সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে সভাপতি,সহ-সভাপতি, কোষাধ্যক্ষসহ ৮টি তে আঃলীগ, বাকি ৬ বিএনপি।
আদালত প্রতিনিধি:
দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের সংগঠন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে (২০২১-২০২২) আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের (সাদা প্যানেলের) জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন।
একই সংগঠনের সম্পাদক পদে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের (নীল প্যানেলের) আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
সাদা প্যানেলের প্রার্থী জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আব্দুল মতিন খসরু এবারের নির্বাচনে ২ হাজার ৯৬৮ ভোট পেয়েছেন। অন্যদিকে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নীল প্যানেল থেকে সভাপতি প্রার্থী মো. ফজলুর রহমান পেয়েছেন ২ হাজার ১৩২ ভোট। আব্দুল মতিন খসরু ৮৩৬ ভোট বেশি পেয়ে সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন।
এছাড়া সভাপতি পদে আরও তিনজন প্রার্থী রয়েছেন। তারা পর্যায়ক্রমে একই পদে বিদ্রোহী নীল প্যানেল থেকে অপর সভাপতি প্রার্থী ওয়ালিউর রহমান পেয়েছেন ১৮৯ ভোট। ইউনুস আলী আকন্দ পেয়েছেন ৮৮ ভোট এবং লাল প্যানেলের কে এম জাবির পেয়েছেন ৩৬ ভোট।
সংগঠনের সম্পাদক পদে বিজয়ী বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের (নীল প্যানেলের) আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল পেয়েছেন সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৯৫ ভোট। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক নির্বাচিত হলেন কাজল।
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আব্দুল আলীম মিয়া জুয়েল পেয়েছেন ২ হাজার ২০৪ ভোট। একই পদে অ্যাডভোকেট মির্জা আল মাহমুদ পেয়েছেন ৯৭ ভোট এবং মো. গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী পেয়েছেন ৩৮ ভোট।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২১-২২ মেয়াদের নির্বাচনে বুধ ও বৃহস্পতিবার (১০ ও ১১ মার্চ) দুই দিনব্যাপি ভোটগ্রহণ শেষে শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ভোট গণনা শুরু হয় সুপ্রিম কোর্টের দক্ষিণ হলে। এর পরে মধ্য রাতে ফলাফল ঘোষণা করেন সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচনী কমিটির আহ্বায়ক সাবেক বিচারপতি এ এফ এম আবদুর রহমান।
সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের এই সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটির ১৪টি পদের মধ্যে সভাপতি এবং একটি সহ-সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষসহ আটটি পদে বিজয়ী হয়েছেন সরকারদলীয় আওয়ামী লীগ সমর্থিত বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের (সাদা প্যানেলের) আইনজীবীরা।
অন্যদিকে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে সম্পাদক ও একটি সহ-সভাপতিসহ ছয়টি পদে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের (নীল প্যানেলের) আইনজীবীরা।
সহ-সভাপতির দুটি পদের একটিতে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত মো. জালাল উদ্দিন ২ হাজার ৭৪৭ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। অপরটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মুহাম্মদ শফিক উল্ল্যা ২ হাজার ৬১১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
কোষাধ্যক্ষ পদে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ড. মো. ইকবাল করিম ২ হাজার ৮৭৪ ভোট পেয়ে। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আব্দুল্লাহ আল মাহবুব পেয়েছেন ২ হাজার ১৫১ ভোট।
আর সহ-সম্পাদকের দুটি পদের মধ্যে একটিতে বিএনপি সমর্থিত মাহমুদ হাসান ২ হাজার ৭২৪ ভোট পেয়ে। আরেকটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাফায়েত সুলতানা রুমি ২ হাজার ২১৩ ভোটে বিজয়ী হয়েছেন।
এছাড়া সাতটি সদস্য পদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত মাহফুজুর রহমান রোমান; তিনি পেয়েছেন ২ হাজার ৮২৯ ভোট। দ্বিতীয় হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী এ বি এম শিবলী সাদেকীন; তিনি পেয়েছেন ২ হাজার ৮০৭ ভোট। তৃতীয় হয়েছেন বিএনপি সমর্থিত পারভিন কাওসার মুন্নি; তিনি পেয়েছেন ২ হাজার ৫৩৮ ভোট। চতুর্থ হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মিন্টু কুমার ম-ল; তিনি পেয়েছেন ২ হাজার ৫০৭ ভোট।
এছাড়া পঞ্চম হয়েছেন বিএনপি সমর্থিত এস এম ইফতেখার উদ্দিন মাহমুদ; তিনি পেয়েছেন ২ হাজার ৫০৫ ভোট। ষষ্ঠ হয়েছেন বিএনপি সমর্থিত রেদওয়ান আহমেদ রানজিব; তিনি পেয়েছেন ২ হাজার ৪৩৯ ভোট। সপ্তম হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত মুনতাসির আহমেদ; তিনি পেয়েছেন ২ হাজার ৪৩৭ ভোট।
এবারের নির্বাচনে মোট সাত হাজার ৭২২ জন ভোটারের মধ্যে দুইদিনে পাঁচ হাজার ৪৮৬ জন আইনজীবী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।
নির্বাচনে ১৪ পদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে সাতটি সম্পাদকীয় পদ এবং সাতটি কার্যনির্বাহী সদস্য পদ রয়েছে। দাখিল করা মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই এবং প্রত্যাহার শেষে ৫০ জন চূড়ান্তভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
সাতটি সম্পাদকীয় পদের বিপরীতে ২৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। সভাপতি হিসেবে পাঁচজন, দুটি সহ-সভাপতি পদের বিপরীতে ছয়জন, সম্পাদক পদে চারজন, কোষাধ্যক্ষ পদে চারজন এবং দুটি সহ-সম্পাদক পদের বিপরীতে সাতজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বাকি সাতটি কার্যনির্বাহী সদস্য পদের জন্য ২৩ জন আইনজীবী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এর মধ্যে থেকে ১৪ জন প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন আইনজীবীরা।
গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচন পরিচালনার জন্য সাবেক বিচারপতি এ এফ এম আবদুর রহমানকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের সাব-কমিটি গঠন করা হয়। তার নেতৃত্বে ভোট গণনা সম্পন্ন হয়।