মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের বড় বাধা কোভিড-১৯?
আর মাত্র একদিন বাকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের। ট্রাম্প নাকি বাইডেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভোটাররা বেছে নেবেন কাকে? এ নিয়ে বিশ্লেষণ যেন থামছেই না। নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল হাতে আসা পর্যন্ত এর অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
এদিকে, নির্বাচনের আগে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বেশ বিপাকে পড়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুতে এখনও পর্যন্ত বিশ্বের শীর্ষ তালিকা ধরে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।
দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৯০ লাখের বেশি মানুষ সংক্রমিত হয়েছে। এছাড়া মারা গেছে দুই লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ। সেখানে মহামারির ভয়াবহ চিত্র বিন্দুমাত্র মলিন হয়নি। বরং নির্বাচনের ঠিক আগে সংক্রমণের সংখ্যা আগের চেয়ে বাড়ছে বলে জানা গেছে।
দু’সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দেশটিতে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ থেকে ৯০ লাখে পৌঁছেছে। রয়টার্সের হিসাব অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে একদিনে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্তের নতুন রেকর্ড হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। এদিন অন্তত ৯১ হাজার ২৪৮ জন নতুন করে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। বেড়েছে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যাও। অক্টোবরে দেশটির হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগী ভর্তির হার বেড়েছে ৫০ শতাংশেরও বেশি।
মার্কিন বিশ্লেষকদের মধ্যে একটি বিষয়ে বড় ধরনের কোনো দ্বিমত নেই। তারা সবাই মোটামুটি একমত যে, এবারের নির্বাচনের এক নম্বর ইস্যু হচ্ছে করোনাভাইরাস। তাদের অনেকেই বলছেন, এবার রেকর্ড সংখ্যক আগাম ভোটের অন্যতম কারণ হচ্ছে করোনাভাইরাস।
বিধি-নিষেধের কারণে আগামী মঙ্গলবার কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে না পারার উদ্বেগের কারণে অনেকেই আগাম ভোট দিয়েছেন। এছাড়া অনেক পর্যবেক্ষকের মতে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রশাসনের পদক্ষেপ নিয়ে নিজেদের মনোভাব ব্যালটের মাধ্যমে দেখাতে অনেকেই উন্মুখ হয়ে আছেন।
রেকর্ড ৯ কোটির বেশি ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন যা ২০১৬ সালের মোট ভোটার উপস্থিতির ৬০ শতাংশ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে গত সাত মাস ধরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই মহামারি সামাল দিতে যা করছেন বা বলেছেন ভোটের সিদ্ধান্তে তার কেমন প্রভাব পড়বে?
দু’দিন আগেও ওয়াশিংটনের ভোটারদের কাছ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। কৃষ্ণাঙ্গ এক তরুণী জানিয়েছেন, যেভাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরিস্থিতি সামলাচ্ছেন তা খুবই দুর্বল। অন্যদিকে মাঝ বয়সী শ্বেতাঙ্গ এক নারীর মতে, প্রেসিডেন্ট চাইছেন সবাই যেন আতঙ্কিত না হয়ে পড়েন। তার কাছে এ বিষয়টি ভালো লেগেছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
আরেক শ্বেতাঙ্গ তরুণী বলছেন, খুব ভালো কিছু তিনি করেননি। আবার যে খুব খারাপ কিছু করেছেন তাও না। ওয়াশিংটনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং বিশ্লেষক জো গার্সটেনসন বলছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করোনাভাইরাস মোকাবিলায় যা করছেন অধিকাংশ আমেরিকান তাতে খুশী নন।
বিবিসিকে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট যা করছেন তা হলো প্রতিদিনের পরিস্থিতি আঁচ করার চেষ্টা করে সে অনুযায়ী তিনি সাড়া দিচ্ছেন। সর্বশেষ জনমত জরিপও বলছে যে, প্রতি ১০ জন আমেরিকানের মধ্যে সাতজনই মনে করছেন কোভিড-১৯ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ’ভুল বার্তা’ দিচ্ছেন। তবে রিপাবলিকান সমর্থকদের সিংহভাগই এ ব্যাপারে প্রেসিডেন্টের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
অধ্যাপক গার্সটেনসন বলেন, শুধু যে দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে মতামতে ভিন্নতা রয়েছে তা নয়, এলাকা ভিত্তিতেও জনমত ভিন্ন। যে এলাকার মানুষ এই মহামারিতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা বেশ ক্ষিপ্ত।
বছরের শুরুর দিকে অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে জনমত জরিপে জো বাইডেন খুব সামান্য এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু গ্রীষ্মে ওই রাজ্যে কোভিড-১৯ ভয়ঙ্কর রূপ নেওয়ার পর বাইডেনের পক্ষে সমর্থন অনেক বেড়েছে। অ্যারিজোনায় এই মহামারিতে এখন পর্যন্ত মারা গেছে ৫ হাজার ৯২০ জন।
উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যে ২০১৬ সালের ভোটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামান্য ব্যবধানে জিতেছিলেন। এবারও বছরের অধিকাংশ সময় জুড়ে ট্রাম্পের সমর্থনে তেমন কোনো ভাটা দেখা যায়নি। কিন্তু অক্টোবর মাসে হঠাৎ সংক্রমণ হু হু করে বাড়তে থাকায় জনমত ঘুরে গেছে। সর্বশেষ জনমত জরিপে উইসকনসিনে জো বাইডেন ট্রাম্পের চেয়ে সাত থেকে ১৭ পয়েন্ট এগিয়ে গেছেন।
এছাড়াও যে রাজ্যটি ঐতিহাসিকভাবে রিপাবলিকানদের অন্যতম একটি ঘাঁটি সেই টেক্সাসেও ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পকে নিয়ে বিরূপ মনোভাবে স্পষ্ট হচ্ছে। কারণ, দুই দফা সংক্রমণে টেক্সাস বিপর্যস্ত। কোভিডে এই রাজ্যে এখন পর্যন্ত ১০ হাজার ৪৪০ জন মারা গেছে।
টেক্সাসের চিত্রশিল্পী শেন রেইলি তার রাজ্যে কোভিডে এত লোকের মৃত্যুতে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। বিবিসিকে তিনি বলেন, জীবনে প্রথমবারের মতো এবার তিনি দল বদলেছেন।
তিনি বলেন, আমি সবসময় রক্ষণশীলদের ভোট দিয়েছি। কিন্তু এই মহামারি মোকাবিলায় ক্ষমতাসীন রিপাবলিকানরা যা করছে তাতে জীবনে প্রথমবারের মতো আমি ডেমোক্র্যাট দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে ভোট দেব।
তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মানুষের এসব ক্ষোভের তেমন তোয়াক্কা করছেন না। দু’দিন আগে পেনসিলভানিয়ার নিউটন শহরে এক জনসভায় তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে বিদ্রুপ করে বলেন, জো বাইডেন কি বলছেন আমি গতকাল তা দেখলাম। তার মুখে সেই একই বুলি-কোভিড, কোভিড আর কোভিড। বলার মত তার কাছে আর কিছুই নেই।