হোটেল শেরাটন ডিএনসিসিকে বুঝিয়ে দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

0

২৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪২০ বঙ্গাব্দ,
১২ জুন ২০২৩ ইং,
মহানগর প্রতিনিধিঃ

সরকারি জমির ওপর নির্মিত বনানীর হোটেল শেরাটন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে (ডিএনসিসি) বুঝিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

রিটের শুনানি শেষে আজ ১২ জুন সোমবার বিচারপতি মো: নজরুল ইসলাম তালুকদার এবং বিচারপতি খিজির হায়াতের ডিভিশন বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন। এ তথ্য জানিয়েছেন বেঞ্চটির ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালিদ।

তিনি জানান, রাজধানীর অভিজাত এলাকা বনানীতে সিটি কর্পোরেশনের ৬০ কাঠা জায়গায় ২৮তলা ভবনে পাঁচ তারকা হোটেল শেরাটন নির্মাণ করা হয়েছে। এটি চুক্তি অনুযায়ী উত্তর সিটি কর্পোরেশনকে বুঝে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আগামী তিন মাসের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। সরকারি জমির ওপর সুউচ্চ এই ভবন নির্মাণ করেছে ‘ বোরাক রিয়েল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেড’। এটির মালিক ব্যবসায়ী মো: নূর আলী। রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

শুনানিতে তিনি বলেন, রাজধানীর বনানীতে সিটি করপোরেশনের ৬০ কাঠা জায়গা নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সঙ্গে ২০০৬ সালে একটি চুক্তি হয় বোরাক রিয়েল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেডের। বোরাকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নূর আলীর সঙ্গে চুক্তিতে বলা হয়, বনানী কাঁচাবাজারের পশ্চিম পাশে ও বনানী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের উত্তর পাশে সিটি করপোরেশনের জমিতে ‘বনানী সুপার মার্কেট কাম হাউজিং কমপ্লেক্স’ নির্মাণ করা হবে। ভবনের ৩০ শতাংশ পাবে সিটি করপোরেশন, ৭০ শতাংশ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। যে ৩০ শতাংশ পাবে সিটি করপোরেশন সেই ভাগের সম্পদের মূল্য প্রায় ৫৫০ কোটি টাকা। কিন্তু সে হিস্যা গত এক দশকেও বুঝে পায়নি সিটি করপোরেশন। উল্টো চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে ১৪তলার স্থলে ২৮তলা ভবন নির্মাণ করে পুরোটাই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে বোরাক রিয়েল এস্টেট কোম্পানি। ২০০৬ সালে চুক্তিটি সম্পাদিত হয়। ২০১০ সালে সেটি হস্তান্তরের করার কথা ছিল। সেখানে এখন ২০২৩ সাল চলছে। প্রায় ১৪ বছর ধরে বোরাক রিয়েল এস্টেট শেরাটন হোটেলের মতো একটি আন্তর্জাতিক হোটেল তারা নিয়ে আসছে, কিন্তু একটি টাকাও এখন পর্যন্ত সিটি করপোরেশন পায়নি। রিটে স্থানীয় সরকার সচিব, রাজধানী উন্নয়ন করপোরেশন, উত্তর সিটি করপোরেশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।

প্রসঙ্গত: সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দায়ের করা হয় এ রিট। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সময়ে বোরাক রিয়াল এস্টেটের সঙ্গে কর্পোরেশনের চুক্তি হয়। সে অনুযায়ী বনানী কাঁচাবাজারের পশ্চিম পাশে ও বনানী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের উত্তর পাশে সিটি কর্পোরেশনের জমিতে ‘বনানী সুপার মার্কেট কাম হাউজিং কমপ্লেক্স’ নির্মাণ করা হবে। ভবনের ৩০ শতাংশ পাবে সিটি কর্পোরেশন, ৭০ শতাংশ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। অসম এ চুক্তি নিয়ে তখন ব্যাপক সমালোচনা হয়। সংসদীয় কমিটিতেও আলোচনা হয়।

সিটি কর্পোরেশন বিভক্ত হওয়ার পর বনানীর এই সম্পত্তি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ভাগে পড়েছে। উত্তর সিটির মেয়র মো: আতিকুল ইসলাম বলেন, বনানীর মতো এলাকায় কর্পোরেশনের জমিতে ভবন নির্মাণে যে অসম চুক্তি হয়েছে, তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। তখন কিছু সুবিধাভোগী চক্র এই অসম চুক্তি অনুমোদন দিয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটির সম্পত্তি বিভাগ জানায়, বনানীর ৪৪ কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ে কর্পোরেশনের ৬০ কাঠা জমি রয়েছে। এর মধ্যে ৪৪ কাঠা জমিতে আগেই কর্পোরেশনের তিন তলা মার্কেট ছিল। মার্কেটের সামনে প্রধান সড়ক লাগোয়া প্রায় ১৬ কাঠা খালি জমি ছিল। দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল কেবল ৪৪ কাঠা জমিতে ভবন নির্মাণের জন্য। সামনের ১৬ কাঠা থাকবে খোলা জায়গা। নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিতে পরে সামনের খালি ১৬ কাঠা জমিও প্রকল্পে যুক্ত করে ৬০ কাঠা জমিতে ১৪তলা ভবন নির্মাণের চুক্তি করা হয়। কিন্তু নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোরাক সামনের ১৬ কাঠা খালি জমিতে ২৮তলা ভবন নির্মাণ করে। চুক্তি ভঙ্গ করে ২৮তলা ভবন না করতে বোরাককে চিঠি দিয়ে কাজ করতে বারণ করে সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন নিছক একটি চিঠি দিয়েই দায় সেরেছে। কাজ বন্ধের কোনো ব্যবস্থাই নেয় নি।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *