সন্ধ্যা মুখোপাধ্যাইয়ের বর্ণাঢ্য জীবন
বাংলা গান আর শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের এক সোনালি আকাশে সন্ধ্যা ঘনাল। নিভল আলো। চলে গেলেন গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ।
১৯৩১-এর আশ্বিন মাসে শিউলি ঝরা সময়ে জন্ম তাঁর। তাঁর বাবা নরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ও ছিলেন সু-গায়ক। দুর্দান্ত টপ্পা গাইতেন তাঁর মা হেমপ্রভা দেবী। মা-বাবার কাছেই ছোটবেলায় সুরের তালিম শুরু। গল্পদাদুর আসরে গান গেয়ে পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন পাঁচ টাকা।
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের প্রথম শিক্ষাগুরু ছিলেন যামিনী গঙ্গোপাধ্যায়। ছ’বছর তাঁর কাছে তালিম নিয়েছিলেন সন্ধ্যা । এরপর নিজের বড়দা রবীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের কাছে তিনি ইচ্ছেপ্রকাশ করেন, বড়ে গুলাম আলি খানের কাছে গান শিখতে চান। তাঁর আবদার রাখতে, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের বড়দা জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের কাছে যান। সেই সময় জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের বাড়িতে ছিলেন বড়ে গুলাম আলি খান। কিছুদিন বাদে বড়ে গুলাম আলি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে গানের তালিম দিতে সম্মতি জানান। সন্ধ্যার হাতে লাল সুতো বেঁধে মুখে তুলে দিয়েছিলেন গুড় আর ছোলা।
এর পর থেকে বড়ে গুলাম আলি খানকে বাবা বলেই সম্বোধন করতেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। বড়ে গুলাম আলি খানের একটি কথা সারাজীবনের জন্য দাগ কেটে গিয়েছিল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মনে, ‘কেউ যদি নিষ্ঠাভরে একটি রাগ সঠিক ভাবে গাইতে পারে, তাহলে তার সঙ্গীতশিক্ষা সার্থক।’ জৌনপুরী, মালকোশ, গাউতি, জয়জয়ন্তী, ইমন, বাগেশ্রী..আরও কত রাগের তালিম নিতে নিতেই বড়ে গুলাম আলি খানের গান তাঁর চেতনায় ঢুকে গিয়েছিল।
বেগম আখতার নিজের হাতে তানপুরা বাঁধতে শিখিয়েছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে । বেগম আখতারের গানের সঙ্গে তানপুরায় সঙ্গতও করেছেন তিনি। বাংলায় পুজোর গানকে এক অকল্পনীয় উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। আশ্বিনের ভোরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে মহিষাসুরমর্দিনী। আর তার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠ। এই অনুষ্ঠান যখন লাইভ হত, তখন অন্যান্য শিল্পীদের মতো প্রতিবছর ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিভিন্ন গান গাইতেন তিনি। গীতশ্রীর প্রয়াণের পর সেই সব স্মৃতি ভিড় করছে অনেকের মনে।
লতা মঙ্গেশকর এবং সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় আজীবন দু’জন দু’জনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। খ্যাতির শিখরে পৌঁছেও, সেই বন্ধুত্বে চিড় ধরেনি কোনদিন। মাত্র ন’দিনের ব্যবধানে অন্য সুরলোকে চলে গেলেন সেই দুই বন্ধু।