দেশের চতুর্থ বৃহত্তম ইপিজেড, কুমিল্লা ইপিজেড।

0
কুমিল্লা , ইপিজেড

ইপিজেড, কুমিল্লা ,

শুক্রবার,
২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
০৭ জুন ২০২৪ ইং,

জ্যেষ্ঠ সংবাদদাতাঃ
কুমিল্লা রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ এলাকা দেশের মধ্যে চতুর্থ বৃহত্তম ইপিজেড । ১৯৯৯ সালের ৭ মার্চ কুমিল্লা বিমানবন্দর এলাকার ২৬৭ দশমিক ৪৬ একর জায়গা নিয়ে কুমিল্লা ইপিজেড প্রকল্প শুরু হয়।

এই ইপিজেডে দেশের বিনিয়োগকারী ছাড়াও বিনিয়োগ করেছে চীন, জাপান, তাইওয়ান, হংকং, সিঙ্গাপুর, কানাডা, নেদারল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া ।

বর্তমানে কুমিল্লা ইপিজেডে দেশি-বিদেশি ও যৌথ মালিকানার ৪৭ টি চালু প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৩৫ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করছেন। এখানে ৪৯টি অথবা ৫৪টি প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন হচ্ছে বিভিন্ন পণ্য । (আরও ৪টি অথবা আরও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে পণ্য উৎপাদনে )। বিদেশি বিনিয়োগে ২৭টি, দেশি-বিদেশি যৌথ বিনিয়োগে ১৩টি এবং শুধু দেশীয় বিনিয়োগে চলছে ৮টি প্রতিষ্ঠান।

সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে এখানে রয়েছে একটি আধুনিক মেডিক্যাল সেন্টার।এখানকার প্যাথলজিক্যাল ল্যাব্রটারিতে, আলট্রা সউন্ড গ্রাফি , ইসিজি , এক্সরে ,রক্তপরীক্ষার যন্ত্রপাতি সহ প্রায় সকল ধরণের পরীক্ষা নিরীক্ষা সেবা পাচ্ছে ইপিজেডে কর্মরত শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তারা। এছাড়াও রোগীর জরুরী প্রয়োজনে উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে রয়েছে এ্যাম্বুলেন্স সেবা।

বেপজা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, কুমিল্লাঃ কুমিল্লা ইপিজেডের ৫০ হাজার কর্মীদের জন্য শিক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে । এখানে কর্মরত শ্রমিকদের সন্তানরা যাতে সুশিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয় তা নিশ্চিত করতে ব্যাপজা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ।বর্তমানে এখানে ১ম শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেনী পর্যন্ত শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে এখানে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যাবস্থা চালু কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এ পর্যন্ত কুমিল্লা ইপিজেডে মোট বিনিয়োগ এসেছে ৪৪৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এবং রপ্তানী হয়েছে ৩ হাজার ৭৯৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের পণ্যসামগ্রী ।

কুমিল্লা ইপিজেডে উৎপাদিত হচ্ছে পোশাক, গার্মেন্টস এক্সেসরিজ, স্যুয়েটার, ফেব্রিক্স, টেক্সটাইল ডাইজ এন্ড অক্সিলিয়ারিজ, ইলেক্ট্রনিক্স পার্টস, লাগেজ, মেডেল, পেপার এলিমেনেটিং ব্রাশ, ব্যাগ, ইয়ার্ণ, প্লাস্টিক পণ্য, হেয়ার ও ফ্যাশন এক্সেসরিজ, মেডিসিন বক্স, আই প্যাচ, কার্পেট, গ্লোভস, ফুটওয়্যার ও ফুটওয়্যার আপারস, ক্যামেরা কেইসসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্যসামগ্রী। ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে কুমিল্লা ইপিজেডের অবস্থান হওয়ায় পণ্য পরিবহনে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে।

গত ৫ বছরে কুমিল্লা ইপিজেডে বিনিয়োগ ও রপ্তানির বাৎসরিক চিত্রঃ
২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বিনিয়োগ হয়েছে ৩১ দশমিক শূন্য ৫ মার্কিন ডলার, ওই অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ৪৯০ দশমিক ৭৫ মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্যসামগ্রী।
২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বিনিয়োগ হয়েছে ৩৮ দশমিক ৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ওই অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ৪৬৪ দশমিক ৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্যসামগ্রী।
২০২০-২০২১ অর্থবছরে বিনিয়োগ হয়েছে ৬১ দশমিক শূন্য ২ মার্কিন ডলার, ওই অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ৫৬৫ দশমিক ৮৫ মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্যসামগ্রী।
২০২১-২০২২ অর্থবছরে বিনিয়োগ হয়েছে ৬৭ দশমিক ৪৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ওই অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ৮১৪ দশমিক ৮২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্যসামগ্রী ।
২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বিনিয়োগ হয়েছে ৫০ দশমিক ২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার , ওই অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ৭৯০ দশমিক ৯৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্যসামগ্রী।

কুমিল্লা ইপিজেডে একটি তরল বর্জ্য পরিশোধনাগার (সি ই টি পি) রয়েছে । কেন্দ্রীয় এই পরিশোধনাগারে পরিশোধন করার ক্ষমতা রয়েছে ১৫ হাজার ঘণমিটার বর্জ্য।

এই তরল বর্জ্য পরিশোধনাগার সি ই টি পি উদ্বোধন করা হয় ২০১৫ সালে । ওই সময় থেকে এ ইপিজেডের শিল্প কারখানাগুলো হতে পৃথক নেটওর্য়াকের মাধ্যমে সম্পূর্ণ তরল বর্জ্য সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারে নেওয়া হয়।
রাসায়নিক ও জৈবিক উভয় পদ্ধতিতে প্রতিদিন গড়ে ৮ হাজার ঘণমিটার বর্জ্য শতভাগ পরিশোধনের মাধ্যমে নির্মল পানিতে পরিণত করে নিষ্কাষণ করা হয়।

প্রতি মাসে দুইবার সিইটিপির আউটলেটের পানি বেপজা গ্রীণ ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া বিশেষজ্ঞ ও মনিটরিং টিম এই কার্যক্রম পরীক্ষা ও পরিদর্শন করে থাকেন।

ফলে কুমিল্লা ইপিজেডের সি ই টি পি থেকে নিঃস্বরিত পানির মাধ্যমে পরিবেশ, নদী-নালা, কৃষি জমি ও জীব বৈচিত্র্যের কোনরুপ ক্ষতি হয় না।
কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন এলাকার খাল ও ড্রেনের ময়লা পানি ও বর্জ্য ইপিজেডের সীমানা প্রাচীর ঘেঁষা ড্রেনের মাধ্যমে খাল-ড্রেন হয়ে ডাকাতিয়া নদীতে পতিত হয়।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *