গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া বহিষ্কার

0

বিশেষ প্রতিনিধি:

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়াকে বহিষ্কার করে কাউন্সিল ডেকেছে দলটির একাংশ। এর মধ্য দিয়ে কার্যত গণফোরাম ভেঙেই গেল। যদিও দু পক্ষের কেউ তা সরাসরি বলছেন না। দলটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলছেন, এর সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। নতুন কাউন্সিলের নেতৃত্ব দেওয়া সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু বলছেন, দলের কী হবে তা কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত হবে।

শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে গণফোরামের একাংশ বর্ধিত সভা করে।

সভা শেষে সংবাদ সম্মেলেন কিছু সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, আগামী ২৬ ডিসেম্বর জাতীয় কাউন্সিল হবে। এ কাউন্সিলের জন্য মোস্তফা মহসিন মন্টুকে আহ্বায়ক করে ২০১ সদস্যের একটি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়। সংগঠনের শৃঙ্খলা ও গঠনতন্ত্র অমান্য করে সংগঠনের ঐক্য ও স্বার্থবিরোধী কর্মকা-ের জন্য গণফোরামের আহবায়ক কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া, সদস্য মোহসিন রশিদ, আওম শফিক উল্লাহ এবং মোশতাক আহমেদকে বহিষ্কার করা হয়।

জানতে চাওয়া হলে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটার (কাউন্সিল ডাকা অংশ) সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তাঁরা তো দলে থেকে এগুলো করতে পারে না। তাঁরা নিজেরদের মতো করছে, কী করছে তাঁরাই জানে। আমরা ঐক্যের জন্য লেগে থাকব। সুস্থ রাজনীতির জন্য কাজ করে যাচ্ছি, কাজ করে যাব।’

কাউন্সিল ডাকা প্রসঙ্গে ড. কামাল বলেন, ‘ওরা এ রকম সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তারা কেউ না। আমাদের দলের সঙ্গে তো তারা কোনো সম্পর্কই রাখলেন না।’
গণফোরাম দু ভাগ হয়ে গেল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল জানান, তা হয়নি। তবে সব বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করবেন বলেও জানান।

আজকের বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব করেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণফোরামে যোগ দেওয়া আবু সাইয়িদ। এ ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন দলটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, সাবেক নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা জগলুল হায়দার আফ্রিক, আসাদুজ্জামান, খান সিদ্দিকুর রহমান, এম এ মতিন প্রমুখ। এ ছাড়া সভা থেকে জানানো হয় তাঁদের সঙ্গে ২৮৩ জন জেলা প্রতিনিধি এ বর্ধিত সভায় অংশ নিয়েছেন।

বর্ধিত সভায় ড. কামাল হোসেন প্রসঙ্গে মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, ‘ওনাকে বার বার বলা হয়েছে, দলীয় স্বার্থে, সংগঠনের স্বার্থে সবার সঙ্গে বসে সমস্যার সমাধান করার জন্য। আমরা বললে তিনি বসার জন্য রাজী হন। পরে কারও প্ররোচণায় তিনি আর বসেন না।’ দলটির বতর্মান সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে মন্টু বলেন, ১৮ মাসের মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো সভা ডাকা হয়নি।

ড. কামাল হোসেন আপনাদের এই অংশের সঙ্গে আছেন কিনা জানতে চাইলে মন্টু বলেন, ‘আমরা আশা করি আছেন।’ তিনি বলেন, ড. কামাল হোসেন সভাপতি হিসেবে থাকবেন কিনা তা কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত হবে। পুরোনোদের নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য ড. কামালের প্রতি আহ্বান জানান মন্টু।

গণফোরাম ভেঙে গেল কিনা জানতে চাইলে মন্টু জানান, দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত হবে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণফোরামে যোগ দিয়ে নির্বাচন করেন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া ছেলে রেজা কিবরিয়া। তাঁকে সভাপতিম-লীর সদস্য করা হয়।

বর্ধিত সভা নিয়ে রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘এটা গনফোরামের কোনো মিটিং ছিল না। যারা মিটিং ডেকেছেন তাদের এ ধরনের মিটিং ডাকার কোনো এখতিয়ার নেই।’ তিনি জানান, ড. কামালসহ দলের নেতারা তাঁদের সঙ্গেই থাকবেন। দল করার অধিকার যে কারও আছে। কিন্তু গণফোরামের নামে তাঁরা কোনো কিছু করতে পারে না। নিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে রেজা কিবরিয়া বলেন, এদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি আগ্রহী নয়।

২০১৯ সালে ২৬ এপ্রিল গণফোরামের কাউন্সিল হয়। সে কাউন্সিলে উপস্থিত ছিলেন না তখনকার সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু। রেজা কিবরিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করার গুঞ্জন তখন থেকেই ছড়িয়ে পড়ে। এরপর একই বছরের ৫ মে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ড. কামাল হোসেন রেজা কিবরিয়াকে সাধারণ সম্পাদক বানিয়ে ১১১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষণা দেওয়া হয়। সেখানে মন্টুকে এই কমিটির এক নম্বর সদস্য করা হয়।

গণফোরামের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য হতে থাকে এ বছরের শুরুর দিকে। ৩০ জানুয়ারি ‘দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ’ করার দায়ে দলের প্রচার সম্পাদক খান সিদ্দিক, সাংগঠনিক সম্পাদক লতিফুল বারী হামীম ও হেলাল উদ্দিনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। তাঁদের সাময়িক বহিষ্কারও করা হয়। এই বহিষ্কৃতরাও রেজা কিবরিয়া ও দলীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশতাক আহমেদকে তখন বহিষ্কার করেন।

এ বছরের ৪ মার্চ গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেন ড. কামাল। পরে ১২ মার্চ ৭২ জনের একটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। যার সভাপতি ড. কামাল হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া। এই কমিটিকে রাখা হয়নি মোস্তফা মহসিন মন্টু, সুব্রত চৌধুরী, আবু সাইয়িদসহ অনেক কেন্দ্রীয় নেতাকে। আহ্বায়ক কমিটিতে জায়গা না পাওয়া নেতারা এবং ড. কামাল হোসেন ও রেজা কিবরিয়ার নামে গণফোরমের নামে ভিন্ন ভিন্ন সংবাদ বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। আজকের ডাকা এ বর্ধিত সভার সঙ্গেও গণফোরামের কোনো সংশ্লিস্টতা নেই বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *