বিতর্ক নিয়ে বিদায় ঘন্টা ইসির

0

০১ নভেম্বর, ২০২১ ইং,
২২ কার্তিক , ১৪২৮ বঙ্গাব্দ,
মাত্র সাড়ে তিন মাস মেয়াদ রয়েছে কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। আগামী বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিদায় নেবেন তারা। এরপর সাংবিধানিক সংস্থাটিতে দায়িত্ব নেবে নতুন কমিশন। তাদের অধীনে হবে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন।

নানা বিতর্ক নিয়ে বিদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন। বিদায়ের আগে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনীর উদ্যোগ নিয়ে নতুন সমালোচনার মুখে পড়েছে ইসি। এ ছাড়া চলমান ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে খুনোখুনি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার হিড়িক নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে রাজনৈতিক মহলে। তবে বিতর্কের মধ্যেও শেষ মুহূর্তে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচন ভালো করার চেষ্টায় দেশের বিভিন্ন এলাকা সফর করছেন নির্বাচন কমিশনাররা। বিভিন্ন নির্বাচনী অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত করছেন। কাল সপ্তম ধাপে ৯ পৌরসভায় নির্বাচন, ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপ এবং ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন রয়েছে। সব মিলে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে নির্বাচন কমিশন। নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন শেষ করেই এই কমিশন বিদায় নিতে চায়।

নির্বাচন বিশ্লেষক ও সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। তাদের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। তারা বিদায়ের আগে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়ে আমাদের আরও ক্ষতি করে যাচ্ছে। নতুন যে সব সংশোধনীর প্রস্তাব তারা করছে তা জনবিরোধী। তিনি বলেন, বর্তমান কমিশন বিদায়ের আগে নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগের আইন করার উদ্যোগ নিতে পারত, কিন্তু তা করেনি। তাদের নিজের যে সব গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল তা করেনি।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিদায়ের আগে বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে এমন কোনো সংশোধনী না করার পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ। তিনি বলেছেন, আরপিও-তে গুরুতপূর্ণ কোনো সংশোধনী থাকলে তা করা যেতে পারে। বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে এমন কোনো সংশোধনী না করাই ভালো। সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, আইন সংশোধনীর কাজ তারা আগে করলেই পারতেন। শেষ মুহূর্তে বির্তক সৃষ্টি হয় এমন কিছু করা ঠিক হবে না।

আইন সংশোধন নিয়ে আলোচনা : বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) ১০টি সংশোধনী আনার প্রস্তাব করা হচ্ছে। গত সোমবার নির্বাচন কমিশনাররা এ বিষয়ে বৈঠক করেছেন। তাতে আরপিওতে ১০টি ধারায় সংশোধনী আনার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে আছে ক্ষুদ্র ঋণ ও বিল খেলাপিদের বিল পরিশোধে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগের দিন পর্যন্ত সময় দেওয়া, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে সময় আরও ১০ বছর বাড়ানো, নিবন্ধনের জন্য সংশোধিত গঠনতন্ত্র ৩০ দিনের মধ্যে জমা দেওয়া, নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের পাশাপাশি শারীরিক প্রতিবন্ধী ও বয়স্কদের পোস্টাল ভোট দেওয়ার সুযোগ রাখা ইত্যাদি। এ ছাড়া পোস্টাল ভোট দেওয়ার জন্য আবেদন অনলাইনভিত্তিক করারও প্রস্তাব রয়েছে। শেষ সময়ের এই সংশোধনী নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। আবার কেউ কেউ এর ভালো দিক দেখছেন।

কীভাবে হবে নতুন কমিশন গঠন : সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৮(১) এ বলা হয়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত আইনের বিধানাবলি-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করিবেন। সংবিধানের আলোকে রাষ্ট্রপতি সবসময় সিইসি ও ইসি নিয়োগ দিলেও ২০১২ সালে কমিশন হয় সার্চ কমিটির মাধ্যমে। সে সময় প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি।

এদিকে বিগত সময়ের মতো এবারও সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের আভাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ জন্য আগামী জানুয়ারিতে সার্চ কমিটি গঠন করা হবে। এরপর গঠন হবে নতুন নির্বাচন কমিশন। তবে সার্চ কমিটি নির্বাচন কমিশন ঠিক করে দেবে না, তারা রাষ্ট্রপতিকে সহায়তা করতে কিছু নাম বাছাই করে দেবে। রাষ্ট্রপতি তা থেকে নিয়োগ দেবেন। স্বাধীনতার পর ১২ জন সিইসি ও ২৭ জন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ পেয়েছেন। এর মধ্যে সিইসি পদে বিচারপতি এ কে এম নুরুল ইসলাম সাড়ে সাত বছর ছিলেন।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে ২০১২ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি একটি সার্চ কমিটি গঠন করেন। তাদের মনোনীত ব্যক্তিদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেন নতুন কমিশনের সদস্যদের। এরপর ২০১৭ সালে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদও একই পদ্ধতি অনুসরণ করেন। তবে ২০১২ সালে চার সদস্যের সার্চ কমিটির পরিবর্তে ২০১৭ সালে ছয় সদস্যের কমিটি করেছিলেন রাষ্ট্রপতি। ওই কমিটিতে দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে নেওয়া হয়েছিল।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *