সিলেটের নতুন ডিসির চ্যালেঞ্জ
দিনবদল ডেক্স: ‘চ্যালেঞ্জ’ নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করলেন জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার। প্রশাসন সৃষ্ট দুটি সমস্যা সমাধানে তাকে প্রথমেই কাজ করতে হচ্ছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে- সিলেটের জেলা প্রশাসন কার্যালয়কে দুর্নীতিমুক্ত করা ও অপরটি পাথর কোয়ারিগুলোতে ‘গণমৃত্যু’ কমানো। এই দুটি ঘটনায় বিদায়বেলা বিতর্ককে সঙ্গী করে সিলেট ছেড়েছেন সদ্য সাবেক জেলা প্রশাসক জয়নাল আবেদীন। এই মুহূর্তে সিলেটের জেলা প্রশাসন রয়েছে ইমেজ সংকটে। দুর্নীতির ঘটনায় জেলা প্রশাসনের কর্মকাণ্ডে মানুষের আস্থা কমেছে। দেখা দিয়েছে ক্ষোভও। জেলা প্রশাসক জয়নাল আবেদীন প্রায় দুই বছর আগে যখন সিলেটে যোগদান করেন তখন তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, সাদা শার্ট নিয়ে এসেছেন, সাদা শার্ট নিয়ে সিলেট ছাড়বেন। তার এই কথায় আশ্বস্ত হয়েছিলেন সিলেটবাসী। সিলেটের জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রম, বাল্যবিয়ে রোধসহ কয়েক সাফল্যময় কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সিলেটবাসীর সম্পৃক্ততা ছিল। এ দুটি সাফল্য সিলেটের জেলা প্রশাসনকে আলোকিত করেছে। কিন্তু প্রায় তিন মাস আগে সাবেক জেলা প্রশাসক জয়নাল আবেদীনকে সম্পদের বিবরণ চেয়ে নোটিশ প্রদান করে দুদক। আর নোটিশ প্রদানের পরপরই সিলেটে জেলা প্রশাসক জয়নাল আবেদীনের কর্মকাণ্ড নিয়ে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।
সর্বশেষ গত ৯ই ফেব্রুয়ারি বিকালে নিজ কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন জয়নাল আবেদীন। ওই সময় জেলা প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ কর্মচারী আজিজুর রহমানকে গ্রেপ্তার করতে অভিযান চালায় দুদক। এ সময় হামলার শিকার হন দুদক সিলেটের বিভাগীয় কর্মকর্তা শিরিন পারভিনসহ কর্মকর্তারা। ওই দিন জেলা প্রশাসনের কর্মচারীদের হামলায় দুদকের কর্মকর্তা মিসবাহউদ্দিন আহমদ আহতও হন। এ ঘটনায় সিলেটের জেলা প্রশাসনের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। এসব আলোচিত ঘটনা ঘটিয়ে সিলেট ছেড়েছেন জয়নাল আবেদীন। আর নতুন জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার যোগদান করেই সিলেটে নিজ কার্যালয় নিয়ে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন। বিশেষ করে জেলা প্রশাসনের কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনাই হচ্ছে তার অন্যতম কাজ।
গত বুধবার সিলেটের সাংবাদিকদের সঙ্গে মতনিমিয়কালে নতুন জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, ‘এখন বেশি কথা বলবো না। বড় কথা হচ্ছে- আস্থা রাখুন। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।’ তিনি দায়িত্ব পালনে সিলেটের সব মহলের সহযোগিতা কামনা করেন। সিলেটের নতুন জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ারের আরও একটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলোতে গণমৃত্যু কমিয়ে আনা। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের শারপিন টিলা, বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারিসহ কয়েকটি কোয়ারি ইতিমধ্যে মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে পাথর কোয়ারিগুলোতে অন্তত ১২ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। ইতিমধ্যে এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে প্রশাসনের গাফলাতি ও দায়িত্বে অবহেলার কারণেই। শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনায় ইতিমধ্যে কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও মাসুম বিল্লাহকে বদলি ও ওসি বায়েছ আলমকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। নতুন জেলা প্রশাসকের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে- সিলেটের শারপিন টিলা, বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারিসহ কয়েকটি পাথর কোয়ারিগুলোতে ঝুঁকিপূর্ণ পাথর উত্তোলন বন্ধ করে শ্রমিক মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা। আর এটি করতে হলে স্থানীয়ভাবে উপজেলা প্রশাসনকে শক্ত ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলামের নিজের এলাকা সিলেট।
বর্তমান সরকারের মন্ত্রীদের তালিকায় স্বচ্ছতার বিবেচনায় এই দুই মন্ত্রী অনেক বেশি এগিয়ে। নিজেরা স্বচ্ছ থাকায় সিলেটের প্রশাসনকে স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত দেখতে চায় সিলেটবাসী। একই সঙ্গে সিলেটের উন্নয়নের এক সুযোগ্য কাণ্ডারি হিসেবেই তারা জেলা প্রশাসককে ভবিষ্যতে মূল্যায়িত করতে চান