পাপুলের এমপি পদের কী হবে?

0

ডেস্ক রিপোর্ট:

মানবপাচারের দায়ে কুয়েতের আদালতে দ-প্রাপ্ত লক্ষ্মীপুর-২ আসনের (স্বতন্ত্র) সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের পদ থাকবে কি-না, তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইন অনুযায়ী কোনো এমপির বিরুদ্ধে কমপক্ষে দুই বছরের সাজা হলে তিনি এই পদে থাকতে পারেন না। এখন পাপুলের পদের কী হবে, সে বিষয়ে রায়ের কপি না পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলতে পারছেন না আইনজীবী ও সরকারের সংশ্লিষ্টরা।

মানব ও মুদ্রাপাচারের মামলায় গত ২৮ জানুয়ারি কুয়েতের ফৌজদারি আদালতের বিচারক আবদুল্লাহ আল ওসমান বাংলাদেশের এমপি পাপুলকে চার বছরের কারাদ- দেন। পাশাপাশি ৫৩ কোটি টাকা জরিমানাও করা হয়।

দুর্নীতির দায়ে দেশের একজন এমপির বিদেশের মাটিতে এভাবে দ-িত হওয়ায় লজ্জাবোধ করছেন আইনজীবীরা। খোদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনই বিষয়টিকে ‘লজ্জার’ বলেছেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার ও আইনমন্ত্রী বলেছেন, রায়ের কপি পেলে সংবিধান অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পাপুলকে ৬ জুন ২০২০ সালে মানবপাচার, ভিসা জালিয়াতি ও অর্থপাচারের অভিযোগে গ্রেফতার করে কুয়েতের পুলিশ। সে দেশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা তার বিরুদ্ধে মানবপাচার ও প্রায় ৫৩ মিলিয়ন কুয়েতি দিনার (প্রায় এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা) পাচারের বিষয়ে তথ্য প্রমাণ পায়।

এছাড়া তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে তল্লাশি চালিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও প্রমাণ সংগ্রহ করে কুয়েতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর পাপুলের মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হয়। দ্রুত বিচার শেষে পাপুলের সাজা হয়। পাশাপাশি তার কাজে সহায়তাকারী হিসেবে কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা মাজেন আল জাররাহসহ সে দেশের দুই কর্মকর্তাকেও চার বছরের কারাদ- দেন আদালত।

কুয়েতে পাপুল মানব ও মুদ্রাপাচারের মামলায় আটক হওয়ার পর থেকেই তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম, মেয়ে ওয়াফা ইসলাম ও শ্যালিকা জেসমিন প্রধানের সম্পদের অনুসন্ধান চলছে। এ পরিবারের চার সদস্যের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন এবং ১৪৮ কোটি টাকা পাচারের প্রমাণও পেয়েছে দুদক। এ অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছে সংস্থার পক্ষ থেকে। এছাড়া জব্দ করা হয়েছে ব্যাংক হিসাব।

এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের পদের বিষয়ে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এমপি পদ সাংবিধানিক। সেক্ষেত্রে সংবিধানেই ঠিক করে দেয়া আছে, যদি সংসদ সদস্য নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন, তার পদ থাকবে কি-না। রায়ের কপি পেলে সংবিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্য পাপুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংবিধানের ৬৬ (২)(ঘ) অনুচ্ছেদে স্পষ্ট করে বলা আছে যে, কোনো সংসদ সদস্য যদি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন এবং ন্যূনতম দুই বছর কারাদ-ে দ-িত হন, তাহলে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হওয়ার কথা। সেখানে তিনি চার বছরের দ-ে দ-িত হয়েছেন। আমরা তো শুধু কাগজপত্রে (সংবাদমাধ্যমে) জানতে পেরেছি। এখনো আদেশ বা সেই রায়ের অনুলিপি কিন্তু আমরা পাইনি। আমরা এখন রায়ের কপি পাওয়ার জন্য পদক্ষেপ নেব। কপি পাওয়ার পর অবশ্যই স্পিকার সাংবিধানিক ব্যবস্থা নেবেন, যদি তিনি আপিল করে দ- স্থগিত করতে না পারেন। কিন্তু আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত কাগজপত্র না পাচ্ছি, ততক্ষণ পর্যন্ত কাগজপত্র সংরক্ষণ করার চেষ্টা করবো, এর বেশিকিছু আপাতত বলতে পারছি না।’

আজ ৩০ জানুয়ারি এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘আপনারা জানেন উনি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন না, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ছিলেন। এটা খুবই দুঃখজনক, অবশ্যই এটা দুঃখজনক, লজ্জাজনক ব্যাপার।’

ড. মোমেন বলেন, ‘রায়ের বিষয়ে কুয়েত সরকার আমাদের এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। বিষয়টা তারা আমাদের সরকারিভাবে জানালে পরে আমরা সংসদকে জানাব। তখন বিধি মোতাবেক উনার সম্পর্কে কী করা হবে, দেখা যাবে।’

এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা দুঃখজনক ঘটনা। সংসদ সদস্য পদ তো থাকবে না। তবে কুয়েতে বাংলাদেশের যে রাষ্ট্রদূত রয়েছেন, তিনি দেশের আইন মন্ত্রণালয়কে জানালেই স্পিকার ব্যবস্থা নেবেন। আমরা পত্রপত্রিকা থেকে জেনেছি কুয়েতে এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের সাজা হয়েছে। এক্ষেত্রে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল করার বিষয় পদক্ষেপ নিতে রায়ের কপি আসতে হবে না।’

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *