নাচ-গান ও উৎসবে কাটল এতিম শিশুদের ঈদ
১৬ আষাঢ় ১৪৩০ বঙ্গাব্দ,
৩০ জুন ২০২৩ ইং
গোপালগঞ্জে প্রতিনিধিঃ
কেউ গান গাইছে নিজের মত সুরে। কেউ সেই গানে বা অন্য গানের তালে তালে নাচছে। অনেকেই অকারণ উচ্ছ্বাসে দৌড়ে বেড়াচ্ছে, খেলছে মাঠ জুড়ে।
২৯ জুন বৃহস্পতিবার দিনভর হাসি আর কোলাহলে এমন ঈদ উদযাপনের দেখা মিলেছে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার শেখ রাসেল দুঃস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে। কেন্দ্রটিতে থাকা প্রায় ৩০০ বাবা-মা হীন এতিম শিশুর এই উৎসবের আনন্দ বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল কোরবানি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার দেওয়া গরু। ঈদের আগের দিন রাতে কোরবানির পশুটি যখন পুনর্বাসন কেন্দ্রে পৌঁছায় তখন সেটি দেখতে ভিড় জমিয়েছিল শিশুরা।
জানা যায়, কারও বাবা নেই, কারও মা নেই- কেন্দ্রটিতে এমন শিশু রয়েছে প্রায় ৩০০। অন্যসব শিশুদের মতই ঈদের দিনটি তাদের জন্যও খুশির বার্তা নিয়ে আসে। তবে বছরের পুরোটা সময় চার দেয়ালের মধ্যে কাটানো এই এতিম শিশুদের জন্য বিশেষ আয়োজনে ঈদের এই দিনটি রঙিন হয়ে ওঠে বাধভাঙা উল্লাসে। ঈদের দিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর শিশুদের গোসল করিয়ে পরিয়ে দেওয়া হয় নানা রঙের বাহারি পোশাক। এরপর বাঙালির চিরায়ত নিয়ম মেনে তাদের খেতে দেওয়া হয় সেমাই ও খিচুড়ি।
এরপর শিশুরা যোগ দেয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। যে যেমন খুশি অংশ নেয় অনুষ্ঠানে আবার কেউ বা শুধু উপভোগ করে। দুপুরে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হয় শিশুদের মাঝে। খাবারের মধ্যে ছিল পোলাও, গরুর মাংস, ডাল, সালাদ, দই, মিষ্টি ও সেভেনআপ।
বিকালে তারা কেন্দ্রের শিশু পার্কে আনন্দঘন সময় কাটায়। পার্কের বিভিন্ন রাইডে চড়ে তারা আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে। রাতেও তাদের জন্য উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হয়। এভাবেই উৎসবমুখর পরিবেশে শেখ রাসেল দুস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের ৩০০ শিশুর ঈদ কেটে যায়। শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে থাকা শিশু সাদিয়া বলে, “ঈদে আমরা এখানে খুবই আনন্দ করি। ইচ্ছামত নাচ-গান করি। সকাল, দুপুর ও রাতে আমাদের জন্য স্পেশাল খাবার ছিল।
“প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া গরুটি পেয়েও আমরা খুবই আনন্দিত। সব মিলিয়ে ঈদের আনন্দ আমাদের মা-বাবার কষ্ট ভুলিয়ে দিয়েছে।” মারিয়া নামে আরেকটি শিশু বলল, “ঈদের দিনটা আমাদের অনেক আনন্দ হয়। অন্যরা যেমন পরিবারের সঙ্গে ঈদ করে আনন্দ পায় আমরাও এখানে তেমন আনন্দ করি। কখনো মা-বাবার জন্য কষ্ট হলে তখন শিক্ষিকাকেই ‘মা’ বলে ডাকি।” শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক শিলা সাহা বলেন, “আমি এখানে আসার পর শিশুদের সঙ্গেই ঈদ উদযাপন করি। এখানকার তিনশ শিশুর ‘মা’ আমি। ওদের আনন্দই এখন আমার আনন্দ।
“ঈদের দিন সকালে ওরা ঘুম থেকে ওঠার পর গোসল শেষে নতুন পোশাক পরেছে। এরপর সেমাই ও খিচুড়ি খেয়েছে। এরপর তারা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে যে যার মত আনন্দ করেছে। ”
প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া গরু ও ঈদ উপহার শিশুদের ঈদের আনন্দ বহুগুণ বাড়িয়েছে।”