা পূরণের মূল কারিগরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন এই কমিশনের।

সামনে চ্যালেঞ্জের বিষয়ে কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, আগামী নির্বাচন রাজনৈতিক সরকারের অধীন হলেও যে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত তারা। যে কোন নির্বাচনে কোন দল বা দলীয় নির্দেশনার কাছে মাথা নত করবে না কমিশন। সাংবিধানিক এই দায়িত্ব সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে পালনে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ।

নতুন ইসির উদ্দেশ্যে বিদায়ী প্রধান নির্বাচন (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেছেন, এটা সাংবিধানিক দায়িত্ব, দেশের দায়িত্ব ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আমি আশা করছি আন্তরিকতা ও যোগ্যতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে নতুন ইসি।

নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, সর্বশেষ তিনবছর দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার উপর জনগনের এক ধরণের অনাস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে কাজী রকিব কমিশনের বিরুদ্ধে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা নষ্ট, নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রতি জনগনের আস্থার সংকট সৃষ্টির পাশাপাশি সংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ না করার অভিযোগ রয়েছে। রকিবউদ্দীন কমিশনের অধীনে হওয়া বিভিন্ন নির্বাচনে গোলযোগ-সহিংসতার পাশাপাশি অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। শুধু ইউপি নির্বাচনেই শতাধিক ব্যক্তির প্রাণহানি হয়। আলোচনা-সমালোচনা মধ্যে ৮ ফেব্রুয়ারি মেয়াদ শেষ হচ্ছে রকিব কমিশনের।

এই পরিস্থিতিতে গত সোমবার রাতে কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বে নিয়োগপ্রাপ্ত পাঁচ সদস্যের কমিশনকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি চ্যালেঞ্জ হল কমিশন ও নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর জনগণের আস্থা ফেরানো এবং ২০১৯ সালের শুরুতে অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। একইসঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব কাটিয়ে সহিংসতামুক্ত সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন, জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা বিকেন্দ্রীকরণ, স্মার্টকার্ড বিতরণ ও ইভিএম ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে নতুন কমিশনকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ইত্তেফাককে বলেন, নতুন ইসিকে সবার আগে ভোটের উপর জনগনের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় ভোটাররা যাতে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে-সেই পথে যেতে নতুন কমিশনকে। আমরা চাই, আগামীতে সব দল নিয়ে একটি অংশগ্রহণমূলক ও প্রভাবমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।

ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) পরিচালক ড. আবদুল আলিম বলেন, কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন বিদায়ী কমিশনের মেয়াদের শুরুতে ২০১৩ সালের চার সিটি এবং শেষে এসে ২০১৬ সালের নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন ছাড়া সব ভোটই প্রশ্নবিদ্ধ। আর এর ফলে নির্বাচন প্রক্রিয়ার উপর দেশের মানুষের আস্থা কম। ভোটের ওপরে মানুষের আস্থা অর্জন করাই হবে নতুন কমিশনের অন্যতম চ্যালেঞ্জ।

চ্যালেঞ্জের বিষয়ে নতুন নির্বাচন কমিশনার মো: রফিকুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, আমি প্রতিটি কাজকে চ্যালেঞ্জ মনে করি। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে না পারা ব্যর্থতা। আশা করি সবার সহযোগিতায় সব ধরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবো আমরা।

নতুন ইসির শপথ ১৫ ফেব্রুয়ারি

প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নতুন নির্বাচন কমিশনারদের শপথ আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ওই দিন বিকাল ৩টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চার কমিশনারকে শপথ পড়াবেন।

কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন এই কমিশনে সদস্য হিসেবে আছেন সাবেক সচিব রফিকুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার, অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ কবিতা খানম ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদত্ হোসেন চৌধুরী।

বিদায়ী কমিশনের প্রধান কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ ও তিন নির্বাচন কমিশনারের পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে আজ বুধবার। আরেকজন নির্বাচন কমিশনার ১৪ ফেব্রুয়ারি তার মেয়াদ শেষ করবেন। স্বাধীনতার পর ইসির নিজস্ব ভবনে ১৫ ফেব্রুয়ারি বিকালেই যাত্রা শুরু হবে নতুন কমিশনের।

আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করবে নতুন ইসিঃ

বিদায়ী সিইসি’র প্রত্যাশা

বিদায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ প্রত্যাশা করেন, নতুন ইসি আন্তরিকতার সাথে তাদের যোগ্যতা দিয়ে দায়িত্ব পালন করবেন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। সকাল ১১ টার দিকে বিদায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারগণ জাতীয় স্মৃতিসৌধে পৌঁছেন। এ সময় তাদেরকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান।

কাজি রকিব উদ্দিন আহমেদ আরো বলেন, নির্বাচন কমিশনারের কাজটি সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। আমরা আমাদের অন্তর থেকে দায়িত্ব পালন করেছি। আশা করি নতুন নির্বাচন কমিশনও স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করবেন। পরে তিনি স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট নিরাবতা পালন করেন। এরপর স্মৃতিসৌধের পরিদর্শন বইয়ে তিনি স্বাক্ষর করেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক, মোহাম্মদ আবু হাফিজ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. জাবেদ আলী, মো. শাহ নেওয়াজ।

কে কোন দলের সুপারিশে নিয়োগ পেলেন

আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন নেতৃত্বে গঠিত সার্চ কমিটি ২৬টি রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবিত ১২৮টি নাম থেকে ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করে। এই ১০ জনের মধ্যে থেকে ৫ জনকে গত সোমবার রাতে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এর মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদার নাম প্রস্তাব করেছিল তরিকত ফেডারেশন। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারকে বিএনপি, বেগম কবিতা খানমকে আওয়ামী লীগ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদত্ হোসেন চৌধুরীকে গণতন্ত্রী পার্টি প্রস্তাব করেছিল। আরেক নির্বাচন কমিশনা

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *