হবিগঞ্জ-৪ আসনে আ.লীগের মনোনয়ন চান সাবেক মেয়র শাহ মোঃ মুসলিম
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিবিদ শাহ মোঃ মুসলিম। তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন। অসহযোগ আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, স্বৈরাচার বিরোধীসহ বিভিন্ন আন্দোলনে থেকেছেন সামনের সারিতে। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হয়েই রাজনৈতিক জীবনের সূচনা।একাধিকবার নির্বাচিত হয়েছেন জনপ্রতিনিধি মাধবপুর পৌরসভার মেয়র হিসেবে। এবার এলাকার উন্নয়ন ও ত্যাগী দলীয় নেতাকর্মীদের মূল্যায়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনে। বতর্মান মাধবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তিনি। মনোনয়ন পেতে এলাকায় গণসংযোগ করছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে রাখছেন নিয়মিত যোগাযোগ।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী মুক্তিযোদ্ধা শাহ মোঃ মুসলিম হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা সদরে মাধবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বি-বাড়ীয়া সরকারী কলেজ থেকে বিএ পাস করেন।
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে জাতীরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের নির্দেশনায় মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর থানার বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তানী দালাল, রাজাকার, আল বদর, শান্তিবাহিনী ও পাক সেনাদের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ করেন।
১৯৬৯ সালে মাধবপুর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নৌকার পক্ষে প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেন এবং মাধবপুর থানার ১১টি ইউনিয়নের নেতৃত্ব দেন। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর অসহযোগ আন্দোলনে ছাত্রলীগের মিছিলে অংশগ্রহণ ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের মাধবপুর থানায় নেতৃত্ব প্রদান করেন।
১৯৭১ সালে ২৫ মার্চের পর গ্রামে-গ্রামে গিয়ে ছাত্র ও যুব সম্প্রদায়কে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণে উদ্ধুদ্ধ এবং সুসংগঠিত করেন। ১৯৭১ সালর জুন মাসের ২৯ তারিখে মাধবপুর থানার শাহজাহানপুর ইউনিয়নের তেলিয়াপাড়া বাঁশবাড়ী ক্যাম্পে এবং ভারতের ত্রিপুরাতে ট্রেনিং গ্রহণ ও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
স্বাধীনতা পর ১৯৭২ সালে মাধবপুর থানা ছাত্রলীগের সভাপতিএবং তারপর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মনোনীত হন। ১৯৮৫ সালের সম্মেলনে মাধবপুর থানা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০০১ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬-১৯৯০ সাল পর্যন্ত স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে মাধবপুর থানায় নেতৃত্ব প্রদান করেন। ২০০৩ সালে মাধবপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালের উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবাষির্কী সম্মেলনে দ্বিতীয়বারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হয়ে এখন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করছেন।
এরমধ্যে প্রথমে মাধবপুর উপজেলার ৫নং মাধবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। একইপদে ১৯৮৮ সালে পুনরায় নির্বাচিত হন। ২০০৯ সাল পর্যন্ত মাধবপুর পৌর সভার মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চান। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মাধবপুর পৌর সভায় পরপর দুইবার মেয়র পদে নির্বাচিত হন। তবে দলীয় এমপির বিরোধীতার কারণে গত পৌর নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাননি তিনি।
মনোনয়ন চাওয়ার বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা শাহ মোঃ মুসলিম বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে রাজনীতির সাথে জড়িত আছি। জীবনের শেষ সময়ে এসে নেতাকর্মী ও জনগণের কথা মাথায় রেখে নির্বাচনের মনোনয়ন চাইবো। নিজ দলীয় সাংসদ থাকলেও দলের নেতাকর্মীরা মূল্যায়িত হয়নি। কেন মূল্যায়ন হচ্ছে না বা মূল্যায়ন করা যাচ্ছে না, এই বিষয়টি আমাকে ভাবিয়েছে। এছাড়া গত ৪ বছরে এলাকার তেমন উন্নয়ন হয়নি। এলাকার মানুষ উন্নয়ন বঞ্চিত। ত্যাগী দলীয় নেতাকর্মীদের ছেলে-মেয়েদের যোগ্যতা থাকলেও তাদের চাকরি হয়নি। পক্ষান্তরে চাকরি পেয়েছে জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীরা। এলাকার উন্নয়ন ও নেতাকর্মীদের মূল্যায়নের জন্যেই নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী। এলাকার মানুষজন ও নেতাকর্মীরা নির্বাচনে অংশ নিতে আমাকে অনুরোধ করেছে। তাদের সমর্থন নিয়েই কাজ করছি।’
আওয়ামী লীগ নেতা শাহ মোঃ মুসলিম বলেন, ‘বর্তমান জনপ্রতিনিধির মাধবপুর-চুনারুঘাট উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের থেকে বিচ্ছিন্ন। হাইব্রিড ও বিএনপি-জামায়াতের লোকজন নিয়ে নিজের বলয় তৈরি করেছেন। আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করেন না। এমতাবস্থায় আগামী নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন দেয়া হলে নেতাকর্মীরা উৎসাহ নিয়ে নির্বাচন করবেন না।’
মনোনয়ন পাবার বিষয়ে আশাবাদী শাহ মোঃ মুসলিম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে এদেশের জন্যে যুদ্ধ করেছি। বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন, তা পূরণ হয়নি। বিষয়টি আমাকে ব্যথিত করেছে। আমার রাজনৈতিক কার্যাবলি, মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদান, রাজনৈতিক সফলতা, নেতাকর্মীদের সাথে সুসম্পর্ক এবং এলাকার উন্নয়ন কর্মকান্ডে জনপ্রতিনিধি হিসেবে ভুমিকা রাখার কারণে বঙ্গবন্ধু কন্যা আমাকে মনোনয়ন দেবেন বলে আশা করছি। আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে নৌকার বিজয় নিশ্চিত হবে বলে মনে করছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘বতর্মান সরকারের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার স্বার্থে এবং জঙ্গিবাদ মুক্ত দেশ গড়তে দলমত নির্বিশেষে নৌকার পক্ষে কাজ করতে সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
লেখক: বাবুল হোসেন খান
সভাপতি, শাহজাহানপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ
মাধবপুর, হবিগঞ্জ, সিলেট ।