পাকা বাড়িতে দেশের ৪৮ শতাংশ মানুষের বসবাস

0

১৩ আষাঢ় ১৪২০ বঙ্গাব্দ,
২৭ জুন ২০২৩ ইং,
নিঊজ ডেক্সঃ

নিজেদের বাড়িতে কমপক্ষে ইট-সিমেন্টের পাকা দেয়াল তোলা বাড়ি (তবে পাকা ছাদ নয়) আছে এমন পরিবারের হার ৪৮ শতাংশ। অর্থাৎ দেশের প্রতি ১০০ পরিবারের মধ্যে ৪৮টি পরিবার পাকা দেয়ালের বাড়িতে বসবাস করেন।
২০১০ সালেও এ হার ছিল ২৫ শতাংশ। গত এক যুগে মানুষের বাসস্থানের পরিবর্তন হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রকাশিত খানা-আয় ব্যয় জরিপ ২০২২ এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। জরিপে দেখা যায়, ২০২২ সালে এসে দেশের মোট পরিবারের ৪৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ পরিবারের বসবাস ইট-সিমেন্টের তৈরি দেয়াল আছে এমন বাড়িতে। ২০১৬ সালে এ হার ছিল ৩০ দশমিক ৫ শতাংশ, ২০১০ সালে ছিল ২৫ দশমিক ১২ শতাংশ। তবে ইটের দেয়ালের বাড়ির হার গ্রামের চেয়ে শহরে দ্বিগুণেরও বেশি। গ্রামের ৩৫ দশমিক ৭ শতাংশ পরিবারের বসবাস ইটের দেয়ালের বাড়িতে, যেখানে শহরের পরিবারের হার ৭৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

জরিপে বলা হয়, দেশের কাঠের দেয়ালে বসবাস করেন এমন পরিবারের সংখ্যা শতকরা ৪২ ভাগ (৪১.৯৭)। ২০১০ সালেও এ পরিবার ছিল শতকরা ৩৮ দশমিক ৪৬ ভাগ। ২০১৬ সালে এ হার বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৪৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। স্বাভাবিকভাবে এ ক্ষেত্রে এগিয়ে গ্রামের বাসিন্দারা। গ্রামের ৫১ শতাংশ পরিবারের বসবাস কাঠের দেয়ালের বাড়িতে, যেখানে শহরের পরিবারগুলোর হার ২২ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

তবে বাসস্থানের ক্ষেত্রে ধারাবাহিক উন্নতি দেখা গেলেও এখনো দেশের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মাটির ঘরে বসবাস করছেন। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২২ সালে এসে দেশে মাটির তৈরি দেয়ালের বাড়িতে বসবাস করেন প্রতি ১০০ পরিবারের মধ্যে ৭টি পরিবার। ২০১০ সালেও এমন পরিবার ছিল প্রায় ১৭টি। ২০১৬ সালে তা কমে দাঁড়ায় ১১টিতে। সর্বশেষ এসে তা আরও কমেছে। তবে শহরের চেয়ে গ্রামে স্বাভাবিকভাবেই এ হার অনেক বেশি। গ্রামের প্রতি ১০০ পরিবারের মধ্যে ১০টি পরিবারে এ ধরনের বাড়ি আছে। শহরের মধ্যে এমন পরিবারের সংখ্যা শতকে ২টি।
বাঁশ, খড়, গোলপাতা বা ছনের তৈরি দেয়ালে বসবাস করেন এমন পরিবারের সংখ্যা প্রতি ১০০ পরিবারের মধ্যে প্রায় ৩টি পরিবার। ২০১০ সালেও এমন পরিবার ছিল ১৯ ভাগ, ২০১৬-তে এসে তা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯ ভাগে।
তবে দেয়াল পাকা থাকলেও পাকা ছাদের বাড়ির সংখ্যা তুলনামূলক কম। বাড়ির ছাদ পাকা এমন পরিবারের সংখ্যা প্রতি ১০০টি পরিবারের মধ্যে ২২টি। ২০১৬ সালে এমন পরিবারের সংখ্যা ছিল ১১টি, ২০১০ সালে ছিল ১০টি।

