আইসিসিবিতে হরেক স্বাদের চা
বাগানে চা পাতা সংগ্রহ থেকে শুরু করে ধোঁয়া ওঠা পেয়ালা পর্যন্ত জুড়ে থাকা গল্প জানাতে এবং হরেক স্বাদের চা পরিবেশনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ঢাকায় শুরু হলো চা প্রদর্শনী। গতকাল বৃহস্পতিবার ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) পুষ্পগুচ্ছ হলে এই প্রদর্শনী শুরু হয়।
তিন দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ চা বোর্ড। শনিবার পর্যন্ত দর্শনার্থীরা সেখানে নানা স্বাদের চা উপভোগ করতে পারবে। প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় চা বাগান, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিপণন সংস্থা ও চাসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রদর্শনীতে ১৬টি স্টল ও ৩০টি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রদর্শনী চলবে বলে আয়োজকরা জানান। প্রথম দিন চা প্রদর্শনীতে উপস্থিত হয় হাজারো দর্শনার্থী।
গতকাল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, বাণিজ্যসচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনসহ শীর্ষ ব্যক্তিরা।
চা বোর্ডের চেয়ারম্যান সাফিনুল ইসলাম, বাংলাদেশীয় চা সংসদের চেয়ারম্যান আরদাশীর কবির, টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান শান্তনু বিশ্বাসসহ চা শিল্পসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও চা বাগানের মালিকরাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চা শিল্পের সঙ্গে নিজের শৈশব-কৈশোরের নানা স্মৃতি এবং বাংলাদেশে চা চাষের দেড় শ বছরের উল্লেখযোগ্য ঘটনার স্মৃতিচারণা করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
তিনি বলেন, ‘চা শিল্পের দেড় শ বছরের ইতিহাসে দেশে এটিই প্রথম প্রদর্শনী। ভারতীয় উপমহাদেশের কোথাও হয়েছিল কি না আমার জানা নেই। আমার আশ্চর্য লাগছে, এই প্রদর্শনী চা শিল্পের ইতিহাসে একটি বিশেষ দিন। ’
শৈশবে ব্রিটিশ শাসনামলে রেলস্টেশনে তাঁকেও বিনা মূল্যের চা খেতে হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন প্রবীণ এই রাজনীতিক। ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৫০ সালের দিকে এই অঞ্চলে চা চাষ শুরু হয়। ব্রিটিশরা সিলেটের এক বাঙালিকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে চাষ শুরু করে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমার মনে আছে, আমি যখন কিশোর তখনও বিনা পয়সায় চা পাওয়া যেত। রেল স্টেশনে লেখা থাকত, এখানে বিনা পয়সায় চা পাওয়া যায়। কোনো চার্জটার্জ কিচ্ছু হতো না। ’
চা বোর্ডের কর্মকর্তা বলেন, প্রদর্শনীর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাজারে দেশীয় চায়ের ইতিহাস ঐতিহ্য তুলে ধরা। বাংলাদেশি চায়ের মান ও বৈচিত্র্য নিয়ে তথ্য-উপাত্ত থাকছে মেলার স্টলগুলোতে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চা বোর্ড উদ্ভাবিত নতুন চা ‘বিটি১৯’ ও ‘বিটি২০’-এর চারা অবমুক্ত করা হয়।
প্রদর্শনীতে ডেনিশ সিমলা টি, মেগনলিনা টি, ইস্পাহানি চা, কাজি অ্যান্ড কাজি টি, হালদা ভেলি টি, এইচআরসি টি, ন্যাশনাল টি, সিলন টি, শ’ওয়ালেস টি, ফিনলে টি, মহসিন টি, ব্র্যাক টি, ডানকান টি, ফ্রেশ টিসহ অন্য প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে।
বাংলাদেশীয় চা সংসদ, সিটি গ্রুপ, ডানকান ব্রাদার্স, ফিনলে চা, এইচআরসি, ইস্পাহানি, সিলন চা এই আয়োজনের সহযোগী।
এদিকে চা মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টি বোর্ডের মহাব্যবস্থাপক কালের কণ্ঠকে জানান, দেশের চায়ের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৈচিত্র্যও এসেছে। আর চা বহুমুখীকরণের বিভিন্ন তথ্য জানা যাবে প্রদর্শনী থেকে। বাংলাদেশ চা বোর্ড বর্তমানে ২২ রকমের চায়ের উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে ছয় ধরনের চা বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ইসমাইল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, চা শুধু মুখরোচক কোনো পানীয় নয়, স্বাস্থ্য সুরক্ষায়ও অনেক ভূমিকা রাখে। আর এর মধ্যে প্রচলিত কালো চায়ের চেয়ে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে গ্রিন টি। এই চা এখন দেশের বড় বড় চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারজাত করছে, একই সঙ্গে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি করছে।
চা প্রদর্শনীতে যোগ দেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করা যাচ্ছে এই লিংকে http://ticketchai.com/free-ticket-detail/602/Bangladesh-Tea-Expo-2017