ভালো নেই খালেদা জিয়া
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রক্তবমি বন্ধ হচ্ছে না। তাঁর লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করতে হবে। এ ছাড়া এন্ডোসকপি ও ক্লোনসকপিসহ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার। কিন্তু শারীরিক দুর্বলতার কারণে সেগুলোও করা সম্ভব হয়নি। পরীক্ষাগুলো করা গেলে তার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসার বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এমনটাই জানিয়েছেন মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা। এভারকেয়ার হাসপাতালের বিভিন্ন সূত্র ও বিএনপি নেতাদের কাছ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। সর্বশেষ অবস্থার বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা। তিনি ১৩ নভেম্বর থেকে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
খালেদা জিয়ার অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে এভারকেয়ার হাসপাতালের হেড অব মার্কেটিং জামিল আহমেদ বলেন, ‘তাঁর অবস্থা অপরিবর্তিত আছে। হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাঁকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।’ টানা তিন দিন ধরে খালেদা জিয়ার রক্তবমি হচ্ছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অত্যন্ত ক্রিটিক্যাল অবস্থায় আছেন। রক্তবমি বন্ধ হচ্ছে না। তাঁর শারীরিক অবস্থা মোটেও ভালো নেই। তিনি এতটাই অসুস্থ যে, তাঁকে দেশে আর চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে না। সর্বোচ্চ চিকিৎসা প্রয়োগের পরও দেশের হাসপাতালে ম্যাডামের স্বাস্থ্যের অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছে না। চিকিৎসকরা আজকেও তাঁকে বিদেশে পাঠানোর তাগিদ দিয়েছেন। কিন্তু সরকার অনুমতি দিচ্ছে না। খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে শুধু নয়, তাঁকে জীবন থেকে নিশ্চিহ্ন করতেও উঠেপড়ে লেগেছে সরকার। এর আগে দুপুরে এক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে স্লো পয়জন দেওয়া হয়েছিল কি না আমরা জানতে চাই। খালেদা জিয়ার বয়স ৭৫ বছরের বেশি। তাঁকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দিতে এক-এগারোর সময়ে যে চক্রান্ত শুরু হয়েছিল, এর অংশ হিসেবে একটি সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কারাগারে দুই বছরের বেশি সময় আটক রাখা হয়েছিল। স্যাঁতসেঁতে কারাগারের কক্ষে ইঁদুর, চিকা ঘোরাঘুরি করত। পরে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে তাঁকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এখন অনেকের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, সেই সময়ে খালেদা জিয়াকে কোনো স্লো পয়জনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল কি না। বিষয়টি আমরা পরিষ্কার করে জানতে চাই।’ চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলার পর বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান বলেন, ‘ম্যাডামের এন্ডোসকপি, ক্লোনসকপিসহ কিছু পরীক্ষার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু শারীরিক অক্ষমতার কারণে সেগুলো সম্ভব হয়নি। অন্তত ২০ জন চিকিৎসক ও নার্সের একটি দল প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চেষ্টা করেও পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো করতে সফল হতে পারেননি। তাদের সর্বশেষ পরামর্শ হচ্ছে ম্যাডামকে লিভার ট্রান্সপ্লান্টসহ উন্নত চিকিৎসার জন্য যে কোনো উপায়ে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া জরুরি।’ আমান উল্লাহ আমান গতকালও গভীর রাত পর্যন্ত এভারকেয়ার হাসপাতালে ছিলেন। খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের কাছে তাঁর চিকিৎসার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যা জানার মহাসচিবের কাছ থেকে জেনে নিন। আমি এ বিষয়ে কোনো কথা বলব না।’ খালেদা জিয়ার বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ কী নেবেন তাঁর বোন সেলিমা ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনিও কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য ম্যাডামের পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের সর্বমহলে সর্বোচ্চ আবেদন করা হয়েছে। সব ধরনের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু সরকার নানা রকম আইনি দোহাই দিয়ে তাকে অনুমতি দিচ্ছে না। এটা তাকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র বলে আমি মনে করি।’ তাঁর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে সেলিমা রহমান বলেন, ‘তিনি খুবই ক্রিটিক্যাল অবস্থায় আছেন। আমরা সব সময় একটা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও শঙ্কার মধ্যে দিন পার করছি। তার শারীরিক অবস্থার সর্বশেষ অবস্থার দিকে লক্ষ্য রাখছি।’ উল্লেখ্য, ৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়াকে ১৩ নভেম্বর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। লিভারে সমস্যা, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত তিনি। পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয় সরকারের কাছে। সরকারের পক্ষ থেকে এখনো ইতিবাচক সাড়া মেলেনি।