সব কাজ জনগণের সেবায় হতে হবে
রোববার,
১৮ ফাল্গুন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
০৩ মার্চ ২০২৪ ইং,
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:
জেলা প্রশাসকদের মানুষের সেবা, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ, কৃষি জমির সঠিক ব্যবহার, বিদ্যুতের সাশ্রয়ে মনোযোগী হওয়া, সব প্রকল্পে নজরদারি, জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলা, দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলাসহ নানা দিকনির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
৩ মার্চ রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে চার দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন ২০২৪ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব নির্দেশনা দেন তিনি।
ডিসিদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের অর্থেই আপনারা ও আমরা চলি। জনগণের সেবার কথা মাথায় রেখেই সব কাজ করতে হবে। আমাদের সরকার চায়, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে। ধারাবাহিকভাবে সরকারে আছি। এর অর্থ এই নয় যে, ক্ষমতা ভোগ করতে আসছি। আমি নিজেকে সেবক মনে করি। সেবা দিতে আসছি। ৯ মাসের যুদ্ধের আত্মত্যাগ আমাদের ভুললে চলবে না।
সমালোচনার নানা চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, অনেকে অনেক কথা বলে। সমালোচনা করে। আমরা এগুলো মাথায় রাখি না। আমরা সেবার কাজটি গুরুত্ব দেই, দেবো। পরশ্রীকাতরতা মানুষের চারিত্রিক দুর্বলতা। এটা আমাদের দেশের মানুষের আছে। আমি আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলি। কে কি বললো শুনি না। মানুষের কল্যাণে কাজ করি। আপনারাও সেটা করবেন।
প্রকল্পে নজরদারি করার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, প্রকল্পের জমি আপনারা দেন, এটি তদারকি নজরদারিও আপনারা করবেন। এর ভালোমন্দের দায়িত্ব আপনাদের নিতে হবে। জানি, এতে অনেকে অখুশি হবে, হোক। প্রকল্প গ্রহণে মানুষ কতটা উপকৃত হলো, সেটা বিবেচনা করেই প্রকল্প গ্রহণ করবেন। আমিও তাই করি। মানুষের উপকার ছাড়া কিন্তু আমি প্রকল্প গ্রহণ করি না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উপকূলীয় এলাকায় নদীগুলো খননে নজর দিতে হবে। ভূমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে তিন ফসলি জমি যেন নষ্ট না হয়। যত্রতত্র যাতে ভবন আর স্থাপনা না হয়। সবাই দালান কোঠা উঠাচ্ছে। কিন্তু কৃষি জমি যাতে নষ্ট না হয়। সেচ কাজে সোলার প্যানেল বসাবো আমরা। এটা আমাদের করতেই হবে। কারণ, এটা যত করতে পারবো, তত সাফল্য আসবে। বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে হবে। এতে আমাদের অনেক ভর্তুকি দিতে হয়।
তিনি বলেন, কোনো জমি যেন অনাবাদি না থাকে। এই উদ্যোগ আমাদের তরফ থেকেই নিতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, স্মার্ট বাংলাদেশ করবো, সেদিকেও নজর দিতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়ে তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতি রয়েছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। সেটা সংরক্ষণ করা ও মানুষের জন্য উপস্থাপন করা প্রয়োজন। তাহলে দেশকে ভালোবাসা ও দেশের প্রতি কর্তব্যবোধ সবার থাকবে, এটা থাকা দরকার। দেশের স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসসহ ইতিহাসগুলো আমাদের তরুণ সমাজকে অব্যাহতভাবে জানানোর উদ্যোগ নেওয়া দরকার। এগুলো যদি তারা না জানে, আমাদের এর চেয়ে বেশি দুর্ভাগ্য নেই।
শেখ হাসিনা বলেন, সব উপজেলা স্টেডিয়াম করার উদ্যোগ নিয়েছি। অনেক জায়গায় হয়নি। এটা দ্রুত করে ফেলা দরকার। প্রাইমারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে হবে। তাহলে যুব সমাজ এদিকে মনোযোগী হলে অন্যদিকে তারা ঝুঁকবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষকের পণ্য উৎপাদনে সহায়তা ও এটি সঠিক বাজারজাত করতে পারলে আমাদের আর পরনির্ভরশীল হতে হবে না। এ জন্য সমন্বিত উদ্যোগ আমাদের নিতে হবে। ১৫ বছরে আমাদের দেশ বদলে গেছে। আমার গ্রাম আমার শহর বাস্তবায়নে সবাই এর সুফল পাচ্ছে। যাদের ঘরবাড়ি আমরা করে দিয়েছি, তাদের খোঁজখবরও রাখতে হবে। তাদের জীবনমান উন্নতি হলো কি না, তারা ঠিকমত চলতে পারছে কি না, খবর রাখতে হবে। তাদের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে হবে।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বেশি পড়ছে আমাদের দেশে। সরকারি জমি, নদী, খাল, জলাশয়, পাহাড় ও প্রাকৃতিক পরিসর আমাদের রক্ষা করতে হবে। ভূগর্ভস্থ পানির চেয়ে ভূমির উপরিভাগের পানির ব্যবহারে সীমাবদ্ধ থাকতে পারলে ভালো। পানির কোয়ালিটি নিশ্চিতে পরিশোধন কেন্দ্রেগুলো সংস্কারেও নজর দিতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিরাট সমস্যা। এই বর্জ্য থেকে নদী নালা খাল বিল নষ্ট হচ্ছে। জেলা থেকে ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত যদি আমরা এটি ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি হাতে নিই। তাতে মানুষ এর সুফল পাবে।