তবে গ্রামে তুলনামূলকভাবে পাকা ছাদের বাড়ির সংখ্যা খুবই কম। এ সংখ্যা গ্রামের চেয়ে শহর এলাকায় প্রায় চারগুণ। গ্রামে প্রতি ১০০টি পরিবারের মধ্যে ১২টি পরিবারের বাড়ির ছাদ ইট-সিমেন্টের। আর শহর এলাকায় প্রতি ১০০টি পরিবারের মধ্যে ৪৪টি পরিবারের বাড়ির ছাদ পাকা দেখা গেছে।
জাতীয় পর্যায়ে বাড়িতে টিনের ছাদ রয়েছে এমন পরিবারের সংখ্যা প্রতি শতকে ৭৬টি। এ সংখ্যা ২০১৬ সালে ছিল ৮৪টি, ২০১০ সালে ছিল ৮১টির কিছু বেশি। অর্থাৎ ১২ বছরে গড়ে ৫টি বাড়ির ছাদ টিন থেকে উন্নীত হয়ে পাকা ছাদে রূপান্তরিত হয়েছে।
টিনের বাড়ির সংখ্যা শহর এলাকার চেয়ে গ্রামেই বেশি। গ্রামের ১০০টি পরিবারের মধ্যে ৮৬টি পরিবারের বাড়ির ছাদ টিনের তৈরি। এ হিসাবটি শুধু বাড়ির ছাদ টিনে তৈরি হলেই করা হয়েছে। অনেক পরিবারের দেয়াল পাকা কিন্তু বাড়ির ছাদ টিনের। এমন পরিবারগুলোকেও এর আওতায় আনা হয়েছে। শহর এলাকায় শতকরা ৫৫টি পরিবারের বাড়ির ছাদ টিনের। গ্রামে গৃহহীন মানুষ খুব চোখে পড়ে না। অন্যের বা আত্মীয়ের জমিতে বা নদীপাড়ের খাসজমিতে মানুষ ঘর বাঁধে। উপকূল অঞ্চলে বেড়িবাঁধের ওপরও বহু মানুষ ঘর বেঁধে বাস করে। যেসব মানুষের এসব বিকল্পের কোনোটিই নেই, তারা চলে আসেন শহরে। শহরে এসেও সব মানুষ ঘরে বাস করতে পারেন না।
দারিদ্র্যের সঙ্গে গৃহহীন পরিস্থিতির সম্পর্ক আছে। নদীভাঙন প্রতি বছর বহু মানুষকে গৃহহীন করছে। ১৯৭৩ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ১ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়। এর মধ্যে একটি বড় অংশ বসতভিটা। গ্রামে অনেক পরিবারের শুধু বসত ভিটাটুকুই থাকে। সেই ভিটা নদীতে হারালে দরিদ্র অনেক মানুষের পক্ষে জমি কিনে নতুন ঘর তৈরি করা সম্ভব হয় না। তারা প্রথমে আশপাশের শহরে আশ্রয় নেন, সবচেয়ে বড় অংশ ঢাকা ও চট্টগ্রামে আশ্রয় নেন। ঢাকার বস্তির ২৫ শতাংশ মানুষ বরিশাল বিভাগের, এরা মূলত নদীভাঙা মানুষ।

গত এপ্রিলে প্রকাশিত আরেক জরিপে বিবিএস জানিয়েছে, দেশের ৮১ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ নিজের বাড়িতে বসবাস করেন এবং অন্য কোথাও তাদের ঘরবাড়ি নেই। সিটি করপোরেশন এলাকায় এক-পঞ্চমাংশ বা ২০ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ নিজের বাড়িতে বসবাস করেন। এ ছাড়া ৪ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষের বসবাসের জন্য দেশের কোথাও নিজস্ব কোনো বাসগৃহ নেই। ‘মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক জরিপের ফলাফল থেকে এ তথ্য জানা গেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ২০২১ সালে এ জরিপ করেছে।

জরিপে দেখা গেছে, পল্লী অঞ্চলে ৯২ দশমিক ৮ শতাংশ এবং পৌরসভা ও অন্যান্য শহরাঞ্চলে ৬১ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ নিজস্ব বাসায় বসবাস করেন। বিভাগীয় পর্যায়ের হিসাবে দেখা যায়, রাজশাহী বিভাগের বেশির ভাগ খানার সদস্যরা নিজস্ব বসতঘরে বাস করেন, এ হার ৯২ দশমিক ৫ শতাংশ। এর পরের অবস্থানে রয়েছে রংপুর বিভাগ। সেখানে ৯১ দশমিক ৭ শতাংশ এবং খুলনা বিভাগের ৯০ দশমিক ৪ শতাংশ খানার সদস্যরা নিজস্ব বসতবাড়িতে বাস করেন।
৩ দশমিক ১ শতাংশ খানার সদস্যরা যারা নিজেদের বসতঘরে বাস করেন, তাদের অন্য জায়গায়ও বাড়ি আছে। প্রতি ১০টি খানার বিপরীতে অন্তত একটি খানার সদস্যরা যারা ভাড়া বাড়িতে থাকেন, তাদের অন্য কোথাও নিজস্ব বাড়ি রয়েছে। আর ভাড়া বাড়িতে অবস্থানকারী ৩ শতাংশ খানার সদস্যদের অন্য কোথাও নিজস্ব বাসগৃহ নেই। ৪ দশমিক ৫ শতাংশ খানার সদস্যদের বসবাসের জন্য দেশের কোথাও নিজস্ব কোনো বাসগৃহ নেই। তারা সাধারণত ভাড়া বাড়ি বা বিনা ভাড়ায় বাস করেন।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *